শান্তিপুর, 16 নভেম্বর: প্রায় সাড়ে 500 বছর আগে অদ্বৈত আচার্যের হাত ধরে প্রথম শুরু হয় শান্তিপুরের রাসযাত্রা। আজও একই নিয়ম মেনে পালিত হচ্ছে সেই রাস ৷
বৃন্দাবনে সে সময় প্রতিদিন রাসলীলা হচ্ছে। সেখানে শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। তখন মহাদেবের মনে প্রশ্ন জাগে রাসলীলা কীভাবে হয় ! সেখানে কেন পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ? এই প্রশ্ন থেকেই তিনি মহিলা রূপে রাসলীলায় প্রবেশ করেন। সেদিন শ্রীকৃষ্ণ বুঝতে পারেন রাসলীলার মধ্যে কোনও পুরুষ প্রবেশ করেছেন। তিনি কাউকে কিছু না বলেই রাসলীলা থেকে হঠাৎ বেরিয়ে যান।
শান্তিপুরের রাসযাত্রা (ইটিভি ভারত) যোগমায়া বুঝতে পারেন রাসলীলার ভেতর কোনও পুরুষ প্রবেশ করেছেন। তিনি জানতে পারেন, মহাদেব নিজে নারী রূপে রাসলীলায় এসেছেন। তখন তিনি মহাদেবকে রাসলীলা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন মহাদেব বলেন, এই রাসলীলা দেখার সৌভাগ্য না হলেও তিনি অন্য যুগে রাসলীলা দেখবেন এবং প্রসার ঘটাবেন। কথিত আছে শান্তিপুরের অদ্বৈত আচার্যকে মহাদেব এবং বিষ্ণুর অবতার বলা হত।
প্রায় 550 বছর আগে তিনি প্রথম নারায়ণ পুজো করে রাসযাত্রার আরম্ভ করেন। প্রথমে গোস্বামী বাড়িতেই শান্তিপুরে রাসযাত্রা চলত। এরপর হঠাৎ গোস্বামী বাড়ি থেকে রাধারমন জিউ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের বিগ্ৰহ চুরি হয়ে যায়। এরপর অদ্বৈত আচার্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামী বাংলাদেশের যশোর থেকে পুনরায় সেই মূর্তি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। গোস্বামী বাড়ির পরবর্তী বংশধররা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ একাই মন্দিরে আছেন তাঁকে যুগল রূপে পুজো করতে হবে। এরপরই রাধারানিকে স্থাপন করার উদ্দেশ্যে বৈষ্ণবদের মতামত নিয়ে একটি ভালো দিন দেখে রাধারানির বিগ্রহ স্থাপন করা হয়। আর সেই দিন থেকেই শুরু হয়ে আসছে শান্তিপুরের রাসযাত্রা। শান্তিপুরে তিন দিন রাস উৎসব পালন করা হয় ৷
আজও শান্তিপুরে সেই একই নিয়ম মেনে রাসযাত্রা হয়ে আসছে। এই রাসযাত্রা এখন শুধুমাত্র গোস্বামী বাড়িতে থেমে নেই। ছোট বড় অনেক বারোয়ারি বিভিন্ন মণ্ডপ সাজিয়ে রাসযাত্রা করছে। এবারও বিভিন্ন বারোয়ারি তাদের সেরা উপহার তুলে দিতে চাইছেন দর্শনার্থীদের মধ্যে।
তার মধ্যে অন্যতম শ্যামবাজার রাস উৎসব কমিটি । তারা এ বছর বিভিন্ন প্রকার লোহার সামগ্রী দ্বারা নির্মিত করেছে। থানার মাঠ রাস উৎসব কমিটির নিবেদনঅক্ষরধাম মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপ। শান্তিপুর লিডার্স ক্লাবের এবছর থিম 'এবার রাশি শান্তিপুর,আলোক মালায় ভরপুর'।
অন্যদিকে, লক্ষিতলা বারোয়ারি তাদের এ বছরের থিম বদ্রিনাথ ধাম আদলে তৈরি মণ্ডপ। এর পাশাপাশি একাধিক উল্লেখযোগ্য বারোয়ারি রয়েছে যারা বিভিন্ন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে এবং আলোক শয্যায় ফুটিয়ে তুলেছে গোটা শান্তিপুরকে। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে শান্তিপুরের রাস যাত্রা। রবিবার ভাঙা রাসের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই রাসযাত্রা।