পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

আগমনীতেই বিসর্জনের বাজনা, শুরুতেই শেষ দুর্গাপুজো - Durga Puja 2024

One Day Durga Puja: বুধের ভোর থেকেই কানে আসছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই চেনা কণ্ঠ। আকাশে বাতাসে আগমনীর সুর, মা আসছেন যে ! আর মাত্র 7 দিনের অপেক্ষা। কিন্তু হীরাপুর থানার ধেনুয়া গ্রামের ঠাকুরবাড়িতে আজকেই আগমনীর আলো ৷ আবার আজকেই বিষাদের সুর।

One Day Durga Puja
একদিনেই দুর্গাপুজো শেষ হীরাপুরে (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 2, 2024, 3:32 PM IST

আসানসোল, 2 অক্টোবর: মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে যখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণে আগমনীর বার্তা চারিদিকে মুখরিত হয় ঠিক তখনই যেন আবাহনেই বিসর্জনের সুর শোনা যায় হীরাপুরের ধেনুয়া গ্রামের কালীকৃষ্ণ আশ্রমে। এখানে অনুষ্ঠিত হয় একদিনের দুর্গাপুজো। একদিনেই সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর পুজো হয়ে বাজে দশমীর বিসর্জনের বাজনা।

আসানসোলের হীরাপুরে দামোদর নদের ধারে কালীকৃষ্ণ আশ্রম 1937 সালে তেজানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক ধর্মীয় মহারাজ এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 1979 সালে তিনিই শুরু করেছিলেন এই আগমনী দুর্গাপুজো।

আগমনীতেই বিসর্জনের বাজনা (ইটিভি ভারত)

কীভাবে পুজো হয়?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল তেজানন্দ ব্রহ্মচারী নাকি দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই আগমনী দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের আর কোথাও এই ধরনের দুর্গাপুজো দেখা যায় না। অসমে নাকি এমন পুজোর প্রচলন রয়েছে বলে মন্দিরের সেবাইত জানান। ধেনুয়া গ্রামে কালীকৃষ্ণ আশ্রমের এই আগমনী দুর্গাপুজো একেবারেই ব্যতিক্রমী। পিতৃপক্ষের শেষ লগ্নে মহালয়া দিন এই পুজো হয়ে থাকে। অমাবস্যা তিথিতেই সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী একইদিনে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠিত হয় একদিনের দুর্গাপুজো (নিজস্ব ছবি)

ঠিক দুর্গাপুজোর যেমন নিয়ম, তেমনই। মহালয়ার ভোরবেলায় প্রথমে নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে নিয়ে আসা হয় মন্দির চত্বরেই পুস্করিণীতে। তারপর মন্দিরে দেবী প্রতিমার সামনে নবপত্রিকাকে বসিয়ে শুরু হয় ষষ্ঠী কীর্তি থেকে শুরু করে সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধিক্ষণ, নবমী এবং দশমীর পুজো। পুজোর শেষে নবপত্রিকাকে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়। বিসর্জন দেওয়া হয় ঘটও। শুধু স্থানীয়দের অনুরোধে প্রতিমা থেকে যায়। প্রতিমাকে নিরঞ্জন করা হয় দশমীর দিন। যদিও আর পুজো আর্চা হয় না।

প্রতিমার বিশেষত্ব-

শুধু পুজোর রীতিনীতিতেই ব্যতিক্রম নয়, এখানকার পুজোর প্রতিমাতেও রয়েছে দেবী দুর্গার অন্যরূপ। এখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে তার সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী থাকে না। এমনকী দেবী দুর্গার সঙ্গে মহিষাসুরকেও দেখা যায় না। সেই কারণে দেবীর এখানে ক্রুব্ধ রূপ দেখা যায় না। মৃন্ময়ী মায়ের রূপ শান্ত এবং স্থির। এখানে দেবীর সঙ্গে দেবীর দুই সখী জয়া এবং বিজয়াকে দেখা যায়।

একদিনের পুজোর দর্শনার্থী প্রচুর-

মহালয়ার সকাল থেকে ধেনুয়া গ্রাম তো বটেই আশেপাশে আসানসোল শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষজন ভিড় জমান এই পুজোয়। এমনকী পার্শ্ববর্তী জেলা, বাঁকুড়া পুরুলিয়ার প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষজনও আসেন এই পুজোতে অংশ নিতে। দুপুরে মন্দির চত্বরে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষকে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হয়।

হীরাপুরের ধেনুয়া গ্রামের কালীকৃষ্ণ আশ্রমের পুজো (নিজস্ব ছবি)

অনেকেই এই ব্যতিক্রমী কথা পুজোর কথা শুনে এই পুজোকে চাক্ষুষ করতে আসেন। যদিও ধেনুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের এই পুজো ঘিরে সকাল থেকে যতটা উন্মাদনা থাকে বিকেল যত ঘনিয়ে আসে ততই সেখানে বাজে বিষাদের করুন সুর। কারণ একদিনেই দুর্গাপুজো শেষ হয়ে যায় ধেনুয়া গ্রামে। আবাহনেই বিসর্জনের ঢাক বেজে ওঠে হীরাপুরের ধেনুয়ার এই কালীকৃষ্ণ আশ্রমে।

ABOUT THE AUTHOR

...view details