মালদা, 20 নভেম্বর: তিন তালাক বেআইনি ও অসাংবিধানিক, 2017 সালে তা ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ গ্রামীণ তালাক প্রথাতেও রয়েছে আইনি আপত্তি ৷ বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া উচিত শুধুমাত্র আইনি পথে ৷ এটাই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ ৷ কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মালদায় জোর করে তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠল ৷ এক গৃৃহবধূর অভিযোগ, মারধর করে তাঁকে দিয়ে জোর করে তালাকনামায় সই করিয়ে নিয়েছেন স্বামী ও তাঁর বাড়ির লোকজন ৷
শুধু তাই নয়, ওই বধূকে মারধর করে তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িতও করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ এই ঘটনায় ওই বধূ স্থানীয় থানায় স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ ৷ এদিকে, ওই বধূর স্বামীর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন ৷
থানায় অভিযোগ গৃহবধূর (নিজস্ব চিত্র) ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদা ব্লকের নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জলঙ্গা গ্রামে ৷ মালদা থানার পুলিশকে ওই বধূ জানিয়েছেন, 13 বছর আগে সামাজিক মতে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল ৷ স্বামী কৃষিকাজ করেন ৷ বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই অতিরিক্ত পণের দাবিতে তাঁর উপর অত্যাচার শুরু করেন স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ৷ কিন্তু নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি সমস্ত অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতেন ৷ ইতিমধ্যে তিনি দুই ছেলে ও একটি মেয়ের জন্ম দেন ৷ কিন্তু ছেলেমেয়ে হয়ে গেলেও তাঁর উপর অত্যাচার কমেনি ৷
সোমবার সন্ধেয় আচমকা তাঁর স্বামী আর শাশুড়ি তাঁকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ ৷ ওই বধূ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে নাকি শ্বাসরোধ করে খুন করার চেষ্টা করা হয় ৷ বধূর অভিযোগ, তার আগে সেদিনই তাঁকে দিয়ে জোর করে তালাকনামায় সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল ৷ কোনওরকমে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন তিনি ৷ অনেক চিন্তাভাবনা করে মঙ্গলবার সন্ধেয় তিনি সমস্ত ঘটনা জানিয়ে মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷
বছর বত্রিশের ওই নির্যাতিতা বধূর বক্তব্য, "আমার বাবার বাড়ি দক্ষিণ 24 পরগনার সোনারপুরে ৷ ওদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বছরখানেক আগে বাবার বাড়ি চলে যাই ৷ কিছুদিন ধরেই বাড়ি ফিরে আসার জন্য ফোন করছিল স্বামী ৷ কিন্তু ভয়ে আসতে পারছিলাম না ৷ ছেলেমেয়েদের অনেকদিন দেখিনি ৷ শেষ পর্যন্ত ওদের জন্যই পাঁচদিন আগে স্বামীর ঘরে ফিরে আসি ৷ কিন্তু এতে যে হিতে বিপরীত হবে বুঝতে পারিনি ৷ সোমবার বিকেলে ওরা আমাকে দিয়ে জোর করে তালাকনামায় সই করিয়ে নেয় ৷ তারপর সন্ধেয় আমাকে বেধড়ক মারধর করে প্রাণে মারার চেষ্টা করে ৷ সুবিচার পেতে আমি মালদা থানার দ্বারস্থ হয়েছি ৷"
এদিকে অভিযুক্ত স্বামীর দাবি, "ও আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে নিজেই তালাকনামায় সই করেছে ৷ এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলছে ৷ আমি ওর গায়ে কোনওদিন হাত তুলিনি ৷ এক বছর ধরে বাবার বাড়িতে ছিল ৷ সেখানে শলাপরামর্শ করেই আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে ৷ পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে সত্যি বেরিয়ে আসবে ৷"
মালদা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "ওই বধূর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে ৷"