মালদা ঘিরে নয়া আশঙ্কা (ইটিভি ভারত) মালদা, 17 মে: প্রকৃতির রোষে প্রাণ গিয়েছে 11 জনের । সামান্য সময়ের মধ্যে এতগুলি মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসনকে ৷ সকলেই জানতে চান এমন ঘটনা আর ঘটবে কি না। প্রকৃতির রোষানলে আবার পড়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে জেলার। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, কয়েকদিন পর ফের এমন ঘটনা ঘটতেই পারে এই জেলায় ৷ তার মূল কারণ দূষণ ৷ কিন্তু কেন শুধুই মালদা? কেন আশেপাশের জেলায় এমন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেনি?
এর মূল কারণ হিসেবে বজ্রগর্ভ মেঘের সঙ্গে দূষণের গভীর সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরিজিৎ দাস ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "এপ্রিল ও মে মাসে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী সৃষ্টির আদর্শ পরিবেশ থাকে ৷ কালবৈশাখী বলতে আমরা ঘণ্টাখানেক ঝড় ও বৃষ্টিকেই বুঝি ৷ তারপর ফের আবহাওয়া আগের মতো হয়ে যায় ৷ এখন ঝড় ও বৃষ্টির পরিমাণ আগের মতো না হলেও বজ্রপাতের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে ৷ আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে ৷ বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়েছে ৷ এর জন্য দায়ী মানুষের খামখেয়ালি আচরণ ৷"
তিনি আরও বলেন, "বজ্রপাতের পিছনে দূষণ অন্যতম কারণ ৷ শহর ও তার আশাপাশের এলাকায় যানবাহন থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাউড এবং সালফার ডাই অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয় ৷ শুধু তাই নয়, নির্মাণ কাজ থেকে বেরোনো ধুলিকণাও দূষণের কারণ ৷ একে বলা হয় সাসপেন্ডেড পার্টিকুলার ম্যাটারস ৷ পিএম 2.5 এবং পিএম 10 ৷ এর সঙ্গে যখন বিভিন্ন দূষিত গ্যাস মেশে তখন বাতাসের তাপ গ্রহণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় ৷ এই পরিস্থিতিতে কোনও কারণে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে বজ্রগর্ভ অর্থাৎ কিউমিউলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয় ৷ এই ঘটনাটা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে হামেশাই ঘটছে ৷"
অধ্যাপক অরিজিৎ আরও জানান, এই কিউমিউলোনিম্বাস মেঘ থেকে ঝড় ও বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও বজ্রপাত বেড়ে যায় ৷ যেহেতু দূষণ অনিয়ন্ত্রিত, তাই এই পরিস্থিতি কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না ৷ এই দূষণ বৃদ্ধিতে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারও সহায়তা করে ৷ মালদা জেলায় বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেশি ৷ মালদার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ আরও কিছু এলাকায় এই ঘটনা ঘটছে ৷ এতে প্রাণহানির আশঙ্কাও বাড়ছে ৷ মালদার বাতাসে দূষণ কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। আগামী 7 থেকে 15 দিনের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে ৷"
আবহাওয়া দফতরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা ড. গোপীনাথ রাহা বলেন, "এবার মালদা জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি হয়নি ৷ বেশিদিন বৃষ্টি না হলেই এই সমস্যা দেখা দেয় ৷ মালদায় গরমের মাত্রা অনেক বেশি ছিল ৷ এই পরিস্থিতিতে যখনই জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে, বাতাসে একটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ৷ প্রথমত, বেশি তাপমাত্রা এবং দ্বিতীয়ত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, এই দুটি বিষয়ের উপরেই বাতাসে অস্থিরতা কতটা তৈরি হবে, তা নির্ভর করে ৷ দীর্ঘদিন ধরে মালদায় বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসের অস্থিরতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এখন জলীয় বাষ্প ঢুকতেই সেখানে উলম্বভাবে দীর্ঘ উচ্চতাসম্পন্ন বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছে ৷ এতে বাজের মারণ ক্ষমতাও বেড়েছে ৷" ইতিমধ্যেই, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক সোমনাথ দত্ত জানিয়েছেন, মালদার ঘটনা চিন্তার বিষয় ৷ পুরো বিষয়টি পর্যালোচনায় রয়েছে ৷ কারণ অনুসন্ধানের জন্য নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন
- দূষণ থেকেই বাড়ছে বজ্রপাত, মালদায় 12 জনের মৃত্যুতে চিন্তিত আবহবিদরা
- বজ্রপাতের সতর্কতা, পারদ চড়লেও আশা জাগাচ্ছে বর্ষার আগমনবার্তা
- মালদায় বজ্রপাতে মৃত 12, শোক প্রকাশ মমতার