মেদিনীপুর, 16 জানুয়ারি: এবার আন্দোলনে নামতে চলেছেন মেদিনীপুর কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা ৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 12 জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেছেন ৷ এই সাসপেনশন অর্ডারের সঙ্গে এফআইআর করার নির্দেশও দিয়েছে রাজ্য সরকার ৷ এর ফলে আগামিকাল, 17 জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করতে চলেছে অ্যানেস্থেশিয়া ও গায়নেকোলজিস্ট- দু'টি বিভাগের 22 জন চিকিৎসকরা ৷
গত শুক্রবার, এসএসকেএম হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হয় তিন প্রসূতি ৷ এর মধ্যে আজই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয়েছে এক সদ্যোজাতের ৷ প্রসূতি মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে এবং পাশাপাশি তদন্ত করছে সিআইডি ৷
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামিকাল, শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্ম বিরতিতে নামছেন দুই বিভাগের চিকিৎসকরা ৷ এর ফলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৷
গত বুধবার, 8 জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে 5 জন প্রসূতি অস্ত্রোপচারের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ পরে 10 জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক প্রসূতি মামনি রুইদাসের মৃত্যু হয় ৷ মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়া হওয়ার ফলে এই ঘটনা বলে জানা গিয়েছে ৷ চিকিৎসদের গাফিলতিতেই মামনি রুইদাসের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে ৷
এক প্রসূতির মৃত্যুর পাশাপাশি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও কয়েকজন প্রসূতি ৷ তাঁদের মধ্যে তিনজনকে গ্রিন করিডর করে কলকাতার এসএসকেএম হাসপতাালে নিয়ে আসা হয় ৷ তাঁরা এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৷ এরপরই তড়িঘড়ি 13 জনের একটি স্বাস্থ্য কমিটিকে মেদিনীপুরে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এরই সঙ্গে তদন্ত শুরু করে সিআইডি ৷
এর মধ্যে আজ সকালে আরেক প্রসূতির সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ এরপর যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখে এদিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে মেদিনীপুরের হাসপাতাল সুপার, একজন আরএমও এবং অন্য 10 জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করেন ৷ পাশাপাশি তাঁদের নামে থানায় এফআইআর করার নির্দেশও দেন ৷
সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসকদের তালিকায় রয়েছেন- মাতৃমা বিভাগে ইউনিট 1সি-র বেড ইনচার্জ দিলীপ পাল, সিনিয়র চিকিৎসক হিমাদ্রি নায়েক, আরএমও সৌমেন দাস, অ্যানাস্থেশিস্ট পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়, পিজিটি প্রথম বর্ষের চিকিৎসক মৌমিতা মণ্ডল, পূজা সাহা, ইন্টার্ন চিকিৎসক সুশান্ত মণ্ডল, পিজিটি তৃতীয় বর্ষের চিকিৎসক জাগৃতি ঘোষ, ভাগ্যশ্রী কুন্ডু, পিজিটি প্রথম বর্ষের অ্যানাস্থেশিস্ট মণীশ কুমার, বিভাগীয় প্রধান মহম্মদ আলাউদ্দিন, হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউত ৷
চিকিৎসক দিলীপ পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওই দিন হাসপাতালের বাইরে অস্ত্রোপচার করছিলেন ৷ বাকিদের কাজে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করেছে স্বাস্থ্য দফতর ৷ এই ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৷ বিকেলের পর থেকে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে ভিড় করতে থাকেন জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ এরপর তাঁরা সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন যতক্ষণ না সঠিক তদন্ত হচ্ছে এবং তাঁদের সাসপেনশন রদ করা হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন ৷ এদিন আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, এত তাড়াতাড়ি তদন্ত করে সাসপেন্ড করা যায় না ৷ তাঁরা এখন কারও কথাই শুনবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ৷