তাজপুর, 3 অগস্ট: বন দফতরের জমিতে রাতের অন্ধকারে বেআইনিভাবে দোকান তৈরির অভিযোগ ৷ আর সেই দোকান বন দফতর ভেঙে দিতেই, মহিলা আধিকারিককে গালাগালি ও লাঠিপেটা করার হুমকির অভিযোগ উঠল কারা দফতরের মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর সৈকতের ধারে ৷
অভিযোগ দিনের পর দিন বন দফতরের জায়গা দখল করে দোকানঘর গজিয়ে উঠছিল ৷ সেই হকারদের উচ্ছেদ করতে গেলে বন দফতরের আধিকারিক এবং কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়ান অখিল গিরি ৷ বন দফতরের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, রামনগরের বিধায়ক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গতকাল রাতের অন্ধকারে এই অবৈধ দোকানগুলি তৈরি করিয়েছেন ৷ খবর পেয়ে আজ সকালে বন দফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানগুলি ভাঙতে শুরু করে ৷ এনিয়ে স্থানীয়রা বন দফতরের কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়ায় ৷
বেআইনি দোকানগুলির ভাঙার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এক মহিলা ফরেস্ট অফিসার ৷ তাঁর নেতৃত্বেই দোকানগুলি ভাঙা হচ্ছিল ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান রামনগরের বিধায়ক তথা কারামন্ত্রী অখিল গিরি ৷ অভিযোগ তিনি সেখানে গিয়ে ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করেন ৷ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বন দফতরের ভিডিয়োতে দেখা যায়, আঙুল উঁচিয়ে মহিলা ফরেস্ট অফিসারকে হুমকি দিচ্ছেন মন্ত্রী ৷ তাঁকে নিজের 'চাকর' বলে মন্তব্য করেন তিনি ৷ এমনকী ওই মহিলা সরকারি আধিকারিককে গালাগালি পর্যন্ত করেন মন্ত্রী ৷ বন দফতরের আধিকারিককে লাঠিপেটা করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ৷
অভিযোগ কারামন্ত্রী ফরেস্ট অফিসারকে হুমকি দেন, "আপনি বেশিদিন আর নেই ৷ এরা (হকার) সবসময় থাকবে ৷ আগামী সপ্তাহের মধ্যে আপনি আর থাকবেন না... আপনি আমাদের কর্মচারী ৷ মাথা নিচু করে কথা বলুন ৷ মাথা নিচু করুন ৷ বেয়াদপ রেঞ্জার কখনও আসেনি ৷ এরা ভদ্র ভাষা বোঝে না ৷ যে ঠাকুর, যে ফুলে সন্তুষ্ট ৷ এমন ডাং দিয়ে পেটাব না ৷"
অখিল গিরির পরে সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাবি করেন, "সমুদ্রে এখন ভাঙন চলছে ৷ তাই দোকানদাররা একটু পিছিয়ে বন দফতরের জায়গায় দোকান করেছে ৷ সমুদ্রে ভাঙনে এখন মোটামুটি মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে ৷ নির্মাণ হয়ে যাওয়ার পরে আবার তারা বাঁধের উপর চলে আসবে ৷ আমরা চাই না সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ুক ৷ কিন্তু, বন দফতর চাইছে না ৷ তাই রাতের অন্ধকারে তাদের দোকান ভেঙে দিয়েছে ৷ এইরকম যদি করতে থাকে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব ৷"
তবে, কি মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ জানালেন তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ? মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য জুড়ে অবৈধ হকার উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন ৷ তেমনি সরকারি জায়গা জবর দখল করে তৈরি দোকান ভাঙতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে মহিলা ফরেস্ট অফিসারকে ৷
এই ইস্যুতে বিরোধী, এমনকি তৃণমূল নেতৃত্বের সমালোচনার মুখে পড়েছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী ৷ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "পূর্ব মেদিনীপুরের পার্টি লাইনেই কথা বলেছেন অখিল গিরি ৷ এটাই তৃণমূলী সংস্কার ৷ যেভাবে রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের দেখে, সেভাবেই মন্ত্রী অখিল গিরি কথা বলেছেন সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে ৷"
অখিল গিরিকে 'পাগল' ও 'অসভ্য' বলে মন্তব্য করেছেন রাহুল সিনহা ৷ তিনি বলেন, "অখিল গিরির মহিলা, পুরুষ, বয়স্ক কোনও জ্ঞান নেই ৷ এমনকি রাষ্ট্রপতি সম্পর্কেও অশালীন ভাষায় কথা বলেছিলেন ৷ এই অখিল গিরিকে দেখলে বোঝা যায় দেশের মধ্যে নারী নির্যাতনে এই রাজ্যে কেন এক নম্বরে ৷ যারা বেআইনিভাবে জমি দখল করে রেখেছে, তাদের হয়ে ওকালতি করতে গিয়েছিলেন ৷ একজন মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ৷ তাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত মহিলা-সম্মান রক্ষার্থে অখিল গিরিকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ৷"
কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক একটা ঘটনা ৷ এর জন্য রাজনীতি দায়ি মানুষ দায়ি নয় ৷ মানুষকে এভাবে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এরাজ্যে তৃণমূল সরকার গুন্ডাদের এতটাই ক্ষমতা দিয়েছে, যে তারা আর এখন পুলিশ প্রশাসনে মানছে না ৷ রাজনীতি এখন গুন্ডা, মস্তান, ক্রিমিনাল ও মাফিয়াদের হাতে রয়েছে ৷ এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সরকার কীভাবে চলছে !" সিপিআইএম নেতা রবিন দেব বলেন, "রাজ্যে এখন এটাই একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন গুন্ডা নিয়ন্ত্রণ করার কথা ৷ কিন্তু, কোথায় কী হচ্ছে ?"
পুরো বিষয়টি নিয়ে অখিল গিরির আচরণের সমালোচনা করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ৷ সোশাল মিডিয়ায় কুণাল লেখেন, "মন্ত্রী অখিল গিরির কথা এবং আচরণের বিরোধিতা করছি ৷ এটা অবাঞ্ছিত ৷ বন দফতর নিয়ে কিছু বলার থাকলে, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে বলতে পারতেন ৷ তার বদলে মহিলা অফিসারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার দুর্ভাগ্যজনক ৷ তবে, সিপিএম, বিজেপির এনিয়ে বলার অধিকার নেই ৷ ওরা এর থেকেও অনেক কুৎসিত কাজ বারবার করেছে ৷"
আর যাঁর দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, সেই বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, "একজন মহিলার সঙ্গে যেভাবে কথা বলছেন উনি, সেটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না ৷ কোন দুর্নীতির বিষয় থাকলে, আমার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন ৷ কিন্তু, একজন মহিলাকে এইভাবে কথা বলা যায় না ৷ তাও আবার তিনি যখন সরকারি কর্মচারী ৷ সূত্রের খবর, পুরো ঘটনায় ডিএফও-র কাছে রিপোর্ট চেয়েছে বনদফতর ৷ এই ঘটনার ভিডিয়ো চেয়ে পাঠানো হয়েছে ৷ সেটি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে সূত্রের খবর ৷