মালদা, 17 ডিসেম্বর: প্রশাসনের কাছে তাঁরা ‘জল চোর’ ৷ অভিযোগ, সরকারি পাইপ লাইন ফুটো করে নিজেদের বাড়িতে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের সংযোগ করেছেন তাঁরা ৷ ইংরেজবাজারের সাট্টারি, নয়াটোলা-সহ আশেপাশের গ্রামের এমন 50 জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 326/এ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে মামলার নোটিশ গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছেও দেওয়া হয়েছে ৷
এই ধারায় অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে ৷ তাই নোটিশ পেয়েই ভয়ে কাঁটা সবাই ৷ তাঁদের দাবি, তাঁরা জল জীবন মিশনে নিজেদের সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়েই পানীয় জলের সংযোগ পেয়েছেন ৷ তাঁরা কেউ জল চুরি করেননি ৷
50 গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে জল চুরির মামলা মালদা পুলিশের (নিজস্ব ছবি) সাট্টারি গ্রামের নতুন পাড়ার বাসিন্দা আমিন মোমিন বলছেন, “দু’বছর আগে প্রশাসনের তরফে আমাদের কাছে আধার কার্ডের জেরক্স আর মোবাইল নম্বর নেওয়া হয় ৷ বলা হয়েছিল, জল জীবন মিশনে আমাদের বাড়িতে প্লাস্টিকের পাইপে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হবে ৷ সেই পাইপ লাইনের সংযোগ দেওয়া হলেও আমরা ঠিকমতো জল পাচ্ছি না ৷ অথচ এর জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে ৷ আমরা নাকি জল চুরি করেছি ৷’’
50 গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে জল চুরির মামলা মালদা পুলিশের (নিজস্ব ছবি) তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকার কালো পাইপ লাইনের সংযোগ আমাদের বাড়িতে দিয়েছিল, এখন তারাই বলছে আমরা নাকি জল চোর ৷ শুধুমাত্র আমার পাড়ায় 40-50 জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৷ আতঙ্কে আমাদের ঘুম আসছে না ৷ আমরা সবাই গরিব মানুষ ৷ সবাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাচ্ছে ৷ আজ পর্যন্ত আমাদের নাম পুলিশের খাতায় ওঠেনি ৷ এই প্রথম উঠল ৷”
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মোজাম্মেল মিয়াঁর কথায়, “সরকারি প্রকল্পে বিনাপয়সায় জল পাওয়া যায় ৷ জল জীবন মিশনও সরকারি প্রকল্প ৷ আমাদের কাছ থেকে নথিপত্র নিয়ে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে ৷ এখন আমাদের বিরুদ্ধে 326/এ ধারায় চুরির মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ এসব কোন ধরনের রসিকতা জানি না ৷”
50 গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে জল চুরির মামলা মালদা পুলিশের (নিজস্ব ছবি) এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ঔরঙ্গজেব হোসেন বলেন, “কয়েকদিন আগে আমাদের পাড়ার কিছু মানুষের নামে পুলিশ নোটিশ আসে ৷ আমি দেখি, গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে জল চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ আমি জিজ্ঞেস করলে সবাই জানায়, তারা কেউ চুরি করে জল নেয়নি ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘জল জীবন মিশনে সরকারের তরফেই গ্রামবাসীদের বাড়িতে কালো প্লাস্টিক পাইপে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে আধার কার্ডের জেরক্স আর মোবাইল ফোন নম্বর নেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু সরকারের তরফে কোনও কাগজপত্র দেওয়া হয়নি ৷ এখন 40-50 জনের বিরুদ্ধে জল চুরির মামলা রুজু হয়েছে ৷’’
ঔরঙ্গজেব হোসেন আরও বলেন, ‘‘এনিয়ে পিএইচই-এর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে থানায় আমাদের আলোচনা হয় ৷ তিনি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে তাঁদের কোনও ভুল হয়ে থাকলে তাঁরা মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন ৷ কিন্তু কেউ সত্যিই জল চুরি করে থাকলে তাঁরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন ৷ গ্রামের কেউ চুরি করে জল নিয়েছে, এমন ঘটনা আমার নজরে আসেনি ৷”
পিএইচই (আর্সেনিক)-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রমিতকুমার দত্তের বক্তব্য, “আমাদের সাপোর্ট এজেন্সি গ্রামে গ্রামে গিয়ে জল চুরির ঘটনার তদন্ত করেছে ৷ তাদের জমা করা রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করবে ৷ যদি অবৈধ সংযোগের প্রমাণ মেলে, তবে সেই সংযোগ কেটে দেওয়া হবে বা উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে ৷ কেউ যদি পাইপ লাইন ফুটো করে জলের সংযোগ না নিয়ে থাকেন, তবে তাঁর কোনও ভয় নেই ৷”
50 গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে জল চুরির মামলা মালদা পুলিশের (নিজস্ব ছবি) কেন্দ্রের জল জীবন মিশনে 2024 সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চালাচ্ছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ৷ ইতিমধ্যে মালদা জেলার 80 শতাংশের বেশি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ করা হয়েছে বলে দফতর সূত্রে খবর ৷ কিন্তু তবু বেশ কিছু মানুষ পিএইচই-এর পাইপ লাইন ফুটো করে নিজেদের বাড়িতে পানীয় জলের অবৈধ সংযোগ করেছেন৷ মালদা জেলার বিভিন্ন জায়গায় তা নজরেও আসছে ৷
এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পিএইচই দফতরকে তিনি পদক্ষেপ করার নির্দেশও দেন ৷ তাঁর নির্দেশ পেতেই গ্রামে গ্রামে তদন্ত শুরু করেছে পিএইচই দফতরের ইমপ্লিমেন্ট সাপোর্ট এক্সপার্ট এজেন্সির লোকজন ৷ শুধুমাত্র সাট্টারি এলাকাতেই 50 জনের বিরুদ্ধে অবৈধ পানীয় জল সংযোগ করার মামলা রুজু হয়েছে ৷ গোটা জেলায় এই সংখ্যাটি 300 ছাড়িয়েছে বলে দফতরের তরফে জানা গিয়েছে ৷