মালদা, 6 জুলাই: জুলাই পড়তে না পড়তেই মালদা জেলায় শোনা যাচ্ছে দুর্গত মানুষের কান্না ৷ রতুয়ার মাটিতে বিষ ঢালতে শুরু করে দিয়েছে ফুলহর ৷ মানুষের দাবি, ইতিমধ্যে নদী গিলে ফেলেছে শ’চারেক বাড়ি ৷ শুধুমাত্র একটি গ্রামেই ৷ যদিও প্রশাসনের বক্তব্য, অত নয়, তলিয়েছে 40-45টি বাড়ি ৷ সময় থাকতে ধনেপ্রাণে বাঁচতে নিজেদের তৈরি মাথার ছাদ নিজেরাই ভেঙে ফেলছেন মানুষজন ৷ অন্তত দু’শো পরিবার গ্রাম ছেড়েছেন ৷ অভিযোগ উঠেছে, প্রতিশ্রুতি দিয়েও ত্রাণ দেয়নি প্রশাসন ৷ যদিও দুর্গতদের জন্য সবরকম ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও ৷
মালদার রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বিলাইমারি ও মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের নদীঘেরা গ্রাম খাসমহল ৷ গ্রামটিতে চারটি বুথ ৷ দুটি বিলাইমারি, বাকি দুটি মহানন্দটোলা অঞ্চলের মধ্যে ৷ গ্রামে অন্তত সাতশো পরিবারের বাস ৷ হাজার পাঁচেক গ্রামবাসীর বেশিরভাগ ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে এখন পরিযায়ী শ্রমিক ৷ হাতেগোনা কয়েকজন এখনও নিজের জমি চাষ করতে পারেন ৷ গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ৷ রতুয়া থেকে নৌকায় প্রথমে ফুলহর, তারপর কোশি পার করে গ্রামে পৌঁছাতে হবে ৷ ভূতনি চর দিয়ে গ্রামে যেতে হলে উজিয়ে যেতে হবে প্রায় 50 কিলোমিটার পথ ৷ এই গ্রামেই এক সপ্তাহ ধরে ‘ছোবল’ মারছে ফুলহর ৷ মূলত কোশির জল ফুলহরে মেশার জন্যই এই ভাঙন ৷
পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দা আনিসুর রহমান ৷ তিনি বলেন, “ভাঙন চলছে বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকা ভাসারামটোলায় ৷ এখানেই ফুলহরের সঙ্গে কোশি নদীর মিলন হয়েছে ৷ দুই নদীর জল প্রবল বেগে ধাক্কা মারছে ভাসারামটোলায় ৷ তারপর ফুলহর নদীর জল পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়ে ফরাক্কার কাছে গঙ্গায় মিশছে ৷ এতেই এখানে ব্যাপক ভাঙন হচ্ছে ৷ সাতদিনে প্রায় চারশো ঘর নদীতে চলে গিয়েছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এত দ্রুত সব হয়েছে যে কেউ বাড়িঘর থেকে কিছু বের করতে পারেনি ৷ খালি হাতে কাঁদতে কাঁদতে গ্রাম ছেড়ে দিয়েছে ৷ পাশের মহানন্দটোলা পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকা গ্রামের একাংশেও ভাঙন চলছে ৷ সেখানেও প্রায় একশো বাড়ি এখন নদীতে ৷ অনেকে ভয়ে নিজেদের বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন ৷ আমরা প্রশাসনকে সবকিছু জানিয়েছি ৷ আজ বিডিও এসে সব দেখে গেলেন ৷ তিনি কী করবেন জানি না ৷ এখনও ত্রাণ আসেনি ৷ খুব কষ্টে আছি ৷ এক সপ্তাহ ধরে শুকনো খাবার ছাড়া কিছু জোটেনি ৷ সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন ৷”