মালদা, 10 নভেম্বর: সরকারি টাকায় স্কুল পড়ুয়াদের ট্যাব দুর্নীতির অভিযোগ এবার মালদা জেলাতেও ৷ এক বা দু’জন নয় ৷ অভিযোগ, জেলার শতাধিক পড়ুয়ার সরকারি ট্যাবের টাকা চলে গিয়েছে ভিনরাজ্য, ভিনজেলা, এমনকি মালদা জেলার অন্যত্র ৷ সেই টাকা অনেকের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে বলে অভিযোগ ৷
মালদা জেলার মোট তিনটি স্কুলে এই কারচুপির ঘটনা ঘটেছে বলে শিক্ষা দফতরের কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন ৷ বিষয়টি নজরে আসতেই জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা পরিদর্শক স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের তলব করেন ৷ জেলা শিক্ষা দফতরের তরফে শনিবার তিনটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে ৷
ট্যাব দুর্নীতির অভিযোগে মালদায় তিন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এফআইআর ৷ (ইটিভি ভারত) জানা গিয়েছে, এই কারচুপির ঘটনা প্রথম ধরা পড়ে হবিবপুরের কেন্দপুকুর হাইস্কুলে ৷ দেখা যায়, ওই স্কুলের অনেক পড়ুয়ার সরকারি ট্যাবের টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি ৷ বদলে টাকা চলে গিয়েছে অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে ৷ অথচ রাজ্য সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিটি স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশের পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য মাথাপিছু 10 হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে ৷ সেই টাকা গিয়েছে কেন্দপুকুর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেও ৷
জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা অভিযোগ পেয়ে, তা খতিয়ে দেখেন ৷ দেখা গিয়েছে, স্কুলের আপলোড করা তথ্যের সঙ্গে গুগল ফর্মের মিল নেই ৷ জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা গুগল ফর্মের সঙ্গে স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম খতিয়ে দেখার সময় এই কারচুপি ধরা পড়েছে ৷ তাঁদের অভিযোগ, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম যথাযথভাবে অনুসরণ করেননি ৷ বিষয়টি নজরে আসতেই, শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা ঘটনাটি জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের নজরে নিয়ে আসেন ৷
হবিবপুর থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগপত্র (নিজস্ব চিত্র) এরপর জেলার প্রতিটি স্কুলে ট্যাব বিলির তথ্য খতিয়ে দেখা হয় ৷ তখনই নজরে আসে, শুধু কেন্দপুকুর হাইস্কুল নয়, একই ঘটনা ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের কনুয়া ভবানীপুর হাইস্কুল এবং গাজোলের ডিবি কেয়ার স্কুলেও ৷ অভিযোগ, কনুয়া ভবানীপুর হাইস্কুলের 34 জন এবং ডিবি কেয়ার স্কুলের 24 জন পড়ুয়ার সরকারি ট্যাবের টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে ৷
কেন্দপুকুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দুলাল মণ্ডল এই ঘটনায় হবিবপুর থানায় স্কুলের ক্লার্ক রাজেশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ তাঁর সাফাই, "এসব কাজ স্কুলের ক্লার্করাই করে থাকেন ৷ আমাদের স্কুলের ক্লার্কও এই কাজ করেছিলেন ৷ ডিআই অফিস থেকে জানতে পারি, আমাদের স্কুলের 91 জন পড়ুয়ার ট্যাব কেনার টাকা নিয়ে বেনিয়ম হয়েছে ৷ সেই টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে ৷ আমরা বিষয়টি ডিআই স্যারকে জানিয়েছি ৷ তাঁর নির্দেশে ক্লার্কের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷"
এদিকে কনুয়া ভবানীপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা চৌধুরীর বক্তব্য, "আমার স্কুলের ক্লার্ক 'তরুণের স্বপ্ন' পোর্টালে ট্যাবের তথ্য আপলোড করেন ৷ ক্লার্ক আমাকে জানান, ছেলেদের দেওয়ার ব্যাংকের পাসবইয়ের ফটোকপি দেখেই তিনি তথ্য আপলোড করেছেন ৷ আর আপলোডের পর দু-তিনবার সব তথ্য যাচাই করে দেখে নিয়েছিলেন ৷ তারপরেই সেই তথ্য সাবমিট করেন ৷ কিন্তু, সেই তথ্য যে সেখানেই থেকে গিয়েছে, আমরা কেউই বুঝতে পারিনি ৷ যখন অফিস থেকে এ নিয়ে কথা ওঠে, তখন আমরা সবকিছু মিলিয়ে দেখি ৷ জানতে পারি 34 জন পড়ুয়ার তথ্যের গরমিল রয়েছে ৷"
তাঁর বক্তব্য, "নাম, আইডি এক থাকা সত্ত্বেও এই মিসম্যাচ কীভাবে হল, সেটাই বুঝতে পারছি না ৷ শুধুমাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আর আইএফএসসি নম্বর পালটে গিয়েছে ৷ ব্যাংক কর্তৃপক্ষই বা কীভাবে নাম ও আইডি আলাদা থাকা সত্ত্বেও অন্যের অ্যাকাউন্টে টাকা দিল ! সেটাও বুঝতে পারছি না ৷ এর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না জানি না ৷ আমি ডিআই-এর নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করছি ৷ আমার ধারণা, এর পিছনে অপরাধ চক্র রয়েছে ৷"
এ নিয়ে জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক বাণীব্রত দাস জানিয়েছেন, "পড়ুয়াদের সরকারি ট্যাবের টাকা দিল্লি, অসম, হরিয়ানা থেকে শুরু করে কোচবিহার, আসানসোল, এমনকি মালদার পাকুয়া, ইংরেজবাজার, গাজোল-সহ বেশ কিছু জায়গায় অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে ৷ ঘটনাটি নজরে আসতেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে ৷ আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ৷ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আপাতত তিনটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে ৷"