মালদা, 18 সেপ্টেম্বর: আরজি করের জটে আটকে আইএমএ-এর মালদা শাখাও ৷ যেদিন আরজি করের সেমিনার হলে চিকিৎসক ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়, সেদিন সেখানে অনেক অবাঞ্ছিত লোকজন উপস্থিত ছিলেন ৷ যাঁদের সেখানে থাকার কথাই ছিল না ৷ এনিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেও আলোচনা হয়েছে ৷ সেই অবাঞ্ছিতদের মধ্যে অন্যতম আইএমএ মালদা শাখার সভাপতি তাপস চক্রবর্তী ৷ এই নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে মালদা আইএমএ-তে ৷
কী কারণে তিনি সেদিন ওই জায়গায় ছিলেন, তা তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁর সেসব তত্ত্ব মানতে নারাজ সংগঠনের মালদা শাখার অধিকাংশ সদস্য ৷ সেই কারণেই মালদা শাখার গভর্নিং বডির সদস্যরা তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে তাপস চক্রবর্তীকে সাময়িক অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন ৷ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্তবর্তীকালীন সভাপতির পদ দেওয়া হয় সায়ন্তন গুপ্তকে ৷
এদিকে কলকাতা থেকে ফিরে এসে তাপস চক্রবর্তী দাবি করেন, এভাবে তাঁকে অপসারণ করা যায় না ৷ এই সিদ্ধান্ত সংগঠনের সংবিধান বিরোধী ৷ তিনি আইএমএ-এর মালদা শাখার সভাপতি ছিলেন, এখনও আছেন ৷ তিনি সেই পদ থেকে সরছেন না বলে জানিয়ে দেন ৷ এরপরেই সংগঠনের মালদা শাখার একাধিক পদাধিকারী পদত্যাগ করেছেন ৷ আরও কিছু সদস্য পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন ৷ যদিও এসবকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নন তাপস চক্রবর্তী ৷ এই ডামাডোল পরিস্থিতিতে আইএমএ-এর মালদা শাখার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান চিকিৎসকদের একাংশ ৷
তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ এবং ক্রাইম সিনে তাপস চক্রবর্তীর উপস্থিতি নিয়ে মালদা জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ৷ বিশেষ করে জেলার চিকিৎসকরা এনিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন ৷ কেন তিনি সব জেনেও ক্রাইম সিনে উপস্থিত থাকলেন, তা নিয়ে সংগঠনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ৷ বিষয়টি মানতে না-পেরে সংগঠনের সহ সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তপন হালদার ৷ তাতেই টনক নড়ে সংগঠনের অন্য পদাধিকারীদের ৷
গত 7 সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি গভর্নিং বডির বৈঠক ডাকা হয় ৷ সভাপতির পদ থেকে সাময়িক অপসারণ করা হয় তাপস চক্রবর্তীকে ৷ কিন্তু তিনি নিজের চেয়ার ছাড়তে রাজি না-হওয়ায় গত শনিবার আইএমএ ভবনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকা হয়েছিল ৷ সেখানেও তাপস জানিয়ে দেন, তিনি পদত্যাগ করছেন না ৷ তাঁকে অপসারণ করার প্রশ্নও আসে না ৷ কারণ, এভাবে তাঁকে অপসারণ করা যায় না ৷ এরপরেই পদত্যাগ করেন সংগঠনের সহ সভাপতি হিমাচল দাস, অন্যতম সদস্য পীযূষকান্তি মণ্ডল-সহ আরও কয়েকজন ৷ জানা যাচ্ছে, আরও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক পদত্যাগ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷
পীযূষকান্তি মণ্ডল অবশ্য তাঁর পদত্যাগের কারণ হিসাবে ব্যক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন ৷ তাঁর বক্তব্য, "ব্যস্ত শিডিউলে এত বড় একটি সংগঠনের পদ সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না ৷ তাই পদত্যাগ করেছি ৷ এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই ৷" অন্যদিকে, হিমাচল দাস জানান, "শনিবারের বৈঠকের আলোচনার বিষয়টি পুরোপুরি সাংগঠনিক ৷ সেসব সংবাদমাধ্যমকে জানানো সম্ভব নয় ৷ তবে এখন যে আইএমএকে দেখছি, তা আমার পরিচিত নয় ৷ নতুন রূপের এই সংগঠনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছি না ৷ তাই পদত্যাগ করেছি ৷ পীষূষবাবুও পদত্যাগ করেছেন বলে শুনেছি ৷ কিন্তু তিনি কেন পদত্যাগ করেছেন, সেটা আমি বলতে পারব না ৷"
এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাপস চক্রবর্তীর বক্তব্য, "প্রক্রিয়া মেনে যে কেউ সংগঠন থেকে পদত্যাগ করতে পারেন ৷ তাতে কোনও সমস্যা নেই ৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি আইএমএ-এর মালদা শাখার সভাপতি ৷ কেউ পদত্যাগ করেছেন কি না, সভাপতি হিসাবে আমার জানা নেই ৷ আগামী শুক্রবার ফের গভর্নিং বডির বৈঠক ডাকা হয়েছে ৷ আশা করছি, সেই বৈঠকে সবকিছু জানা যাবে ৷"