কলকাতা, 5 জুন:ইংরেজি ছবি 'গানস অফ নাভারোন'-এ এক সেনাপতিকে পদোন্নতির জন্য নিয়ে আসা হয় নেপোলিয়নের কাছে । এবং বলা হয় যে তিনি খুবই দক্ষ সেনাপতি । এই কথায় নেপোলিয়ন জিজ্ঞেস করেন, "সেনাপতি যে দক্ষ, সে তো বুঝলাম কিন্তু তিনি কি ভাগ্যবান (পয়া) ?" এই লাক ফ্যাক্টরটাই কি কাজ করেছে রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের ক্ষেত্রে ? কারণ বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পর তাঁর বিস্ফোরক দাবি, সংগঠন তাঁকে সহযোগিতা করেনি । তাঁর কথায়, দলের ভেতরে ও বাইরে অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তাঁর উপর আস্থা রেখেছে ।
মঙ্গলবার রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় যে, মাত্র 12টি আসন পেয়ে বঙ্গে ধরাশায়ী গেরুয়া শিবির । বিজেপির ঝুলিতে আসা 12টি আসনের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে নিজের আসন ফের ধরে রেখেছেন জগন্নাথ সরকার । তাঁর প্রাপ্ত ভোট 7 লাখ 82 হাজার 396 ৷ তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথা বর্তমানে তৃণমূলের মুকুটমণি অধিকারী । তাঁর বিরুদ্ধে জগন্নাথ সরকারের অভিযোগ, অনেক চেষ্টা করে, ভুয়ো কাউন্টিং এজেন্ট ঢুকিয়েও তাঁর জয়কে রুখতে পারেননি মুকুটমণি অধিকারী । নাম না-করে এ দিন মুকুটমণি অধিকারীকে কটাক্ষ করে জগন্নাথ সরকার বলেন যে, "জগন্নাথ সরকার যাতে টিকিট না-পান তিনি সেই চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তারপরে জগন্নাথ সরকার যখন টিকিট পেয়ে গেলেন তখন তিনি দল ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে যোগ দিলেন ।"
নিজের দলের কর্মীদের বিরুদ্ধেও এ দিন বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন বিজয়ী বিজেপি প্রার্থী ৷ তিনি জানান, দলের মধ্যে এবং দলের বাইরে থেকে বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও রানাঘাটের মানুষ তাঁর উপরেই ভরসা করেছেন । তিনি মনে করেন যে, যেহেতু তিনি তাঁর কেন্দ্রে মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন, তাই মানুষ তাঁকে মন খুলে ভোট দিয়েছেন । তবে সংগঠন তাঁকে সহযোগিতা করেনি । তাঁর কথায়, তৃণমূল কংগ্রেস যে বিরোধিতা করবে সেটাই তো স্বাভাবিক ৷ কিন্তু তাঁর দলের মধ্যেও বহু মানুষ তাঁর বিরোধিতা করেছেন ৷ তবুও দলের নেতৃত্ব তাঁর উপরই আস্থা রেখেছিল ।
তাঁর জয়ে অযোধ্যার রাম মন্দিরের ভূমিকাও যথেষ্ট বলে দাবি করেন জগন্নাথ সরকার ৷ তাঁর মতে, উত্তরপ্রদেশে অযোধ্যায় বিজেপির রাম মন্দির ফ্যাক্টর সে রকম ম্যাজিক দেখাতে না পারলেও, শ্রীরাম ফ্যাক্টর কিন্তু রানাঘাটে অনেকটাই সুবিধা করে দিয়েছে তাঁকে ৷ অন্যদিকে, রানাঘাটের মতুয়া ভোট ব্যাংকও তাঁর জয়ে অক্সিজেন জুগিয়েছে বলে জানান তিনি ৷
নদিয়ার রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিধানসভা আসনগুলি হল - রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম, রাণঘাট দক্ষিণ, নবদ্বীপ, শান্তিপুর, কৃষ্ণগঞ্জ এবং চাকদা । একদিকে মহাপ্রভু চৈতন্যের জায়গা অর্থাৎ একটা বড় সংখ্যক হিন্দু ভোটব্যাংক, অন্যদিকে মতুয়া ভোটব্যাংক । প্রসঙ্গত, শেষ লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট থেকে জগন্নাথ সরকারই জয়লাভ করেছিলেন । সেবারেও রেকর্ড সংখ্যক ভোট পান তিনি ৷ তৃণমূল প্রার্থী রূপালী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জগন্নাথ সরকার পেয়েছিলেন 7 লক্ষ 79 হাজার 767 ভোট ৷