মালদা, 5 নভেম্বর: সত্যিই ধর্ষণ, নাকি ধর্ষণের কঠোর আইনকে হাতিয়ার করে প্রতিহিংসা পূরণের চেষ্টা ? এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে বধূর ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে এই প্রশ্ন জেলার পুলিশ মহলে ৷ স্থানীয় থানা কোনও পদক্ষেপ না-করায় সুবিচার পেতে ওই বধূ পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷ কিন্তু ঘটনার ঘনঘটায় একাধিক প্রশ্নের সামনে পুলিশ আধিকারিকরা ৷
থানায় দায়ের করা অভিযোগ পত্রে ওই বধূ উল্লেখ করেছেন, গত 31 অক্টোবর কালীপুজোয় রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ তিনি পুজোমণ্ডপে যাওয়ার জন্য শাড়ি পরছিলেন ৷ ঠিক সেই সময় এক সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁর ঘরে ঢুকে পড়েন ৷ তিনি নাকি তাঁদের পাড়ারই বাসিন্দা ৷ ওই সিভিককর্মী মুখ চেপে ওই বধূকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ৷ চারদিকে বাজির শব্দ থাকায় তাঁর চিৎকার কেউ শুনতে পাননি বলে দাবি করেন ওই বধূ ৷ পরে তিনি পরিত্রাহি চিৎকার শুরু করলে ওই যুবক নাকি সেখান থেকে পালিয়ে যান ৷ খানিক পরে লোকজন নিয়ে এসে তিনি বধূর পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালান বলে অভিযোগ ৷ সেই হামলায় তাঁদের বাড়ির অনেকেই জখম হয়েছেন ৷
বধূর দাবি, "গোটা ঘটনা জানিয়ে গত শনিবার আমি স্থানীয় থানায় ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে যাই ৷ প্রথমে পুলিশ আমার অভিযোগপত্র জমা নিতে চায়নি ৷ পরে জমা নিলেও কোনও পদক্ষেপ করেনি ৷ সম্ভবত একই থানায় কর্মরত থাকায় তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করছে পুলিশ ৷ তাই সুবিচার পেতে সোমবার আমি পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি ৷"
ঘটনাটি কিন্তু শুধুই ধর্ষণের অভিযোগে শেষ হয়নি ৷ ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, অভিযোগকারিণী ও অভিযুক্তের বাড়ি খুব কাছাকাছি ৷ কালীপুজোর সন্ধেয় বাজি ফাটানো নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা হয় ৷ সেই ঝামেলা মারামারি পর্যন্ত গড়ায় ৷ তাতে দুই পরিবারের সদস্যরাই আহত হয়েছেন ৷ ঠিক তার পরেই ধর্ষণের নতুন অভিযোগ ওঠে ৷ কিন্তু ঘটনার দু’দিন পর ওই বধূ কেন থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন, তা বুঝতে পারছেন না কেউ ৷ গ্রামবাসীদের মতে, ঘটনার 48 ঘণ্টা পর শারীরিক পরীক্ষা করেও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া কার্যত অসম্ভব ৷
এদিকে, অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের স্ত্রী জানাচ্ছেন, "কালীপুজোর রাতে দেদার শব্দবাজি ফাটাচ্ছিল ওরা ৷ আমার শ্বশুরমশাই তার প্রতিবাদ করেন ৷ এনিয়ে ঝামেলা শুরু হয় ৷ শ্বশুরমশাই উত্তেজিত হয়ে ওদের বাড়ির একজনকে ধাক্কা দেন ৷ এরপরেই ওরা শ্বশুরমশাইয়ের উপর লাঠি, লোহার রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ৷ তাঁর মাথায় আঘাত লাগে ৷ তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়ে ৷ ওই ঘটনায় আমরা স্থানীয় থানায় ওদের বাড়ির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ অভিযুক্তদের তালিকায় ওই বধূর ভাইয়ের নামও রয়েছে ৷ তারই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছে ৷ সে তার অভিযোগ পত্রে জানিয়েছে, আমার স্বামী নাকি রাত সাড়ে ন’টায় তাকে ধর্ষণ করেছে ৷ কিন্তু সেদিন রাত সাড়ে আটটা থেকে 10টা পর্যন্ত আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই গ্রামের মন্দিরে ছিলাম ৷ কালীপুজোয় সহযোগিতা করছিলাম ৷ আমি চাই, পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করুক ৷ তাহলেই সত্যি ঘটনা সামনে উঠে আসবে ৷"
জেলা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, "দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রথমে দু’তরফে দুটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৷ পরবর্তীতে ধর্ষণের অভিযোগও দায়ের হয় ৷ তিনটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে পৃথক পৃথক মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে ৷ অভিযোগকারিণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে ৷ তার রিপোর্ট অবশ্য এখনও পাওয়া যায়নি ৷"