কলকাতা, 26 জুন: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া ধমকের পর অবশেষে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন । মহানগরের সরকারি হাসপাতালগুলিতে দালালরাজের অভিযোগ বহুদিনের ৷ তার তদন্তে নেমে এবার 8 জনকে আটক করল কলকাতা পুলিশ ৷ মঙ্গলবার থেকে গড়িয়াহাট, ধর্মতলা নিউমার্কেট-সহ একাধিক জায়গায় বেআইনি হকারদের উচ্ছেদ করার কাজ শুরু করেছে লালবাজার ৷ পাশাপাশি এবার হাসপাতালে দালালরাজের তদন্তে নামল কলকাতা পুলিশ । মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের আওতাধীন মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম-সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালান লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারা । এই অভিযানে মোট আটজনকে আটক করেছেন তাঁরা ৷
লালবাজার সূত্রে খবর, ধৃতদের মধ্যে তিনজন অ্যাম্বুলেন্স চালক রয়েছেন । ধৃত 8 জনকেই স্থানীয় থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে । মূলত হাসপাতালের রোগীরা আসেন তাঁদের পরিবারকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে ৷ অভিযোগ, এই দালালরা টাকার বিনিময়ে হাসপাতালের সরকারি পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখান রোগীর পরিবারকে অভিযুক্তরা ।
পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারা সাদা পোশাকে হাজির হয়েছিলেন শহরের সরকারি হাসপাতালের বাইরে ও ভিতরে । এরপরই তদন্তকারীরা বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসার জন্য আশা রোগীদের আত্মীয়ের সঙ্গে এই এজেন্ট বা দালালদের দেখতে পান । অনেকে রোগীর জন্য পরিষেবা খুঁজছেন এবং সরকারি হাসপাতাল থেকে পাওয়া বিনামূল্যে বেড তিন থেকে চার হাজার টাকার বিনিময়ে রোগীর আত্মীয়দের তুলে দিচ্ছিল দালালরা ৷ এমনই জানতে পারেন গোয়েন্দারা। এরপরই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে মোট আটজনকে এখনও পর্যন্ত আটক করা হয়েছে । তিনজন অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তাঁরা রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে বেআইনিভাবে বেশি ভাড়া নিয়ে পরিষেবা দিচ্ছিলেন ।
সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের বিভিন্ন বেআইনি নির্মাণ থেকে শুরু করে হকার এবং হাসপাতালে দালালরাজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন । তিনি শাসকদলের একাধিক নেতা, কাউন্সিলর থেকে পুলিশ আধিকারিকদের কাজ নিয়েও প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেছিলেন, কেন পুলিশ সবকিছু দেখেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে? এরপরই কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েলকে সাফ নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি জানান, এই সকল বেআইনি কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে পুলিশি যেন আরও সক্রিয় হয় । মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরেই দেখা গেল শহরজুড়ে বিভিন্ন অভিযানে নামল পুলিশ ।
উল্লেখ্য, শুধু কলকাতা নয়, বিধাননগর কমিশনারেটের আওতাধীন বিভিন্ন জায়গায় থেকে বেআইনি নির্মাণ ও সরকারি জমি দখলের অভিযোগ আসছে । মুখ্যমন্ত্রী কানে আসে সেই কথাও ৷ এরপরই বিধাননগর কমিশনারেটের নগরপাল গৌরব শর্মাকে তড়িঘড়ি সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি পুলিশের ঘনিষ্টমহলের । যদিও নবান্নের তরফে জানানো হয়েছিল, এটি কেবল একটি রুটিন বদলি ছাড়া আর কিছুই নয় ।