নয়াদিল্লি, 19 ডিসেম্বর: ওএমআর শিট থেকে শুরু করে সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি- এসএসসি দুর্নীতি মামলায় একাধিক প্রশ্নে রাজ্যকে বিদ্ধ করল সুপ্রিম কোর্ট ৷ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে প্রায় 26 হাজার চাকরি বাতিলের মামলার শুনানি চলছিল দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে ৷
গত 22 এপ্রিল এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ 25,573 জনের চাকরি বাতিলের পক্ষে রায় দেয় ৷ স্কুল সার্ভিস কমিশনের 2016 পুরো প্যানেল (গ্রুপ-সি, ডি, নবম-দ্বাদশ) বাতিল করেন তাঁরা ৷ 281 পাতার রায়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নয়া টেন্ডার ডেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশও দেয় আদালত ৷ এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ৷
সেই মামলার শুনানিতে এদিন রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী এসএসসির বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করেন ৷ সেই রিপোর্ট দেখেন দুই বিচারপতির বেঞ্চ ৷ তাঁরা আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদীকে বলেন, "আপনারা সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি করেছিলেন কেন ? এর কারণ কী ?"
এর জবাবে আইনজীবী সওয়াল করেন, কমিটি কিছু বেনিয়ম পেয়েছে ৷ কিন্তু তা সিবিআই-এর মতো বিস্তারিত নয় ৷ বেঞ্চ জানায়, "তাহলে বেনিয়ম হয়েছিল ৷ এই পরিস্থিতিতে যাঁদের বেআইনিভাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তাঁদের বাদ দেওয়ার বদলে আপনারা সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি করলেন ? আপনি যদি খুঁজে পান যে বেনিয়ম হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনি কি প্রথমে তাঁদের ছুড়ে বাইরে ফেলে দেবেন না ?" পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী তখন জানান, ওয়েট-লিস্টে থাকা প্রার্থীদের নিযুক্ত করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল ৷ এরপর দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, "ঠিক ৷ এটাই কারণ যে, আপনারা বেআইনি প্রার্থীদের বাইরে বের করতে চাননি ৷"
এর আগে 7 মে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয় ৷ পাশাপাশি সিবিআই-কে এই বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দেয় ৷ শীর্ষ আদালত উল্লেখ করে, 2022 সালের 19 মে রাজ্য সরকার ওয়েট-লিস্ট তালিকায় থাকা প্রার্থীদের জন্য শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে 6 হাজার 861 টি সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি করে ৷ আদালত আরও জানায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) অনুমোদন অনুযায়ী ওয়েট-লিস্টে থাকা প্রার্থীদের সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ গত 7 মে শীর্ষ আদালত, হাইকোর্ট যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, তা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ৷ কিন্তু পাশাপাশি জানিয়ে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না ৷
এদিনের শুনানিতে বেঞ্চ প্রশ্ন করে, "তালিকা থেকে বৈধ ও অবৈধ নিয়োগ আলাদা করা সম্ভব নয়, রাজ্য সরকার কি এই তত্ত্ব সমর্থন করে ?" সরকারের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী জানান, রাজ্য বৈধ-অবৈধ আলাদা করার পক্ষে ৷ আইনজীবী জানান, বেআইনি নিয়োগ খুঁজতে কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই-কে প্রয়োজনে প্রত্যেক প্রার্থীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশও দিয়েছিল ৷
আসল ওএমআর শিট কেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তার জন্য বেঞ্চ বিস্ময় প্রকাশ করে ৷ প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ জানায়, "ওএমআর শিটই তো আসল কাগজ ৷ ওটাই তো প্রাথমিক প্রমাণ ৷ প্রমাণ বা মেন পেপারের উপর কোনও কারচুপি হলে তা ওএমআর শিটে ধরা পড়ার কথা ৷ তাহলে সার্ভারে থাকা স্ক্যান করা ওএমআর শিট এবং আসল ওএমআর শিট এক কি না, এটা প্রমাণ করার কোনও জায়গা নেই ৷"
এদিন শুনানিতে সিবিআই-এর আইনজীবীকে আদালত জিজ্ঞেস করে, কবে ওএমআর ডেটাগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেই তারিখ তারা জানতে পেরেছে কি না ৷ বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, "একটা আশ্চর্যের বিষয়, যাঁদের যোগ্যতা ছিল না, যাঁদের অনুমোদন করা হয়নি, তাঁদের নিয়োগের চিঠি পাঠানো হয়েছিল ৷ এটা একটা গুরুতর বিষয় ৷" বৃহস্পতিবার দু'দফায় দিনভর শুনানি হয় ৷ কপিল সিবাল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভভি, শ্যাম ডিভান, জয়দীপ গুপ্তা, সঞ্জয় হেজের মতো সিনিয়র আইনজীবীরা এই মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ৷ পরবর্তী শুনানি জানুয়ারি মাসে ৷