কলকাতা, 23 জানুয়ারি: সময়টা তিরিশের দশক। আজকের কলকাতার সঙ্গে সেদিনের কলকাতার মিল পাওয়া যাবে না। কলকাতা তখন এত জনবহুল নয় ৷ শিয়ালদা স্টেশনের খুব কাছে বৈঠকখানা রোডের 26 নম্বর বাড়িতে বিয়ের প্রীতিভোজের আসর বসেছিল ৷ তৎকালীন কলকাতা পৌরনিগমের হেলথ অফিসার ডাক্তার ললিত মোহন বিশ্বাসের ছেলের বিয়ে ছিল সেটি ৷ অতিথি অভ্যাগতদের ভিড়ে জমজমাট বিয়ে বাড়ি ৷ সন্ধেয় একটি কালো গাড়ি এসে থামে বাড়ির সামনে ৷ সেই গাড়ির দরজা খুলে উপহার হাতে বেরিয়ে আসেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৷ দেশনায়কের 128 তম জন্মবার্ষিকীতে সেই অজানা ইতিহাসে উঁকি দিল ইটিভি ভারত ৷
সুভাষচন্দ্র বসু তখন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ৷ ফলে পরাধীন ভারতবর্ষে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিগণিত ৷ প্রসঙ্গত, সেই সময় কংগ্রেস সভাপতিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলে সম্বোধন করা হত ৷ ফলে বিয়ে বাড়িতে তখন হুলস্থুল ৷ গৃহকর্তা ডাক্তার ললিত মোহন বিশ্বাস তড়িঘড়ি আসেন সুভাষচন্দ্রকে অভ্যর্থনা করতে ৷ সুভাষচন্দ্র চোদ্দ বছরের নববধু জ্যোৎস্না রানী বিশ্বাসকে আশির্বাদ করে লালপাড়ের গরদের শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন ৷ সেদিন ওই বাড়ির মেয়ে মায়ারানিরও বিয়ে ছিল ৷ ফলে তাঁকেও একটি লাল পাড়ের গরদের শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন ৷
26 নম্বর বৈঠকখানা রোডের এই বাড়ির সঙ্গে রাসবিহারী বসুর সম্পর্ক রয়েছে ৷ এই বাড়ির বর্তমান সদস্য তরুণ বিশ্বাস বলছিলেন সেদিনের কথা ৷ তিনি বলেন, “আমার মা জ্যোৎস্না রানি বিশ্বাস 2020 সালে 96 বছর বয়সে মারা গিয়েছন ৷ তিনি সুভাষচন্দ্র বসুর হাত থেকে উপহার পাওয়া লালপাড়ের গরদের শাড়িটি সম্পর্কে ভীষণ আবেগতাড়িত ছিলেন ৷ আমরাও এই শাড়িটিকে খুব যত্নে রাখি ৷ যাতে কোনওভাবে নষ্ট না হয়ে যায় ৷ নেতাজির হাতের ছোঁয়া রয়েছে তো ৷”
শিয়ালদা স্টেশন থেকে বেরিয়ে ছবিঘর সিনেমা হলের পাশের গলিতে তিনমহলা বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে স্বাধীনতার বহু ইতিহাস ৷ রাসবিহারী বসু, গগনচন্দ্র বিশ্বাস, বসন্তকুমার বিশ্বাস, মন্মথনাথ বিশ্বাসের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই বাড়ির সঙ্গে যুক্ত ৷ এই বাড়ির সুচিকিৎসক ললিত মোহন বিশ্বাস ছিলেন কলকাতা পৌরনিগমের হেলথ অফিসার ৷ বিভিন্ন সামাজিক প্রয়োজনে এবং নানাবিধ সুপারিশ করে চিঠি লিখতেন সেই আমলের সর্বভারতীয় নেতারা ৷ সেই তালিকায় ছিলেন, হেমন্ত বসু, বিধানচন্দ্র রায়, নেলি সেনগুপ্ত, ইউ এন ব্রহ্মচারী এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ৷