কলকাতা, 5 অগস্ট: রাজ্য ভাগের বিরোধিতায় আনা প্রস্তাবে বেনজির সৌজন্যের সাক্ষী রাজ্য বিধানসভা। এই প্রথম কোনও প্রস্তাবকে শাসক-বিরোধী এক যোগে সমর্থন জানাল। রাজ্যসঙ্গীত নিয়ে শাসকের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাত দীর্ঘদিনের ৷ সেই অবস্থান থেকে সরে এসে বিধানসভায় রাজ্যসঙ্গীতে উঠে দাঁড়িয়ে অংশগ্রহণ করলেন বিজেপি বিধায়করা। সোমবার বিধানসভায় রাজ্য ভাগ নিয়ে আলোচনাতেও অংশগ্রহণ করেছে বিজেপি ৷
শুভেন্দু অধিকারী (ইটিভি ভারত) এদিন বিধানসভায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "আপনাদের প্রস্তাব বাদ দিয়ে, এক লাইনের প্রস্তাব নিন। এই সদন অখণ্ড-অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আপনাদের সমর্থন করব।" এরপর যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে ওঠেন, তখন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "বিরোধী দলনেতা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেই অনুযায়ী প্রস্তাবটি ফের লিখুন। এক্ষেত্রে আরও কয়েকটি শব্দ যোগ করতে হবে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ৷ সকল ধর্ম, সকল জাতিকে একত্রিত করার বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি যেটা বলি, বা মাননীয় বিরোধী দলনেতা যেটা বলেছেন সেটা আমি অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলব। "
এরই সঙ্গে, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমার দুটো প্রস্তাব আছে। বিধানসভায় বিরোধিতা থাকবে কিন্তু নতুন যে প্রস্তাব লেখা হবে তাতে দুটো লাইন লেখা হোক, পশ্চিমবঙ্গ এক থাকবে, বাংলাকে আমরা ভাগ হতে দেব না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। এই কথাগুলি বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের আগে যোগ করা হোক।" এরপর বিধানসভার অধ্যক্ষ এবং বিরোধী দলনেতাও মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাব মেনে নেন। সেইমতো নতুন করে প্রস্তাব লেখা হয়। শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু'জনকে দেখিয়েই নির্দিষ্ট করা হয়। তা সর্বসম্মতভাবে বিধানসভায় পাশ হয়। এরপরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব ছিল, এই আলোচনার শেষে প্রথমে রাজ্যসঙ্গীত এবং পরে জাতীয় সংগীত গাওয়া হোক। সেখানেও আপত্তি করেনি বিরোধী দল ৷
বিধানসভায় প্রথমবার দাঁড়িয়ে যথাযথ মর্যাদা দিয়েই এদিন রাজ্য সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করে বিজেপি। এরপর যথারীতি হয় জাতীয় সঙ্গীতও। দিনের শেষে শাসকবিরোধী ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে নয়া এই প্রস্তাব বিধানসভায় গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক অতীতে বারবার যে কোনও প্রস্তাবের শাসক বিরোধীকে দুটি ভিন্ন প্রান্তে গিয়ে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। এই প্রস্তাব শাসক এবং বিরোধীকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দিল। এখানেই শেষ নয় দীর্ঘ দিনের রাজ্য সঙ্গীত নিয়ে বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও এই আবহে রাজ্যসঙ্গীতে অংশগ্রহণ করা বিজেপির অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।