পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মহাকুম্ভের বিপর্যয়ে মৃত বাংলার 2 পুণ্যার্থী, নিখোঁজ আরও 2; পরিবারের সঙ্গে কথা মমতার - MAHAKUMBH STAMPEDE 2025

মহাকুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনায় প্রাণ গেল কলকাতা ও শালবনির দুই বৃদ্ধার ৷ খোঁজ মিলছে না আরও 2 জনের ৷

ETV BHARAT
মহাকুম্ভের বিপর্যয়ে মৃত বাংলার 2 পুণ্যার্থী (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 30, 2025, 3:31 PM IST

শালবনি/কলকাতা, 30 জানুয়ারি:মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভের ত্রিবেণী সঙ্গমে অমৃতস্নান করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে বহু পুণ্যার্থীর ৷ বাংলা থেকে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু'জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে । বড়দিদি পুষ্পা সাহার সঙ্গে কুম্ভে পুণ্য সঞ্চয় করতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে কলকাতার রিজেন্ট পার্কের বাসিন্দা বাসন্তী পোদ্দারের (63)। মৃত্যু হয়েছে শালবনির বাসিন্দা 78 বছরের ঊর্মিলা ভুঁইয়ার ।

মৃত কলকাতার বাসন্তী পোদ্দার

বাসন্তী পোদ্দারের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, 72 এ অশ্বিনী নগরের বাড়ি থেকে পুণ্যস্নানের জন্য মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন তিনি । দিদি ও তাঁর দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গে প্রায়াগরাজে গিয়েছিলেন বাসন্তী পোদ্দার । তাঁর সঙ্গে তাঁর দুই ছেলেমেয়েও ছিল । বুধবার ত্রিবেণী সঙ্গমের ঘটনায় আচমকা হুড়োহুড়িতে তিনি ভিড়ের মধ্যে মাটিতে পড়ে যান । তারপরে আর উঠতে পারেননি । পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁরা ৷ এই খবর আসার পর থেকেই ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবার । প্রয়াগরাজে থাকা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে । দ্রুত বৃদ্ধার দেহ ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷

মহাকুম্ভের বিপর্যয়ে মৃত বাংলার 2 পুণ্যার্থী, নিখোঁজ আরও 2 (নিজস্ব ভিডিয়ো)

অশ্বিনী নগরের বাসিন্দার মৃত্যু প্রসঙ্গে নগরপাল মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, "পুলিশের একটি টিম ইতিমধ্যে ওই প্রৌঢ়ার বাড়িতে গিয়েছে এবং পরিজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে । এক্ষেত্রে যা করণীয় তা করা হবে ।"

মৃত শালবনির ঊর্মিলা ভুঁইয়া

একইভাবে মৌনী অমাবস্যায় পুণ্যস্নান করতে পরিবারের সঙ্গে প্রয়াগরাজে গিয়েছিলেন শালবনির বাসিন্দা ঊর্মিলা ভুঁইয়া । ঘটনার দিন হুড়োহুড়িতে পরিবারের সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন ৷ এর পর থেকে 78-এর বৃদ্ধার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না । পরবর্তীতে তাঁদেরই এক আত্মীয় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতালে গিয়ে উর্মিলা ভুঁইয়ার মৃতদেহ শনাক্ত করেন । তাঁর দেহ খড়গপুরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে । তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে নবান্নের আধিকারিকদের কথা হয়েছে । রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেহ সরাসরি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে ।

মৃত শালবনির ঊর্মিলা ভুঁইয়া (নিজস্ব চিত্র)

গত সোমবার বিকেলে খড়গপুর স্টেশন থেকে প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা দেন ওই বৃদ্ধা ৷ সঙ্গে ছিলেন খড়গপুরের কৌশল্যার বাসিন্দা জামাই কমল মাইতি । ছিলেন কমলের স্ত্রী ও মা-সহ মোট সাত জন । মঙ্গলবারই প্রয়াগরাজে পৌঁছে যান তাঁরা । বুধবার ভোরের ঘটনায় ভিড়ের মাঝে পড়ে যান বৃদ্ধা । আর তার জেরেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর ।

শোকের ছায়া ঊর্মিলা ভুঁইয়ার পরিবারে (নিজস্ব চিত্র)

পরিবারের সদস্য অভিজিৎ মাইতি বলেন, "মা-বাবা, মেসো, মাসি, দিদা, ঠাকুমা, মামিমা এবং আমার এক বোন সোমবার বিকেলে খড়গপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে করে প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন । মঙ্গলবার ওঁরা প্রয়াগরাজ স্টেশন থেকে নেমে, হেঁটে পৌঁছে গিয়েছিলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রমে । রাতে সেখানেই ছিলেন । এরপর ভোরে পুণ্যস্নানে বেরিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে । এই দুর্ঘটনার খবর বুধবার দুপুরে আমরা ফোনে জানতে পারি । যদিও পরে প্রয়াগরাজের মতিলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজের মর্গে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেছেন পরিবারের বাকি সদস্যরা ।"

মৃত্যু হয়েছে শালবনির বাসিন্দা 78 বছরের ঊর্মিলা ভুঁইয়ার (নিজস্ব চিত্র)

নিখোঁজ কাঁথির প্রণবকুমার জানা

এছাড়াও মহাকুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ বাংলা থেকে সেখানে যাওয়া আর এক পুণ্যার্থী ৷ কাঁথির জুনপুটের বাসিন্দা প্রণবকুমার জানার খোঁজ মিলছে না । জানা গিয়েছে, যে সঙ্গীদের সঙ্গে তিনি পুণ্যস্নানে গিয়েছিলেন, তাঁরা জানিয়েছেন স্নান করতে নামার পর থেকেই নিখোঁজ প্রণবকুমার জানা । পরিচিতরা গোটা মেলা প্রাঙ্গণে খোঁজ করার পরেও এই বৃদ্ধের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ।

স্থানীয় প্রশাসন ও উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া হওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ । তাঁর ছেলে ইতিমধ্যেই প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন । তাঁর সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হয়েছে । রাজ্য সরকারের তরফ থেকে নিখোঁজ এই বৃদ্ধের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে ।

নিখোঁজ মালদার অনিতা ঘোষ

এদিকে, মহাকুম্ভের ঘটনায় নিখোঁজ মালদা শহরের এক প্রৌঢ়া । দলের বাকিদের খোঁজ মিললেও এখনও তাঁকে পাওয়া যায়নি ৷ নিখোঁজ প্রৌঢ়ার নাম অনিতা ঘোষ । বয়স 60 বছর । বাড়ি মালদা শহরের উত্তর কৃষ্ণপল্লি ভাঙাপাড়া এলাকায় । পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার তিনি আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কুম্ভমেলার উদ্দেশে রওনা দেন । মঙ্গলবার রাতে তাঁরা সেখানে পৌঁছন । ভোর রাতে হঠাৎ একটা ব্যারিকেড ভেঙে লোক ঢুকতে শুরু করে । চাপাচাপিতে দলের সকলের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ৷ ঘটনার পর বাকিদের খোঁজ মিললেও এখনও খোঁজ মেলেনি অনিতা ঘোষের ।

নিখোঁজ মালদার অনিতা ঘোষ (নিজস্ব চিত্র)

তাঁর পুত্রবধূ অষ্টমী ঘোষ বলেন, “দিদিদের সঙ্গে আমার শাশুড়ি মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন । সোমবার ভোরে স্বামী শাশুড়িকে দিদির বাড়িতে পৌঁছে দেয় । সকালেই গাড়িতে করে ওঁরা রওনা দেন । মঙ্গলবার দুপুরে শাশুড়ির সঙ্গে কথা হয়েছিল । সেই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, টিফিন করছি, আমরা এখনও পৌঁছয়নি । শাশুড়ির পাশাপাশি সেই সময় দিদিকেও বলেছিলাম, সকলে যেন একসঙ্গে থাকেন । রাতে যখন বিপর্যয় হয়, সেই সময় দিদি-শাশুড়িরা ঘাটে পৌঁছে গিয়েছিলেন । সকলের হাতে দড়ি বাঁধা ছিল । ওই সময়ই বিপর্যয় দেখা দেয় । এরপরেই সকলে ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন । কিছুক্ষণ পর সকলে একত্রিত হলেও এখনও শাশুড়ির খোঁজ পাওয়া যায়নি । দিদির ছেলে স্থানীয় থানায় জিডি করেছে । স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে শাশুড়ির খোঁজ করা হয়েছে । পুলিশ সহযোগিতা করছে । বাড়ির অভিভাবক নিখোঁজ, স্বাভাবিকভাবেই আমরা চিন্তায় রয়েছি ।”

নিখোঁজ প্রৌঢ়ার ছেলে স্বপন ঘোষ বলেন, “মঙ্গলবার রাত এগারোটা নাগাদ মা-সহ অন্যান্যরা সেখানে পৌঁছয় । রাতে ঘাটে পৌঁছনোর পর সেখানে কিছু একটা গণ্ডগোল হয়ে যায় । দলের সকলে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে । পরে সকলে একত্রিত হলেও এখনও মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । ইনকোয়ারি অফিস, থানা, হাসপাতাল সব জায়গায় মায়ের খোঁজ চালানো হচ্ছে । মায়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, চিন্তা তো হবেই ।”

ABOUT THE AUTHOR

...view details