কলকাতা, 23 ফেব্রুয়ারি: চিড়িয়াখানার দেড়শো বছরে নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভিনদেশ থেকে নতুন পশুপাখি আনা থেকে শুরু করে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে। সেই তালিকায় দর্শকদের সুবিধার্থে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হল। বিশেষ করে মহিলা দর্শকদের জন্য, যা অভিনবই বলা চলে।
গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চিড়িয়াখানার ভিতরের 4টি শৌচালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। এই মেশিন থেকে 5 টাকা বিনিময়ে ন্যাপকিন পাচ্ছেন আগত দর্শকরা। বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা আলিপুর চিড়িয়াখানায় প্রাথমিকভাবে ভেন্ডিং মেশিন বসানো হলেও আগামীতে তার সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও আপ্লুত ৷

1876 সালে আলিপুর চিড়িয়াখানা যাত্রা শুরু হয়। দশক শতাব্দী পেরিয়ে নানারকম নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে চিড়িয়াখানায়, যা দেখতে কলকাতা তো বটেই দূর-দূরান্তের জেলা থেকে বহু মহিলা দর্শকরা আসেন। তাদের অনেকেই আবার ঋতুস্রাব চলাকালীন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আসেন। কেউবা হঠাৎ মাসিক প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হন। সেই অস্বস্তি কাটাতে তাৎক্ষণিক স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাডের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু চিড়িয়াখানা সংলগ্ন দেড় কিলোমিটারে মধ্যে তার সহজলভ্য ছিল না। বলা চলে পাওয়া যেত না। ফলে এই সমস্যা বহুবার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে শুনতে হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিড়িয়াখানা এক আধিকারিক জানান, মরশুমে চিড়িয়াখানায় আগত বেশ কয়েকজন মহিলা স্যানিটারি ন্যাপকিনের চাহিদার কথা জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে তা না-থাকায় সেই পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হন। অন্য এক আধিকারিক বলেন, "আগে চিড়িয়াখানার বাইরের ছোট ফুটপাতের দোকানগুলোতে এই ন্যাপকিন পাওয়া যেত। কিন্তু, সেই দোকানগুলো এখন না-থাকায় তা পেতে সমস্যায় পড়তে হয় দর্শকদের। এরপরই এই বিষয়টা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, চিড়িয়াখানার আগত দর্শকদের সুবিধার্থে এই ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করতে হবে।"

সূত্রের খবর, এক বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় চিড়িয়াখানার ভিতরের চারটি শৌচালয়ে 4টি মেশিন বসানো হয়েছে। আগামী দিনে চিড়িয়াখানার কর্মরত মহিলা কর্মীদের জন্য এই ভেন্ডিং বসানো হবে। শুধু তাই নয়, 5 টাকায় ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে অনেক কাটখড় পড়াতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। তবে, ন্যাপকিনের গুণগত মান বজায় রেখে শেষ পর্যন্ত 5 টাকায় এই ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করা গিয়েছে।
চিড়িয়াখানার এক আধিকারিকের কথায়, "সরকার 5 টাকায় ডিম-ভাতের ব্যবস্থা করতে পারলে ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করতে পারবে না কেন? আমরা ন্যাপকিনের গুণগত মানে কোনও রকমভাবে কম্প্রোমাইজ করেনি। দর্শকদের পরিষেবা দেওয়াই আমাদের অন্যতম দায়-দায়িত্ব।"

দর্শকরা যাতে কোনওরকমভাবে সমস্যায় না-পড়েন তার জন্য যাবতীয় পরিষেবার বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে বলে চিড়িয়াখানার সহযোগী ডিরেক্টর সৌমেন মণ্ডল জানিয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। এমনকী বনমন্ত্রীও মহিলা। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ইটিভি ভারতকে বলেন, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে দৃষ্টিভঙ্গি তাতে রাজ্যের মানুষকে সমস্ত রকম পরিষেবা দিতে আমরা এগোতে চাইছি দফতরের তরফে।"
তিনি আরও বলেন, "আলিপুর চিড়িয়াখানা এমন একটা জায়গা যেখানে কলকাতা তো বটেই দূর-দূরান্তের জেলার মানুষ শহরে আসলে জু'তে আগে আসেন। ফলে তাঁদের পরিষেবা দেওয়াটা আমাদের কর্তব্য। আমি নিজে মহিলা হিসেবে বহুবার এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। মহিলাদের এই সুবিধা, অসুবিধা বুঝি। ফলে দর্শকদের সমস্ত ধরনের সমস্যা সমাধান করাই আমাদের লক্ষ্য। ধাপে ধাপে শেষ কাজগুলি করা হচ্ছে। আগামীতেও করা হবে।"
চিড়িয়াখানা সূত্রের দাবি, মরশুমে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে আলিপুর চিড়িয়াখানায়। যার অধিকাংশটাই মহিলা এবং শিশুরা। সেই মহিলাদের সুবিধার্থে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, 2023 সালের ডিসেম্বর মাসে চিড়িয়াখানায় 8 লক্ষের বেশি মানুষ আসেন। মহিলা পুরুষ এবং শিশু সংখ্যা মিলিয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় 8 লক্ষ 12 হাজার 236 জন। 2024 সালের ডিসেম্বর মাসে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে 10 লাখ 33 হাজার 800 জন দশক রয়েছেন। অর্থাৎ, 2024 সালে 2 লক্ষ 20 হাজার বেশি দর্শক এসেছেন আলিপুর চিড়িয়াখানায় ।