পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বন্ধ হিন্দুস্থান কেবলস কারখানায় ফের 'প্রাণ সঞ্চার' ! আশায় বুক বাঁধছে রূপনারায়ণপুরবাসীরা - Hindustan Cables Factory - HINDUSTAN CABLES FACTORY

Hindustan Cables Factory: 2017 সাল থেকে পাকাপাকিভাবে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা হিন্দুস্তান কেবলস । কিন্তু, সম্প্রতি এই কারখানায় রাজ্য সরকারের শিল্প দফতরের প্রতিনিধি দল থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন, এমনকী ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা আসতে শুরু করেছেন । আর তাতেই কারখানার চার দেওয়ালের অন্ধকারের মাঝে দেখা দিয়েছে আশার আলো ।

hindustan cables factory
হিন্দুস্থান কেবলসের বন্ধ কারখানা (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 8, 2024, 8:06 PM IST

রূপনারায়ণপুর (পশ্চিম বর্ধমান), 8 অগস্ট: একসময় যে কারখানায় তৈরি কেবল ছিল এশিয়া বিখ্যাত, এখন সেখানেই শ্মশানের স্তব্ধতা । 2017 সালে পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা হিন্দুস্তান কেবলস । তারপর থেকে কারখানা কার্যত আগাছার জঙ্গল আর শ্মশানভূমিতে পরিণত হয়েছে । দু-একজন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কেউ নেই । তবু প্রাক্তন কর্মীরা মাঝে মাঝে ছুটে আসেন কারখানা চত্বরে । কারখানাটিকে মাঝে মাঝে দেখতে । আবার মন খারাপ নিয়ে ফিরে যান ।

হিন্দুস্থান কেবলস কারখানা (ইটিভি ভারত)

কিন্তু সম্প্রতি অন্ধকারপুরী কারখানায় আশার আলো দেখা দিয়েছে । হিন্দুস্থান কেবলস কারখানায় রাজ্য সরকারের শিল্প দফতরের প্রতিনিধি দল থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন এমনকী ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা বারে বারে আসতে শুরু করেছেন । মাঝে শোনা যাচ্ছিল, রাজ্য সরকার হয়তো এই কারখানা জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে নতুন কোনও শিল্প নিয়ে আসতে পারে ।

তবে কি সেই প্রক্রিয়ায়াই শুরু হয়েছে?

রাজ্যের প্রতিনিধি দলের বারবার আসা-যাওয়া দেখে এবার রূপনারায়ণপুরের মানুষের মনেও আশার সঞ্চার হয়েছে । তবে হয়তো বন্ধ হয়ে যাওয়া এই কারখানার মাটিতেও আবার নতুন করে কিশলয়ের চারা দেখা দিতে পারে । যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কিছু জানাতে অস্বীকার করা হয়েছে । তবে বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আরমান জানিয়েছেন, "আমরা খুব তাড়াতাড়ি একটি খুশির খবর পাব । সব কথা ক্যামেরার সামনে বলা যায় না, তবে রূপনারায়ণপুরের জন্য এবার সত্যি কিছু ভাবা হচ্ছে ।"

1952 সালে রূপনারায়ণপুরে তৈরি হয়েছিল হিন্দুস্তান কেবলস কারখানা । এই কারখানায় জেলি ফিল্ড কেবল তৈরি হত । এক সময় ভীষণ রমরমা ছিল এই কারখানার । সুবিশাল কারখানা, তার সঙ্গে 1200 আবাসন, স্কুল, সমস্ত কিছু নিয়ে রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবলস একটি আধুনিক শহর হয়ে গড়ে উঠেছিল । কিন্তু আশির দশকের পর থেকেই কারখানা ভুগতে শুরু করে । পরিকাঠামগত উন্নয়ন না করার জন্যই বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা দায় হয়ে উঠেছিল হিন্দুস্তান কেবলসের ।

অন্যদিকে, বাজারে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল আসার পর থেকে হিন্দুস্তান কেবলসে তৈরি হওয়া জেলি ফিল্ড কেবলসের চাহিদা ধীরে ধীরে কমতে থাকে । আর এর ফলেই কারখানা ধুঁকতে শুরু করে । কর্মীদের বেতন বকেয়া হয় । কারখানা বিআইএফআরের অধীনে চলে যায় । 2001 সালে পুরোপুরিভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুস্থান কারখানার । এরপর কখনও আশার আলো এসেছে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কারখানা অধিগ্রহণ নিয়ে ।

কখনও প্রাক্তন সংসদ বাবুল সুপ্রিয়র উদ্যোগে কারখানায় প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল । কিন্তু, কারখানায় উৎপাদনা শুরু হয়নি ৷ শেষ পর্যন্ত 2017 সালে পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুস্তান কেবলস কারখানা । কর্মীরাও একে একে ভিআরএস নিয়ে কারখানা ছাড়তে বাধ্য হন । গোটা রূপনারায়ণপুর শহর কার্যত ফাঁকা হয়ে যায় । 1200 আবাসনের দরজা-জানলা সমস্ত কিছুই চোরে নিয়ে চলে যায় । কারখানার যন্ত্রও চুরি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ।

বর্তমানে শ্মশানের মতো পড়ে রয়েছে হিন্দুস্তান কেবেলসের কারখানা । যদিও হিন্দুস্তান কেবলস শহরের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পানীয় জল অন্যান্য সমস্ত কিছু নাগরিক পরিষেবা ঠিকঠাক রাখার চেষ্টা করেছেন স্থানীয় বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় থেকে শুরু করে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আরমান-সহ স্থানীয় মানুষজন । গত এক বছর ধরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে আধিকারিকরা এখানে যাওয়া-আশা করছেন ৷ রাজ্য সরকারের শিল্প দফতর থেকে শুরু করে পশ্চিম বর্ধমানের জেলা প্রশাসন, এমনকী ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিভাগ কারখানা ঘুরে গিয়েছে ৷ জমির মাপ করে গিয়েছে ।

প্রায় 900 একর জমি রয়েছে এই কারখানায় । রাজ্য সরকার প্রতিনিধিরা কেউ কিছু জানাতে না চাইলেও আশার আলো সঞ্চার হয়েছে রূপনারায়ণপুরের প্রাক্তন শ্রমিক, কেবলস বাঁচাও কমিটি সংগঠন কিংবা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে । অনেকেই আশা করছেন, এবার হয়তো কিছু একটা হবে । এই বন্ধা জমিতেই হয়তো নতুন করে আবার নতুন শিল্পের জন্ম হতে পারে । তাই এত ঘন ঘন আনাগোনা রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকদের ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details