থানারপাড়া (নদিয়া), 17 মার্চ: সংখ্যালঘু গ্রামে একটিমাত্র হিন্দু পরিবার। সেই পরিবারেরই বৃদ্ধার পারলৌকিক ক্রিয়া সারলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী প্রতিবেশীরা। পাশাপাশি তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় নমাজের মাঝেই দোয়া পড়লেন মসজিদের ইমাম।
ধর্ম নিয়ে হানাহানির মাঝে এ যেন এক অন্য রূপ নদিয়ার থানারপাড়ার শুভরাজপুর গ্রামে। শুভরাজপুর গ্রামে কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসছেন সনৎ মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী মঞ্জুশ্রী মণ্ডল। দেশভাগের পর এই গ্রামই ছিল তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা। তবে শুভরাজপুরের অন্যান্য সকল পরিবার সংখ্যালঘু ইসলাম ধর্মাবলম্বী ৷ অর্থাৎ, সংখ্যালঘু পরিবারের মাঝে তাঁরাই ছিলেন একমাত্র হিন্দু পরিবার। দীর্ঘদিন বসবাস সূত্রে সংখ্যালঘু প্রতিবেশীরা হয়ে উঠেছিল তাঁদের পরম আত্মীয়। বিপদে-আপদে সবসময় প্রতিবেশীদের পাশে পেতেন সনৎবাবু ও তাঁর স্ত্রী।
শনিবার সকালে মঞ্জুশ্রী দেবীর মৃত্যু হয় বয়সজনিত কারণে। তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক 60 বছর। কয়েকদিন আগে শারীরিক অসুস্থতা আরও বেড়ে যাওয়ার কারণে শুক্রবার তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভরতি করেন তাঁর স্বামী সনৎ মণ্ডল। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন শনিবার মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের মৃত্যু হয়। গ্রামে খবর পৌঁছতেই আজানের পর মসজিদের মাইকেই তাঁর মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করা হয় ৷ খবর পেয়ে সংখ্যালঘু প্রতিবেশীরাই তড়িঘড়ি পৌঁছন তাঁর বাড়িতে।
মৃত মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের কোনও পুত্রসন্তান নেই। একমাত্র কন্যাসন্তানের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, গ্রামের যুবকরাই টাকা তুলে এদিন মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেন। এবিষয়ে সনৎ মণ্ডল বলেন, "আমরা কখনও বুঝতে পারিনি যে মুসলিম গ্রামে বসবাস করি। ওনারা সর্বদা আমাকে সাহায্য করেছেন। তাঁদের এই ঋণ কখনোই ভোলার নয়।" অন্যদিকে, গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই ওই হিন্দু পরিবার আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের ধর্ম যে আলাদা তা বুঝতে পারিনি। ওনার (মঞ্জুশ্রী মণ্ডল) মৃত্যুতে আমরা গ্রামবাসীরা সকলেই শোকাহত।"
আরও পড়ুন:
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির ! হিন্দু পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফেরাতে চাঁদা আদায় মুসলমানদের
- মৃত্যু মিলিয়ে দিল দুই সম্প্রদায়কে, ধর্মীয় সংকীর্ণতা সরিয়ে সামনে এল মানবতা
- সাম্প্রদায়িক বিভাজন রুখতে ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রয়োজন, পাওয়ারের নিশানায় বিজেপি