কলকাতা, 7 অক্টোবর: কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়কে জেএনএম হাসপাতালের মর্গে ঢুকতে বাধা পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ জয়নগরের নাবালিকার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার সকালে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং কল্যাণী এইমস হাসপাতালের চিকিৎসকরা পৌঁছন জেএনএম হাসপাতালের মর্গে । সেখানে কিছুক্ষণ পরই কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হয় নাবালিকার দেহ । এরপর কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এলে তাঁকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অম্বিকা রায় বলেন, "আমি কেবল নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি ।" তবে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি ৷ অম্বিকা রায় দাবি করেন, "রাজ্যে শাসন নেই, এই ঘটনায় সমস্ত তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে । এই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কখনও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না ৷ রাজ্যের প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খারাপের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে । আরজি কর-কাণ্ডের পরেই শিক্ষা নিয়ে এইএমসের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে জেএনএম হাসপাতালে ।"
কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের মর্গে ঢুকতে বাধা বিজেপি বিধায়ককে (ইটিভি ভারত) কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশমতো সোমবার হবে জয়নগরের নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্ত । আজ সকালে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিয়ে জয়নগরের ছাত্রীর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে । শনিবার রাত থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীর দেহ সংরক্ষণ করে রাখা ছিল কলকাতার কাঁটাপুকুর মর্গে । সেখান থেকেই আজ সকালে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণীর উদ্দেশে ।
রবিবারই নির্যাতিতার দেহ কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । কল্যাণী এইমসের বিশেষজ্ঞরা ময়নাতদন্ত করবেন বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ দেহ নিয়ে সোমবার বেলা 11টা 45 মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছনোর কথা বলা হয় আদালতের তরফে । সেই অনুযায়ী, সকালে কাঁটাপুকুর মর্গ থেকে জয়নগরের নিহত নাবালিকার দেহ বের করা হয় ।
কাঁটাপুকুর মর্গে পুলিশের তরফে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় এ দিন । গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে রাখা হয় আশেপাশের রাস্তা । কাউকে সামনে যেতে দেওয়া হয়নি । অন্যদিকে, দেহ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয় । শববাহী গাড়ির সামনে এবং পিছনে একাধিক পুলিশের গাড়ি ছিল ।
আরজি করের পর জয়নগর, নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আরও একবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ প্রশাসন । ধর্ষণের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন পকসো আইনে মামলা হয়নি, শুনানিতে রবিবার সেই প্রশ্নই তোলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ । যা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যায় পুলিশ প্রশাসন । সেই বিষয়ে দীর্ঘ সওয়াল জবাব শেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়নগরকাণ্ডে পুলিশকে পকসো আইন যুক্ত করার নির্দেশ দেন ।
শুধু তাই নয়, কল্যাণী এসিজেএমের উপস্থিতিতে নাবালিকার দেহ ময়নাতদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয় আদালতের তরফে । আর সেই প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে । তবে পুলিশের তদন্তে তাঁদের কোনও আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন নিহত নাবালিকার বাবা । এছাড়াও এই ঘটনায় তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগও করা হয়েছে নির্য়াতিতার পরিবারের তরফে । তাদের আরও অভিযোগ, আরজি কর-কাণ্ডের মতোই ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করেছে পুলিশ ৷
যদিও নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি ৷ তিনি দাবি করেন, "জগনগরের ঘটনায় কোনও তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হয়নি ৷ নির্যাতিতার পরিবারকে সমস্তরকমভাবে সাহায্য করা হচ্ছে পুলিশের তরফে ৷ ময়নাতদন্ত যাতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে হয় এবং কেন্দ্রীয় হাসপাতালে হয় সেই আবেদন পুলিশের পক্ষ থেকেই করা হয় । পুলিশের তরফে নির্যাতিতার পরিবারকে টাকা অফার করা হয়নি ৷ পুলিশের নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে ৷ এর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ পুলিশের লুকানোর মতো কিছু নেই ৷ ফাস্ট ট্রাক কোর্টে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা হবে ৷"