জলপাইগুড়ি, 12 মে: এ এক অন্য মায়ের, গল্প হলেও সত্যি ৷ চা বাগানে এসে এরা দিনের 8 ঘণ্টা 'মা' হওয়ার কাজ করেন ৷ আসলে ডুয়ার্সের চা বাগানের অধিকাংশ শিশুদের শৈশবকাল কাটে ক্রেস হাইজ ও চা পাতার ওজন ঘরে । দিনের আট ঘণ্টা মহিলা শ্রমিক মায়েদের শিশুরা চলে যায় চা বাগানের দাইমার তত্বাবধানে। মায়েরা যখন চা পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত তখন ছোট্ট শিশুদের দেখভালের দায়িত্বে থাকেন মুখে মুখে পরিচিত নানি মা(দাইমা) বা আয়াকর্মীরা ৷
চা শ্রমিক জ্যোতি ইন্দোয়ার থেকে শুরু করে আরতি লোহার জানান, পেটের তাগিদে বাচ্চাদের রেখে কাজ করতে হয়। মা কখনও শিশুদের ছেড়ে থাকতে পারেন না। তাই চা বাগানের ওজন ঘরে নানিমার কাছে শিশুদের ছেড়ে যেতে হয়। তখন মায়ের ভূমিকা পালন করেন তাঁরা ৷ তাঁরাই বাচ্চাদের খাওয়ান, তাদের সঙ্গে খেলা করেন। বাচ্চা কান্নাকাটি করলে আমাদের খবর দেন। আমরা গিয়ে বাচ্চাদের আদর করে আসি। ওরাও মায়ের মতই আমাদের বাচ্চাদের আগলে রাখে। আমরা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি। আবার কাজের পর বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই।
চা বাগানের আয়া হিসেবে নানিমার দায়িত্বে থাকা ফুলমিনা ওঁড়াও, শুক্রি রাউটিয়া জানান, সারাদিন বাচ্চাদের রাখতে পেরে ভীষণ খুশি। বাচ্চাদের সারাদিন দেখাশোনা করানোর পাশাপাশি তাদের খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো সব কিছুই করতে হয় ৷ কোনও বাচ্চা কাঁদলে সেই শিশুর মাকে খবর দেওয়া হয়। বাচ্চার মা এসে তাকে বুকের দুধ খাওয়ান। প্রতিদিন এইভাবেই কাটে ৷ চা বাগানে মহিলা শ্রমিকদের শিশুদের রাখার জনক্স চা বাগানের পক্ষ থেকে চা বাগান থেকে দুই তিনজন দাইমাকে নিয়োগ করা হয়েছে। মূলত সারাদিন অন্যের শিশুদের আপন করে দেখভাল করেন তাঁরাই ।
আসলে যে সকল শিশুরা আসে তাদের কারও বয়স কয়েকমাস, কারওবা এক বছর থেকে দুবছর বয়স ৷ টিনের চালে একটি ঘরে শাড়ির ভাজে ঝুলিয়ে রাখা হয় দের। এই ভাবেই দিনের বাকিটা সময় কাটে শিশুদের। সারা বছর এই ভাবেই চা বাগানের মহিলা শ্রমিকরা আর পাঁচটা দিনের মতই মাতৃত্ব দিবস পালন করে আসছেন। তাঁদের কাছে স্পেশাল দিন বলে কিছু নেই। তাঁদের কাছে প্রতি দিনই মায়ের দিন ৷