পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

নববধূকে উপহার দিয়েছিলেন গরদের শাড়ি, বিশ্বাসদের বিশ্বাসে আজও 'জীবিত' নেতাজি

Netaji Subhash Chandra Bose's Memories: শিয়ালদার বৈঠকখানা রোডের 26 নম্বর বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্মৃতি ৷ এই বাড়ির কর্তা তথা, তৎকালীন কলকাতা পৌরনিগমের হেলথ অফিসার ডাক্তার ললিত মোহন বিশ্বাসের বন্ধু ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু ৷ স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত বৈঠকখানা রোডের 26 নম্বর বাড়ি ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 23, 2024, 5:20 PM IST

Updated : Jan 23, 2024, 5:56 PM IST

বিশ্বাসদের বিশ্বাসে আজও 'জীবিত' নেতাজি

কলকাতা, 23 জানুয়ারি: সময়টা তিরিশের দশক। আজকের কলকাতার সঙ্গে সেদিনের কলকাতার মিল পাওয়া যাবে না। কলকাতা তখন এত জনবহুল নয় ৷ শিয়ালদা স্টেশনের খুব কাছে বৈঠকখানা রোডের 26 নম্বর বাড়িতে বিয়ের প্রীতিভোজের আসর বসেছিল ৷ তৎকালীন কলকাতা পৌরনিগমের হেলথ অফিসার ডাক্তার ললিত মোহন বিশ্বাসের ছেলের বিয়ে ছিল সেটি ৷ অতিথি অভ্যাগতদের ভিড়ে জমজমাট বিয়ে বাড়ি ৷ সন্ধেয় একটি কালো গাড়ি এসে থামে বাড়ির সামনে ৷ সেই গাড়ির দরজা খুলে উপহার হাতে বেরিয়ে আসেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৷ দেশনায়কের 128 তম জন্মবার্ষিকীতে সেই অজানা ইতিহাসে উঁকি দিল ইটিভি ভারত ৷

সুভাষচন্দ্র বসু তখন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ৷ ফলে পরাধীন ভারতবর্ষে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিগণিত ৷ প্রসঙ্গত, সেই সময় কংগ্রেস সভাপতিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলে সম্বোধন করা হত ৷ ফলে বিয়ে বাড়িতে তখন হুলস্থুল ৷ গৃহকর্তা ডাক্তার ললিত মোহন বিশ্বাস তড়িঘড়ি আসেন সুভাষচন্দ্রকে অভ্যর্থনা করতে ৷ সুভাষচন্দ্র চোদ্দ বছরের নববধু জ্যোৎস্না রানী বিশ্বাসকে আশির্বাদ করে লালপাড়ের গরদের শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন ৷ সেদিন ওই বাড়ির মেয়ে মায়ারানিরও বিয়ে ছিল ৷ ফলে তাঁকেও একটি লাল পাড়ের গরদের শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন ৷

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জ্যোৎস্না রানী বিশ্বাসের বিয়েতে উপহার দেওয়া লালপাড়ের গরদের শাড়ি ৷

26 নম্বর বৈঠকখানা রোডের এই বাড়ির সঙ্গে রাসবিহারী বসুর সম্পর্ক রয়েছে ৷ এই বাড়ির বর্তমান সদস্য তরুণ বিশ্বাস বলছিলেন সেদিনের কথা ৷ তিনি বলেন, “আমার মা জ্যোৎস্না রানি বিশ্বাস 2020 সালে 96 বছর বয়সে মারা গিয়েছন ৷ তিনি সুভাষচন্দ্র বসুর হাত থেকে উপহার পাওয়া লালপাড়ের গরদের শাড়িটি সম্পর্কে ভীষণ আবেগতাড়িত ছিলেন ৷ আমরাও এই শাড়িটিকে খুব যত্নে রাখি ৷ যাতে কোনওভাবে নষ্ট না হয়ে যায় ৷ নেতাজির হাতের ছোঁয়া রয়েছে তো ৷”

শিয়ালদা স্টেশন থেকে বেরিয়ে ছবিঘর সিনেমা হলের পাশের গলিতে তিনমহলা বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে স্বাধীনতার বহু ইতিহাস ৷ রাসবিহারী বসু, গগনচন্দ্র বিশ্বাস, বসন্তকুমার বিশ্বাস, মন্মথনাথ বিশ্বাসের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই বাড়ির সঙ্গে যুক্ত ৷ এই বাড়ির সুচিকিৎসক ললিত মোহন বিশ্বাস ছিলেন কলকাতা পৌরনিগমের হেলথ অফিসার ৷ বিভিন্ন সামাজিক প্রয়োজনে এবং নানাবিধ সুপারিশ করে চিঠি লিখতেন সেই আমলের সর্বভারতীয় নেতারা ৷ সেই তালিকায় ছিলেন, হেমন্ত বসু, বিধানচন্দ্র রায়, নেলি সেনগুপ্ত, ইউ এন ব্রহ্মচারী এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ৷

ডাক্তার ললিত মোহন বিশ্বাসকে লেখা নেতাজির চিঠি

তরুণ বিশ্বাস বলেন, “1924 সাল থেকে আমার দাদুর সঙ্গে নেতাজির সখ্যতা ৷ নিজে মেয়র ছিলেন ৷ পরবর্তী সময়ে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন ৷ কিন্তু, মানুষের উপকারে ছিলেন অক্লান্ত ৷ যে দু’টি চিঠি দেখালাম তা একই দিনে লেখা ৷ কোনও একজন ব্যক্তির চাকরির সুপারিশ করে দাদুকে লিখেছিলেন সুভাষ বসু ৷”

তাঁদের বাড়ির বৈঠকখানা মহান বিপ্লবীদের স্পর্শে ধন্য ৷ সেই বৈঠকখানাতেই বসেই নাকি স্বাধীনতা আন্দোলনের আলোচনাসভা চলত ৷ বিশ্বাস পরিবার সেই স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট এবং তা তাঁদের মত করে করছেন ৷ তরুণ বিশ্বাস জানান, “আমাদের বাড়িতে বহু মহান ব্যক্তিদের আসা যাওয়া ছিল ৷ তাঁদের বহু চিঠি রয়েছে ৷ সেগুলির সব ক’টি সংরক্ষিত করে, যত্নে রাখতে পেরেছি তা বলব না ৷ চিঠিগুলোর অবস্থা তো দেখলেন ৷ আমরা চেষ্টা করছি প্রকৃত সংরক্ষণের ৷ সেই কাজও শুরু হয়েছে ৷”

ইতিমধ্যে কলকাতা পৌরনিগমকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-সহ একাধিক বরেণ্য ব্যক্তির চিঠি দেওয়া হয়েছে ৷ ব্যস্ত কলকাতার পায়ে পায়ে ইতিহাস লুকিয়ে ৷ বৈঠকখানা রোডের এই বাড়ির পাশ দিয়ে নিত্যদিন বহু মানুষের যাতায়াত ৷ তাদের সেই ব্যস্ততায় ইতিহাস সরে থাকে নীরবে ৷

আরও পড়ুন:

  1. নেতাজি সুভাষচন্দ্র ও ঋষি অরবিন্দদের গোপন ডেরা আজ ভুতুড়ে বাড়ি
  2. 83 বছর আগে এসেছিলেন নেতাজি, সুভাষ-স্মরণে ঝাড়গ্রামে পদার্পণ দিবস
  3. ছদ্মবেশ দেখেছিলেন গোষ্ঠ পালের খেলা, প্রিয় ছিল আতর; চিনে নিন অচেনা সুভাষকে
Last Updated : Jan 23, 2024, 5:56 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details