কলকাতা, 24 জুন: রাজ্যকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের সঙ্গে জল বন্টন চুক্তি সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিয়ে আগেই তৃণমূলের তরফ থেকে ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয়েছিল ৷ রাজ্যকে পাশ কাটিয়ে যেভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ফরাক্কা চুক্তি পুণর্নবিকরণ করেছে কেন্দ্র তা নিয়ে নিজের ক্ষোভ চেপে রাখেননি খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও ৷ এবার তিস্তা-ফরাক্কা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে 'কড়া চিঠি' দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
সোমবার নবান্নে পুরসভাগুলির সঙ্গে বৈঠকে জল বন্টন নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন মমতা। এদিন স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে তাঁর আপত্তি নেই। তবে রাজ্যকে বিক্রি করে দেওয়ায় সায় নেই তাঁর। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার জল বিক্রি করে দিচ্ছে।" উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে জল-বণ্টন সংক্রান্ত গঙ্গা-ফরাক্কা চুক্তি রয়েছে 2026 সাল পর্যন্ত। সোমবার 2 দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে ওই চুক্তি নবীকরণে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে খবর। যদিও তিস্তার জলবন্টন নিয়ে আলোচনার কথা জানা যায়নি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বাংলাকে বাদ দিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। বাংলাকে কিছুই জানানো হয়নি। জলের আরেক নাম জীবন ৷ কিন্তু যা চলছে আগামিদিনে উত্তরবঙ্গের মানুষ পানীয় জল পাবেন না। সবচেয়ে বড় কথা তিস্তায় জল নেই। গায়ের জোরে নর্থ বেঙ্গলে জিতেছে বলে ডিপ্রাইভ করা হচ্ছে।"
এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি কড়া চিঠি দিচ্ছি সোমবার। আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। তাদের সঙ্গে আমরা ছিটমহল চুক্তি করেছি ৷ ইন্দো বাংলাদেশ রেল সার্ভিসও চালু হয়েছে। বাস সার্ভিসও চালু হয়েছে। কিন্তু জল চুক্তি নিয়ে 1996 সাল থেকেই আমরা ভুক্তভোগী। আমাদের যে টাকা দেওয়ার কথা ছিল তাও দেওয়া হয়নি। এমনকী গঙ্গার ড্রেজিং পর্যন্ত করা হয়নি। সবটাই ডিস্টার্ব করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা হচ্ছে।"
গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে 1996 সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির মেয়াদই শেষ হওয়ার কথা 2026 সালে। এই আবহে গত শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে 'ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি' নবীকরণের জন্য 'যৌথ কারিগরি কমিটি' তৈরি করা হয়েছে বলে খবর। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দুই দেশ জল বণ্টন চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পথে এক পা এগোল বলেই মনে করা হচ্ছে। বাংলাকে আড়ালে রেখে এই কমিটি তৈরিতেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী।
ক্ষোভের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বাংলার জল বিক্রি করে দিল ওরা। এরপরও যদি কেন্দ্রীয় সরকারে না শোনে। একতরফাভাবে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে বাংলা এমনকী দেশজুড়ে আন্দোলন হবে।" মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "বাংলার জল বিক্রি করে দেওয়ার অর্থ আগামিদিনে সমস্যা আরও বাড়বে। মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে জলের তলায় তলিয়ে যাবে। আগামিদিনে কলকাতা পোর্টও নষ্ট হয়ে যাবে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা গঙ্গার জলে চলে যাবে।"