কলকাতা, 16 জানুয়ারি: রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবসই দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস। দিনকয়েক আগে এমনই মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার তীব্র প্রতিক্রিয়া দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, এমন মন্তব্য দেশবিরোধী ।
নবান্নে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, "এমন কথা যে শুনতে হবে সেটা ভাবতেও পারিনি। এভাবে চললে তো একদিন ভারতের নামও ওরা (বিজেপি-আরএসএস) ভুলিয়ে দেবে ! স্বাধীনতা আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বাংলা এবং পঞ্জাবের। বাংলা একসময় ভারতের রাজধানী ছিল। ভারত তখন অখণ্ড। দেশ 1947 সালের 15 অগস্ট স্বাধীন হয়। উনি (মোহন ভগবত) কেন এই মন্তব্য করেছেন সেটা আমি জানি না। আমি মনে করি, এটা দেশবিরোধী মন্তব্য। স্বাধীনতার আগে তো বটেই, পরেও কতশত মানুষ থেকে শুরু করে সেনা জওয়ান দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন । এসব করে দেশের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই ধরনের মন্তব্য বিপজ্জনক।"
বিতর্কের সূত্রপাত দিনকয়েক আগে । ইন্দোরের একটি সভায় যোগ দেন ভগবত । সেখানেই তিনি বলেন, "রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবসই দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস।" 2024 সালের 22 জানুয়ারি রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রামলালার প্রাণ-প্রতিষ্ঠার একবছর ঘিরে সাজো সাজো রব অযোধ্যায় । তিথি অনুযায়ী অবষৃশ্য 11 জানুয়ারি ছিল মন্দিরের উদ্বোধনের একবছর ৷ সেদিনও অনুষ্ঠান হয়েছে । 22 তারিখও রামলালাকে নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হবে দেশ । এমনই আবহে ভগবত জানান, এই বিশেষ দিনটিকে 'প্রতিষ্ঠা দ্বাদশী' হিসেবে পালন করা হোক। স্বাধীনতার আসল স্বাদ ওইদিনেই পেয়েছিল দেশ । দেশের সার্বভৌমত্বকে নতুন করে প্রতিষ্ঠাও দিয়েছিল এই দিনটি ।
আরএসএস প্রধানের এমন মন্তব্য ঘিরে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি থেকে শুরু করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন আগেই । এবার প্রতিবাদে সরব হলে মমতাও । এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "স্বাধীনতা আমাদের গর্ব। আপনারা কী মনে করেন ? যে কোনও দল বা সংগঠন চাইলেই কি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস যখন ইচ্ছে পাল্টে দিতে পারে ? এটা হয় না । দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন বহু মানুষ । আমরা সেই ইতিহাস কী করে ভুলে যাব ?"
এদিকে, ভগবতের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন সিপিআইএমএলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, "অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার দিনটিকে ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস বলে অভিহিত করেছেন মোহন ভাগবত। এতদিন ধরে আরএসএস যেভাবে ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাসকে অস্বীকার করে এসেছে ভগবত যে এখনও সেই পথেই হাঁটতে চাইছেন তা এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট।"