কলকাতা, 26 ডিসেম্বর: বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে শুধু যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কিংবা জামাতুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি ভারতে সক্রিয় হচ্ছে, এমনটা নয় । বরং তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশ তথা পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের স্লিপার সেলকে নতুন করে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে পাক গুপ্তচর সংস্থা ।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতে ঢোকে কয়েকজন সন্দেহভাজন যুবক । তারা পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত বলে সূত্রের খবর । জানা গিয়েছে, বৈধ কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছিল তারা । পরে এ রাজ্যের মালদা এবং মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে একাধিক যুবকের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তারা ধাপে ধাপে একাধিক গোপন বৈঠক করে । অভিযোগ, ওই স্থানীয় কয়েকজন যুবকের মগজ ধোলাইয়ের পর ফের তারা বাংলাদেশে পাড়ি দেয় । আর এই গোটা কর্মকাণ্ডে তাদের আইএসআই মদত দিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর ৷
এসটিএফের হাতে এসেছে এমনই বিস্ফোরক তথ্য । কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (পঞ্চম) ভি. সলোমন নেশাকুমার এ বিষয়ে ইটিভি ভারতকে বলেন, "এই ধরনের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে । এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কাজ করছি । এখনই সবকিছু বলার সময় আসেনি ।"
এসটিএফের হাতে এল বিস্ফোরক তথ্য (নিজস্ব চিত্র) কিন্তু এই বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে, কয়েকজন যুবক বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে গেল । এই দেশের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকদিন ধরে গোপন বৈঠক করল । আবার তারা বাংলাদেশে চলে গেল ? আর কেউ কোনও বিষয়ে টের পেল না ? এ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই পুলিশের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, "বর্তমানে বাংলার থেকেও বাংলাদেশ তাদের কাছে সেফ করিডর হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে । তারা এরাজ্যে এসে দেদার নকল পাসপোর্ট বানিয়ে নিচ্ছে । শোনা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বৈধ ভিসা নিয়ে এদেশে ঢোকা যুবকের দল পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার সদস্য । তবে তাদের কাছে বৈধ ভিসা থাকলেও, তারা এখানে মূলত তাদের স্লিপার সেলগুলিকে চাঙ্গা করে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে একাধিক নকল পরিচয় পত্র ও নকল ভিসা । আর একবার হাতে নকল পাসপোর্ট, ভিসা চলে এলেই পুলিশের চোখ এড়িয়ে যাওয়াটা অনেকটাই সুবিধে । জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির একের পর এক ঘটনা সামনে আসার পর, নকল পাসপোর্ট তৈরি রুখতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ । লালবাজারেরর তরফে একাধিক বিশেষ নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে ৷"
তবে এই ঘটনায় লালবাজারের এসটিএফের এক আধিকারিকের দাবি যে, কোনও কারণে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে কোথাও যেতে হলে তাঁদের প্রথম পছন্দ থাকে ভারত । গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর, শেষ 5 বছরে জাল নথি দিয়ে প্রায় 3 হাজারেরও বেশি ভারতীয় পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে । বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে এসে মোটা টাকার বিনিময়ে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন বাংলাদেশিদের একাংশ । সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে পাড়ি দেন বাংলাদেশি নাগরিকরা ।
রাজ্যের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, এই পাসপোর্ট চক্রের তদন্তে নজরে রয়েছে মূলত তিনটি জেলা । তা হল দুই 24 পরগনা ও নদিয়া । এই জায়গাগুলিতেই এই চক্রের রমরমা ৷ ভবানীভবন সূত্রের খবর, কোনও বৈধ নথি ছাড়া প্রথমেই এই দেশে ঢুকে পড়ছেন বাংলাদেশিরা । এরপর তাঁদের দিয়ে প্রথমে স্থানীয় থানায় জেনারেল ডায়েরি করাচ্ছে অসাধু চক্রের কারবারিরা । থানায় ওই বাংলাদেশিরা জানাচ্ছেন, তাঁদের রেশন কার্ড হারিয়ে গিয়েছে । তাঁরা এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধির শংসাপত্র ও সুপারিশ নিয়ে তবেই থানায় যাচ্ছেন বলে খবর ।
এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত এজেন্টরা একাধিক ব্যবহার না-হওয়া রেশন কার্ডের নম্বর আগাম জোগাড় করে রাখছেন । তাঁদের এই রেশন কার্ডগুলি সাপ্লাই দিচ্ছেন রেশন অফিসের একাধিক নিচুতলার কর্মী । তার মধ্যে থেকে অচল যে কোনও একটি রেশন কার্ডের রেশন নম্বর দিয়ে নাম বদলে স্থানীয় থানায় জিডি করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে থানা কোনও কিছু যাচাই না-করেই জেনারেল ডায়েরি জমা নিচ্ছে বলে জানতে পেরেছে ভবানীভবন ।
থানায় করা জিডি দেখিয়ে নতুন রেশন কার্ডের আবেদন করা হচ্ছে । আর দিন কয়েক পর হাতে চলে আসছে একটি ঝা-চকচকে রেশন কার্ড ।
রেশন কার্ড পাওয়ার পর সেই কার্ড দেখিয়ে ভোটার কার্ডের আবেদন করা হচ্ছে । পরে ভোটার কার্ড হাতে এলে তা থেকে তাঁরা আধার ও পরে পাসপোর্টের অবেদন করছেন ও নকল পাসপোর্ট জোগাড় করছেন ।