পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বাংলায় শক্তিবৃদ্ধিতে আইএসআই-এর ভরসা এবিটি-জেএমবি, কেন্দ্র-রাজ্য গোয়েন্দা বৈঠকে উঠে এল নয়া তথ্য - INTELLIGENCE MEETING

সম্প্রতি রাজ্য ও কেন্দ্রের গোয়েন্দাদের মধ্যে সমন্বয় বৈঠক হয় ৷ সেই বৈঠকেই আইএসআই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ৷

Intelligence Meeting
বাংলায় শক্তিবৃদ্ধিতে আইএসআই-এর ভরসা এবিটি-জেএমবি (প্রতীকী ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 24, 2025, 8:31 PM IST

কলকাতা, 24 ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশ অশান্ত হওয়ার পর থেকেই সেখানে আইএসআই-এর প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা করছিলেন গোয়েন্দারা ৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেও পাকিস্তানের এই গুপ্তচর সংস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, এমনই খবর পৌঁছেছে গোয়েন্দাদের কানে ৷ বিষয়টি কতটা গুরুতর ? আইএসআই বাংলায় কতটা জাল বিস্তার করতে পেরেছে ? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা ৷

সেই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে সম্প্রতি রাজ্য ও কেন্দ্রের সমন্বয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ৷ সেখানে রাজ্যের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা যেমন উপস্থিত ছিলেন, তেমনই হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ৷ কী আলোচনা হল সেই বৈঠকে ? বাংলায় আইএসআই-এর গভীরতা নিয়ে কী কী ইনপুট গোয়েন্দাদের দু’পক্ষের তরফে আদানপ্রদান হল ? এই প্রশ্নগুলির উত্তর নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা ৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, "আগে ছ’মাস পর পর এই ধরনের বৈঠক হতো । পরে তা বহুকাল বন্ধ ছিল । তবে সম্প্রতি এই রাজ্যে একাধিক জঙ্গির আনাগোনার বিষয় সামনে আসার পরে আবার এই ধরনের বৈঠক নতুন করে শুরু হয়েছে ।’’

যদিও গোয়েন্দাদের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, বৈঠকে আইএসআই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে ৷ পাক গুপ্তচর সংস্থা যে বাংলায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে, তা নিয়ে নিশ্চিত গোয়েন্দারা ৷ যদিও এখানে সংগঠন বৃদ্ধি করার জন্য তারা নির্ভর করছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি এবং আনসারুল্লা বাংলা টিম বা এবিটি-র উপর ৷

গত কয়েকমাসে বাংলা থেকে বাংলাদেশের এই জঙ্গি সংগঠনগুলির বেশ কয়েকজন সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন ৷ এসটিএফের হাতে জেএমবি ও এবিটি-র স্লিপার সেলের যে সদস্য়রা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের কাছ থেকে টাইমার বোমা বানানোর সরঞ্জাম, তার-সুইচ, স্প্লিন্টার-সহ বহু জিনিসপত্র । গোয়েন্দাদের দাবি, এগুলি ব্যবহার করতে গেলে আইএসআই-এর থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হয় ৷ এই জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল ৷

এর থেকেই গোয়েন্দাদের ধারণা যে আইএসআই ক্রমশ বাংলায় সক্রিয় হতে চাইছে ৷ যদিও গত কয়েকমাসে এসটিএফের লাগাতার অভিযানে তাদের সক্রিয়তা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে ৷ কিন্তু তারা আগামিদিনে ফের সক্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা ৷ আইএসআই-এর সেই ছক বানচাল করতে কী কী পদক্ষেপের প্রয়োজন, সেটাও আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে ৷

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে ৷ বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে সন্দেহভাজনদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে বলা হয়েছে ৷ তাছাড়া বীরভূম, মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনার মতো জেলার নির্দিষ্ট এলাকায় একাধিক সামাজিক সংগঠনের কার্যকলাপে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে । দেখতে হবে, ওপার থেকে এপারে কেউ এসে আশ্রয় নিয়েছে কি না, এপারের কেউ জঙ্গি কার্যকলাপের চক্রে জড়িয়ে পড়েছে কি না !

এছাড়া গোয়েন্দাদের বৈঠকে আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে ৷ যা বাংলার বাসিন্দাদের কাছে আপাত স্বস্তির হতে পারে ৷ কারণ, গোয়েন্দারা মনে করছেন যে আইএসআই এখানে ঘাঁটি গাড়তে চাইলেও বাংলায় ভয়াবহ কোনও কাণ্ড নাও ঘটাতে পারে ৷ যেহেতু বাংলা সীমান্তবর্তী রাজ্য, তাই সারা ভারতে জঙ্গিদের ছড়িয়ে দিতে বাংলাকে ট্রানজিট করিডর হিসেবে ব্যবহার করতে পারে আইএসআই ৷ উত্তর-পূর্ব ভারত বা দেশের অন্য অংশে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে তারা ৷ কিন্তু সেটাও যাতে তারা করতে না পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছেন গোয়েন্দারা ৷

রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের সমন্বয় যত গভীর হবে, ততই এই ধরনের কার্যকলাপে উৎস সন্ধান সহজ হবে বলে মনে করে পুলিশ মহল ৷ তাই অনেকেই কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের এই সমন্বয় বৈঠককে সাধুবাদ জানিয়েছেন ৷

রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি নজরুল ইসলাম ইটিভি ভারতকে বলেন, "এই ধরনের বৈঠক হওয়া ভালো । রাজ্যে এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে তাদের দায়িত্ব তারা যেন সেই সংক্রান্ত বিষয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে জানায় । অবশ্য এই একই দায়িত্ব কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থারও আছে ৷ তাদের নজরেও এই ধরনের কোনও ঘটনা এলে, তা অবিলম্বে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগকে জানানো উচিত ।’’

ABOUT THE AUTHOR

...view details