পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

প্রশ্ন স্ক্যান করতেই অঙ্ক কষে দিল এআই, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর কাণ্ড দেখে তাজ্জব শিক্ষকরা - MADHYAMIK EXAMINATION 2025

ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার বড়তলা হাইস্কুলে ৷ ওই পড়ুয়া দক্ষিণ কলকাতার বদরতলার হাইস্কুলে ৷

Representative Image
প্রশ্ন স্ক্যান করতেই অঙ্ক কষে দিল এআই, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর কাণ্ড দেখে তাজ্জব শিক্ষকরা (প্রতীকী ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 22, 2025, 8:44 PM IST

কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি: জেমিনি অঙ্ক কষে দিতে পারবে ? কাটা কাটা শব্দে উত্তর এল, "হ্যাঁ, আমি অঙ্ক পারি । কী অঙ্কের উত্তর চাও তুমি ?’’

ব্যস ! অঙ্কের কোশ্চেন লিখে দিতেই মূহূর্তে গড়গড় উত্তর লিখে দিল এআই অ্যাপ ৷ টুকলি করার আধুনিক এই পদ্ধতি দেখে তাজ্জব তামাম শিক্ষামহল । এটা শুধু চমকপ্রদ নয়, আগামী প্রজন্মের জন্য বিপজ্জনকও বটে ।

বিশ্বজুড়ে থাবা বসিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা । এবার মাধ্যমিকের আঁতুরঘরেও ঢুকে পড়ল এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা । আর মোবাইলে সেই অ্যাপ ব্যবহার করে অঙ্ক পরীক্ষা দিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেল এক ছাত্র ৷ দক্ষিণ কলকাতার বড়তলা পরীক্ষা কেন্দ্রে এমন ঘটনায় মাধ্যমিকের বোর্ডের কর্তারা তো বটেই, তামাম শিক্ষামহল হতবাক ।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে খবর, দক্ষিণ কলকাতার বদরতলার হাইস্কুলের এক পড়ুয়া পরীক্ষা দিচ্ছিলেন বড়তলা হাইস্কুলে । তিনি অঙ্ক পরীক্ষার দিন কঠিন নজরদারি এড়িয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন । কোশ্চেন পেপার হাতে পাওয়ার পর সেই প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বা এআই মোবাইল অ্যাপে আপলোড করেন । মূহূর্তে মিলেও যায় উত্তর । তা দেখে লেখাও শুরু করেছিলেন ওই ছাত্র । কিন্তু পরীক্ষা হলের পর্যবেক্ষকের নজর এড়ায়নি বিষয়টি । তিনি ছাত্রটিকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন । প্রাথমিকভাবে বোঝা গিয়েছিল ওই ছাত্র মোবাইল দেখে লিখছেন । কিন্তু মোবাইল পরীক্ষা করতেই চোখ কপালে ওঠে পর্যবেক্ষকের । বিষয়টি তড়িঘড়ি বোর্ড কর্তাদের জানান তিনি । এরপরেই ওই ছাত্রের অঙ্ক পরীক্ষা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয় ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরীক্ষা দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে । প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা বাইরে পাঠানোর ঘটনা সামনে এসেছে বেশ কয়েকটি । শনিবার মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে সম্পূর্ণ রিপোর্ট পেশ করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ৷

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী (ফাইল ছবি)

তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই বছর প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে সাফল্য এসেছে । যদিও পরীক্ষা চলাকালীন এই বছর উদ্ধার হয়েছে 19টি মোবাইল ফোন । একজনের থেকে উদ্ধার হয়েছে স্মার্টওয়াচ । যার জন্য এই বছর বাতিল হয়েছে মোট 20 জনের পরীক্ষা । তার মধ্যে মোট ছ’জনের ফোন থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রশ্নপত্রের ছবি । অঙ্ক পরীক্ষার দিন একজন পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে পাঠিয়েছিলেন সিনিয়র পড়ুয়াকে । অন্যদিকে আরেকজন প্রশ্নপত্র ছবি তুলে পাঠিয়েছে বন্ধুর প্রেমিককে । অন্যদিকে আর তিনজন পরীক্ষার্থী ছবি তুলে পাঠিয়েছেন গৃহশিক্ষককে ।

তবে এই বছর একাধিক জায়গায় প্রশ্নপত্রের ছবি তোলার ঘটনা ঘটে থাকেলও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি বলে পর্ষদ কর্তাদের দাবি । যদিও 20টি ফোন কী করে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকল, তা নিয়ে পর্ষদ বিভাগীয় তদন্ত করবে । মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "বিক্ষিপ্ত মোবাইল ফোন ধরা পড়া ছাড়া আর কোনও ঘটনা ঘটেনি । এইবছর পরীক্ষা সুষ্ঠভাবে হয়েছে । এর জন্য পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত থাকা সকল ব্যক্তিদের আমার ধন্যবাদ । পরীক্ষা শেষের 90 দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা হবে । গতবছর পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছিল 74 দিনে ।"

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই অ্যাপের সাহায্য নিয়ে ছাত্রের পরীক্ষা দেওয়ার প্রসঙ্গে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, "ছাত্রছাত্রীরা এই বিষয়ে অনেকটাই জানে । কিন্তু এই সমস্ত বিষয়ে সেগুলোকে ব্যবহার না করে যদি ভালো কাজে লাগায়, তাহলেই ভালো । এআই ব্যবহার করে জ্ঞান অর্জন করা হল না । শুধুমাত্র ওই সময়টুকু উতরে যাওয়া হল । কিন্তু এই এআই থেকে অনেক কিছু শেখার আছে । সেই ভালোটা শেখা উচিত । না হলে বিপদে পড়বে ।"

ডিরোজিও ভবন৷ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কার্যালয়৷ (ফাইল ছবি)

অন্যদিকে পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, "বিজ্ঞান থেমে থাকে না । তার আবিষ্কারগুলোকে আমাদের আশীর্বাদ হিসেবে মেনে এগিয়ে চলতে হবে । এআই-ও তেমনই একটি বিষয় । আমাদেরকে শেখাতে হবে এই বিষয়টির ভালোর দিকগুলো । ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এআইকে ব্যবহার করে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সমাজকে, তা শেখাতে হবে । এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের সেই মতো পরিকাঠামো নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে ।"

বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে বিষয় হিসাবে পড়ানো হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা । বহু স্কুলেই এই বিষয়ে পড়াশুনা চলছে । পার্ক ইনস্টিটিউশনের এই বিষয়টি নিয়ে পড়ানো হচ্ছে । সেই বিষয়ের শিক্ষক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, "বিজ্ঞানকে মানুষ তার স্বার্থে ব্যবহার করে । এবার সেটা সৎ নাকি অসৎ প্রশ্নের মুখে থাকে । অন্য বোর্ডে এআই আরও ছোট ক্লাস থেকেই পড়ানো হয় । আমাদেরও সেটা করতে হবে । এর পাশাপশি আমাদের শেখাতে হবে কোনটা উচিত আর কোনটা নয় । কারণ, এআই ভবিষ্যৎ । তাকে কাজে লাগিয়ে অসৎ কাজ করলে সেটার দিকেও নজর দিতে হবে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details