শিলিগুড়ি, 10 জানুয়ারি: ইকো সেন্সেটিভ জোন নিয়ে জটিলতা অব্যাহত ৷ দু'দফার বৈঠকের পরেও ইকো সেন্সেটিভ জোন চিহ্নিত করা নিয়ে জটিলতা কাটানো গেল না ৷ শুক্রবার চা-বাগান মালিক, বিজ্ঞান মঞ্চ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে বসেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব ৷ এ দিনের বৈঠকেও সমস্যার সমাধান হয়নি৷
ফলে আগামী 21 জানুয়ারি ফের ইকো সেন্সেটিভ জোন নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে ৷ তবে, এদিনের বৈঠকে বিজ্ঞান মঞ্চ ও চা-বাগানের মালিকপক্ষের তরফে কিছু প্রস্তাব পুর আধিকারিক ও প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হয় ৷
অভয়ারণ্য কিংবা বনাঞ্চল সংলগ্ন ইকো সেন্সেটিভ জোনের জটিলতা কাটাতে 4 জানুয়ারি পর্যটন, বন আধিকারিক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল শিলিগুড়ি পুরনিগম ও দার্জিলিং জেলা প্রশাসন ৷ ওই বৈঠকে জটিলতা কাটেনি ৷ সমস্যা থেকে গিয়েছে চা-শিল্প ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টি-ট্যুরিজম নিয়ে ৷ কারণ, ওই দুই শিল্পের ক্ষেত্রেই ইকো সেন্সেটিভ জোন একটা বড় সমস্যা তৈরি করছে ৷
ফলে দ্বিতীয় দফায় শুক্রবার ফের বৈঠক ডাকা হয় ৷ যেখানে ঠিক হয় আলোচনায় উঠে আসা সমস্যা, সমাধান ও প্রস্তাব-পরামর্শ রাজ্য বন দফতর এবং কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রকে পাঠানো হবে ৷ সেই মতো সব যাচাই করে গেজেট নোটিফিকেশনের পর ইকো সেন্সেটিভ জোন নিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করবে রাজ্য সরকার ৷
প্রসঙ্গত, গত বছরের 6 সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয় ৷ সেখানে বলা হয় যে, সমস্ত বনাঞ্চল ও অভয়ারণ্যের সীমানা থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ইকো সেন্সেটিভ জোন ৷ ওই জোনের ভিতরে কোনোরকম নির্মাণ কাজ করা যাবে না ৷ আর সেই নির্দেশিকার জেরেই সমস্যা তৈরি হয় ৷ কেন্দ্রের সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় রাজ্য সরকার ৷ জোনের সীমানা কমিয়ে আনার আবেদন করে রাজ্য ৷
এরপর নভেম্বর মাসে ফের একটি নির্দেশিকা জারি করে জোনের সীমানা কমিয়ে এক কিলোমিটার করে কেন্দ্র ৷ এই নির্দেশিকার পরেও কোন সমস্যা ও জটিলতা থাকলে, তা জানাতে বলা হয় ৷ সেই মতো বৈঠকে বসে পুরনিগম ও জেলা প্রশাসন ৷
উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি পুরনিগমের একপাশে রয়েছে মহানন্দা অভয়ারণ্য ৷ বন বিভাগের তরফে পুরনিগম ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয় যে, এক কিলোমিটারের পরবর্তী অঞ্চলে 18 কিলোমিটার পর্যন্ত কোনোরকম নির্মাণ করতে হলে, প্রশাসন যেন পরিস্থিতি যাচাই ও বিবেচনা করে অনুমতি দেয় ৷
পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, মহানন্দা অভয়ারণ্য 162 বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ৷ তার এক কিলোমিটার ধরলে পুরনিগম ও জেলা প্রশাসনের প্রায় 407 বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইকো সেন্সেটিভ জোনের মধ্যে রয়েছে ৷
এ দিন বিজ্ঞান মঞ্চের কার্যকরী সভাপতি গোপাল রায় বলেন, "ফুলবাড়ি ওয়েটল্যান্ড, নকশালবাড়ির টুকুরিয়াঝাড় জঙ্গলকে ইকো সেন্সেটিভ জোনের অন্তর্ভুক্ত করা হোক ৷ পাশাপাশি, মনিটরিং কমিটিতে জঙ্গলের আশেপাশে থাকা জনবসতির একজন করে প্রতিনিধি হিসেবে রাখার কথা ৷ চা-বাগানের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা রয়েছে। যেখানে কেন্দ্র সরকার জঙ্গল থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত ইকো সেন্সেটিভ জোন চিহ্নিত করেছে ৷ সেটা কমিয়ে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ পাঁচশো মিটার করার প্রস্তাব দিয়েছে ৷"
সলিটরি নেচার অ্যান্ড অ্যানিমেল প্রোটেকশনের সম্পাদক কৌস্তভ চৌধুরী বলেন, "ইকো সেন্সেটিভ জোনের পরে 18 কিলোমিটার এলাকাও বলতে গেলে একপ্রকার সংবেদনশীল ৷ সে কারণে আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি, যাতে ওই এলাকার মধ্যে কোনোরকম নির্মাণ করতে গেলে, তা যেন যাচাই করা হয় ৷ তবে, পাঁচ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে এক কিলোমিটার করাটা ঠিকই হয়েছে ৷ কারণ, পাঁচ কিলোমিটার অনেকটা এলাকা ৷"
হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "ইকো সেন্সেটিভ জোনের ক্ষেত্রে দেখতে গেলে, চা-বাগান ও টি-ট্যুরিজম অনেকটা জায়গায় রয়েছে ৷ সেক্ষেত্রে আমরা চাই যে পর্যটন হোক ৷ তবে, পরিবেশকে বাঁচিয়ে রেখে সব করতে হবে ৷"