মালদা, 14 নভেম্বর: প্রথমে এক ব্যবসায়ীর সরকারি লিজে নেওয়া মাছের ভেড়ি দখলের অভিযোগ ৷ এবার সরকার অনুমোদিত 51 বছরের পুরনো ক্লাব জবরদখলের অভিযোগ উঠল রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ৷ অভিযোগ, সম্প্রতি লোকজন নিয়ে গিয়ে ক্লাবের তালা ভাঙেন তিনি ৷
ঘটনাটি রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রামে রয়েছে কাটাহা দিয়ারা বাসন্তী সংঘ ৷ সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও রয়েছে এই ক্লাবের ৷ এমনকি যে জমিতে ক্লাবটি রয়েছে, সেটিও বাসন্তী সংঘের নামে নথিভুক্ত ৷ অভিযোগ, 6 মাস আগে রতুয়ার বিধায়ক 81 বছরের সমর মুখোপাধ্যায় প্রথমে সেই ক্লাবের সদস্যদের পদত্যাগ করতে বলেছিলেন ৷ সেই সময় ক্লাব কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেছিলেন ৷ ওই বৈঠকে 72 জন সদস্য সভাপতি এবং সম্পাদককে পুনর্বহাল করেছিলেন ৷
রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্লাব দখলের অভিযোগ ৷ (ইটিভি ভারত) অভিযোগ, গত 8 নভেম্বর বহিরাগতদের নিয়ে এসে ক্লাবের তালা ভেঙে তা দখল করেন বিধায়ক ৷ এ নিয়ে বিধায়ককে প্রশ্ন করা হলে তাঁর বক্তব্য, 'ওটা আমার বাড়ি, আমার ক্লাব ৷' এমনকি দলীয় নেতৃত্ব যে তাঁর কাজে খুশি নন, তাতেও 'ডোন্ট কেয়ার', এমনই আচরণ বিধায়কের ৷ কিন্তু, বিধায়কের এই কাজে অস্বস্তিতে পড়েছে মালদা জেলার নেতৃত্ব ৷
সরকার অনুমোদিত কাটাহা দিয়ারা বাসন্তী সংঘ ক্লাব ৷ (নিজস্ব চিত্র) সরকারি টাকায় তৈরি যাত্রী প্রতীক্ষালয় দখল করে তৃণমূলের কার্যালয় ! দিব্যি চলছে এসি-টিভি
ঘটনাটি নিয়ে বাসন্তী সংঘের সভাপতি দশরথ যাদব বলছেন, "8 নভেম্বর বেলা আড়াইটে নাগাদ লোকজন নিয়ে বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় আমাদের ক্লাব দখল করে নেন ৷ সেদিন আমি কিংবা ক্লাবের সম্পাদক কেউই ছিলাম না ৷ ছ’মাস আগে সমরবাবু আমাদের পদত্যাগ করতে বলেছিলেন ৷ তিনি নাকি এই ক্লাবকে লাইব্রেরি করবেন ৷ আমরা মিটিং ডাকি ৷ ক্লাবের 72 জন সদস্য আমাদেরই সভাপতি ও সম্পাদক পদে বহাল রাখেন ৷ 1973 সাল থেকে ক্লাব চলছে ৷ ক্লাব সরকার অনুমোদিত ৷ এটি দখল করে বিধায়ক বেআইনি কাজ করেছেন ৷"
বিধায়কের বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ কাটাহা দিয়ারা বাসন্তী সংঘের সদস্যদের ৷ (নিজস্ব চিত্র) তৃণমূল রতুয়া 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা মালদা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ফজলুল হক বলেন, "ঘটনাটি শুনেছি ৷ ওই ক্লাবটি বেশ পরিচিত ৷ একাধিক সামাজিক কাজকর্মে জড়িত ৷ সমরবাবু পাঁচবারের বিধায়ক ৷ বর্ষীয়ান নেতা তিনি ৷ তাঁর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলা শোভনীয় নয় ৷ তবু বলব, লোকজন নিয়ে ক্লাবের তালা ভেঙে তিনি ঠিক করেননি ৷ ক্লাবটি স্বশাসিত সংস্থা ৷ তাদের নিজস্ব নিয়মকানুন আছে ৷ নিজেদের জমিতেই ক্লাবঘর ৷ বিধায়ক নাকি ক্লাবের সভাপতি আর সম্পাদক পরিবর্তন করেছেন ৷ তিনি এসব করতে পারেন না ৷"
বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে করা ক্লাব কর্তৃপক্ষের অভিযোগপত্র ৷ (নিজস্ব চিত্র) বিধায়কের বিরুদ্ধে এরপর বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ৷ তিনি বলেন, "ওঁর একটা সমস্যা রয়েছে ৷ তিনি কানে দেখেন, শোনেন না ৷ সেই সুযোগ নিয়েই কেউ তাঁকে দিয়ে এসব করাচ্ছে ৷ এতে দলের ভাবমূর্তি অবশ্যই খারাপ হচ্ছে ৷ আমাদের নেত্রী ক্লাবগুলিকে উদ্বুদ্ধ করছেন ৷ কিন্তু, এমন ঘটনা ঘটলে ক্লাবগুলি নিজেদের কাজ করতে পারবে না ৷ আমরা বিষয়টি দলকেও দেখতে বলব ৷"