পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

স্কুলে পড়াশুনার সঙ্গে চলছে রথ তৈরি, জীবনসংগ্রামে পরিবারের পাশে আন্দুলের শুভম - Ratha Yatra 2024

School Student making Rath: কথায় আছে, লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে ৷ এখানে ছবিটা একটু আলাদা ৷ লেখাপড়া করে যে রথও বানায় সে ৷ পরিবারের আর্থিক দুর্দশা কাটাতে রথ তৈরি করে চলেছে বছর 17-র শুভম ৷ নবম শ্রেণির পড়ুয়া সে ৷ বাবার কাছেই তার এই কাজে হাতেখড়ি ৷

Ratha Yatra
পড়াশোনার পাশাপাশি রথ তৈরি ছাত্রের (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 7, 2024, 1:17 PM IST

হাওড়া, 6 জুলাই: সকলের শৈশব থেকে কৈশোর একভাবে কাটে না । নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে হামেশাই লেগে থাকে আর্থিক ঝড়-ঝাপটা । আর সেটা সামলেই জীবনে টিকে থাকার লড়াই চলে সর্বক্ষণ । আর সেই লড়াইয়ের মধ্যে তৈরি হয় এক অদম্য ইচ্ছে ও জেদ ৷ যার উপর ভর করে ও অক্লান্ত পরিশ্রম করেই সমাজে নিজের ও পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের বন্দোবস্ত করতে করতেই কেটে যায় অনেক অজানা-অচেনা শৈশব ।

পড়াশুনার সঙ্গে চলছে রথ তৈরি (ইটিভি ভারত)

ঠিক এভাবেই শুভম চৌধুরীর শৈশবও ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে নড়বড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে । পরিবারের অর্থনৈতিক হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসাতে যোগ দিয়েছে হাওড়ার আন্দুলের চাঁদনী বাগান এলাকার বাসিন্দা বছর 17-র এই কিশোর । রথযাত্রার এক মাস আগে থেকে লেগে পড়ে সে কাঠের রথ তৈরিতে । সেই রথ বিক্রি করে পরিবারের পাশে আর্থিকভাবে দাঁড়াতে পারে শুভম ।

কিশোর থেকে যৌবনের দিকে পা দিতে চলা শুভম বর্তমানে নবম শ্রেণির ছাত্র । ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকেই তার রথ তৈরিতে হাতেখড়ি । এরপর বিগত তিন থেকে চার বছর ধরে সে একাই রথ বানাচ্ছে । রথের একমাস আগে থেকে রথ তৈরির জন্য প্রস্তুতি নেয় শুভম । রথ তৈরির কাঁচামাল কিনে রথ বানিয়ে নিজেই বিক্রি করে । তার থেকে যা আয় হয় বেশিরভাগটা সংসার চালানোর কাজে দিয়ে দেয় কিশোর । প্রত্যেক বছর 20টা করে রথ তৈরি করলেও, এবারে কয়েকটা বেশি বানাচ্ছে ৷ আর এসবই কিছু বাড়তি লাভের আশায় ।

রথ তৈরিরে ব্যস্ত শুভম (নিজস্ব ছবি)

শুভম বলে, "ছোট থেকে বাবার কাছে কাজ শিখেছি ৷ এখন নিজেই রথ বানাই ৷ প্রত্যেক বছর 20টা মতো রথ তৈরি করি ৷ এবারে একটু বেশিই বানিয়েছি ৷ একমাস আগে থেকে রথ বানানোর প্রস্তুতি চলে ৷ সব রথ বিক্রি হয়ে গেলে ভালো হবে ৷ রথ ছাড়াও আমি ঘুড়ি বানাই ৷ এখান থেকে যা উপার্জন হয় নিজে কিছুটা রাখি বাকি মা-বাবাকে সংসার খরচের জন্য দিয়ে দিই ৷"

রথ যদি বিক্রি না-হয় তাহলে মন খুব খারাপ হয়ে যায় শুভমের । কোনও বছর রথ বিক্রি না-হলে তার পরের বছরের অপেক্ষায় থাকতে হয় তাকে । তাই প্রতি বছরের মতই এই বছরেও একরাশ আশা নিয়ে পেরেকের মাথায় হাতুড়ি ঠুকে রথ তৈরিতে ব্যস্ত এই স্কুল পড়ুয়া । ছেলের এই জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন বাবা বাপন চৌধুরী । তিনি বলেন, "সারা বছর কাঠের কাজ করি । রথের সময় এলে আগে নিজে বানিয়ে বিক্রি করতাম । সেই কাজ ছেলে শিখে নিয়ে এখন সে নিজেই রথ বানায় । লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কাজ করে ছেলে । যদিও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য রথের দামটাও বাড়ছে ।"

যদিও রথ বানিয়ে নিজের ভাগ্যের চাকা কবে ঘুরবে তা জানে না শুভম । অগত্যা তার ভাগ্যের চাকা না-ঘুরলেও তার তৈরি রথের দড়িতে টান পড়লে তবেই চলবে সংসার । পুরীর মতোই এই বাংলাতেও রথ টানা হয় । এর মধ্যে হাওড়ার আন্দুল জমিদার বাড়ির রথ বিখ্যাত । আজও পুরানো নিয়ম ও নিষ্ঠার সঙ্গে এখানে রথযাত্রার অনুষ্ঠিত হয় । এই রথের দড়ি টানতে অনেক দুরদূরান্ত থেকে লোকেরা এখানে আসেন । আর এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিশাল মেলাও বসে । এবারও তার অন্যথা হবে না ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details