শিলিগুড়ি, 12 অগস্ট: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনার বিক্ষোভ আছড়ে পড়ল উত্তরবঙ্গেও ৷ সারা রাজ্য জুড়ে আরজি করের ডাক্তারির পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কর্মবিরতি পালন করছেন পিজিটি, হাউজ স্টাফ ও জুনিয়র চিকিৎসকরা । একইভাবে ওই বিক্ষোভ হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও ৷ সেখানকার জুনিয়র ডাক্তার, পিজিটি ও হাউজ স্টাফেরাও সোমবার কর্মবিরতি পালন করলেন ৷
আরজি কর-কাণ্ডে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা৷ সোমবার৷ (ইটিভি ভারত) আন্দোলনের জেরে ব্যাহত হয় দুই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা । তবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে সেভাবে কোনও গোলমাল হয়নি ৷ কিন্তু কোচবিহার মেডিক্যালে রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বচসায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নির্ভরশীল পুরো উত্তরবঙ্গ তো বটেই, পাশাপাশি ভিনরাজ্যের রোগীরাও । আউটডোরেই গড়ে প্রতিদিন এক হাজারেরও রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়ে থাকে । আর এ দিন কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়েন রোগীর পরিজনরা ।
আরজি কর-কাণ্ডে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা৷ সোমবার৷ (নিজস্ব চিত্র) এ দিন সকাল থেকে এমার্জেন্সি বিভাগের বাইরে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত, দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়ে আন্দোলন হয় । আরজি করের ঘটনার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা ও হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন-সহ একাধিক দাবিতেও এ দিন সরব হন হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার, পিজিটি ও হাউজ স্টাফেরা ।
এই বিষয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসক শহরিয়ার আলম বলেন, "আমরা চাই আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হোক এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক । এছাড়া উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নজরদারি, নিরাপত্তা বাড়ানো, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা ও হাসপাতালে কর্মী নিয়োগ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । তা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে ।"
আরজি কর-কাণ্ডে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা৷ সোমবার৷ (নিজস্ব চিত্র) উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "আউটডোর বন্ধ নেই । সিনিয়র ডাক্তাররা আউটডোরে বসেছেন । তবে এখানে রোগীর ব্যাপক চাপ থাকে । ফলে পরিষেবা বন্ধ না হলেও একটু সমস্যা হবে । এমার্জেন্সি পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে । এমার্জেন্সি অপারেশন স্বাভাবিক রয়েছে ।"
অন্যদিকে এই ঘটনা নিয়ে এ দিন কর্মবিরতি পালিত হয় কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । হাসপাতালের ইমারজেন্সি ও মাতৃমা বিভাগ ছাড়া বহির্বিভাগ বন্ধ । চিকিৎসক দেখাতে এসে নাজেহাল হতে হয়েছে রোগী ও তাঁর আত্মীয় পরিজনেরা । বহির্বিভাগে টিকিট কাটতে দিচ্ছেন না জুনিয়র ডাক্তাররা । এই নিয়ে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে বচসাও হয় জুনিয়র ডাক্তারদের । পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷
কোচবিহারের বানেশ্বর থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয় ধর্মেশ্বর রায় বলেন, ‘‘মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে এসেছি । নিজেও ডাক্তার দেখাবো । কিন্তু টিকিট কাটতে বাধা দিচ্ছে । এভাবে হয়রানি করার কোনও মানে হয় না ।’’ একই বক্তব্য কোচবিহারের ঘেঘিরঘাট থেকে আসা এক রোগী অনিমেষ রায়ের । এ দিন তিনি জানান, হাসপাতালের আউটডোরে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হল হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে যেতে । সেখান থেকে ডাক্তার দেখানোর পর ওষুধ লিখে দিল । ইমার্জেন্সিতে ওষুধ নিতে বাধা দিচ্ছে ।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতি নিয়ে উত্তেজনা কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে৷ সোমবার৷ (নিজস্ব চিত্র) যদিও আন্দোলনকারীদের পক্ষে দেবাঙ্গনা মিত্র, প্রশস্তি দাস বলেন, ‘‘যতক্ষণ না আরজি করের ঘটনায় দোষীর বিচার হচ্ছে, যতক্ষণ না আমরা নিরাপত্তা পাচ্ছি, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে ।’’ এদিকে কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, আউটডোর পরিষেবা চলছে। ডাক্তাররা বসেছেন ।
কিন্তু রোগীরা যদি আউটডোরে ঢুকতেই না পারেন, তাহলে কীভাবে ডাক্তার দেখাবেন, এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ।