পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

শিশুর জন্মদিনেই তার হত্যাকারী পেল ফাঁসির সাজা, গুড়়াপ ধর্ষণ-খুনের 54 দিনের মাথায় শাস্তি - GURAP CHILD RAPE AND MURDER

গুড়়াপে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় 54 দিনের মাথায় শাস্তি ঘোষণা করল চুঁচুড়ার পকসো আদালত । দোষী সাব্যস্ত প্রতিবেশীকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে ৷

ETV BHARAT
শিশুর জন্মদিনেই তার হত্যাকারীকে ফাঁসির সাজা (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 17, 2025, 5:52 PM IST

চুঁচুড়া, 17 জানুয়ারি:গুড়াপে নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে প্রতিবেশীকে মৃত্যুদণ্ড দিল চুঁচুড়ার পকসো আদালত । বুধবার বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী অভিযুক্ত অশোক সিং-কে দোষী সাব্যস্ত করেন । আজ পকসোর 6 ধারা এবং বিএনএস-এর 65/2, 66, 103(1) ধারায় ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন বিচারক । হুগলি গ্রামীণ পুলিশের তৎপরতায় 54 দিনের মাথায় সর্বোচ্চ সাজা পেল অপরাধী । পাশাপাশি শিশুর পরিবারকে স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটির পক্ষ থেকে 10 লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে আদালত ৷ উল্লেখ্য, আজই সেই শিশুর জন্মদিন ৷

2024 সালের 24 নভেম্বর হুগলির গুড়াপ থানা এলাকার ঘটনা ৷ পাঁচ বছরের শিশুটি মাংস খেতে চেয়েছিল বলে তার বাবা বাজার থেকে মাংস কিনতে গিয়েছিলেন । ঠিক সেই সময় শিশুটিকে চকোলেট খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় প্রতিবেশী প্রৌঢ় অশোক সিং । এদিকে, মাংস কিনে শিশুটির বাবা বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন । বেশ কিছুক্ষণ পরেও মেয়েকে খুঁজে নাও পেয়ে তিনি প্রতিবেশীদেরও জানান ৷

এরপর সবাই মিলে খুঁজতে খুঁজতে অভিযুক্তের বাড়িতে ঢুকে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানে পড়ে থাকতে দেখেন ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধনিয়াখালি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায় । অভিযুক্তকে মারধর করেন প্রতিবেশীরা ৷ সেই রাতেই পুলিশ অভিযুক্তকে উদ্ধার করে গ্রেফতার করে । আহত থাকায় তাকে চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।

পরদিন শিশুটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয় । এলাকায় উত্তেজনা থাকায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসে । ফরেনসিক দল এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় । জানা যায়, শিশুটির উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর তাকে খুন করা হয়েছে ৷ দ্রুত এবং সঠিক তদন্ত করার জন্য পাঁচ সদস্যের সিট গঠন করতে নির্দেশ দেন হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন । সিটের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) প্রিয়ব্রত বকসি । সেই ঘটনার 52তম দিনে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে 54 দিনের মাথায় ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল আদালত ৷

মামলার সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "দিন রাত এক করে দ্রুত তদন্ত করেছে পুলিশ । আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এই মামলা কতটা কঠিন ছিল । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে এফএসএল-এর সাক্ষী খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল । যে সোয়াব নেওয়া হয়েছিল সেখানে ক্রোমোজম পাওয়া যায় অভিযুক্তের । এটা এই মামলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল । যে ভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল শিশুকে, তার তথ্যপ্রমাণ যা দাখিল করা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য ছিল । মেয়েটার জন্ম হয়েছিল 17 জানুয়ারি, 2019 সালে । বেঁচে থাকলে আজ তার ছয় বছরের জন্মদিন পালন হত । তাই এক দিকে খারাপ লাগা এবং ভালো লাগা দুটোই আছে । মামলা আদালতে আসার পর মোটে 33 দিন সময় পেয়েছিলাম ।"

হুগলি গ্রামীণ পুলিশের সদর সিঙ্গুরের কামারকুণ্ডুতে সাংবাদিক বৈঠক করেন পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন । তিনি বলেন, "শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জিং ছিল মামলাটা । ঘটনার পরদিন সিট গঠন করা হয় । খুব দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত হয়েছে । প্রসিকিউশন যে ভাবে কাজ করেছে, তার ফলে খুব দ্রুত এই মামলার বিচার দেওয়া সম্ভব হয়েছে ।" শিশুর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, "শিশুকে ফিরিয়ে দিতে পারব না কিন্তু সঠিক বিচারে তার পরিবার মানসিক শান্তি পাবে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details