পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ফুলহরের ভাঙনে নদীগর্ভে কয়েকশো বাড়ি, ঠিকানাহীন মানুষ - Erosion of Fulhar River

Erosion of Fulhar River: ফুলহরে ভাঙন ৷ নদীতে শ’চারেক বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ ৷ প্রশাসনের দাবি, 40-45টি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু ভাঙনের জেরে গ্রাম ছেড়েছেন অন্তত দু’শো পরিবার ৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি দিয়েও ত্রাণ দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন ৷

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 6, 2024, 2:58 PM IST

Updated : Jul 6, 2024, 3:18 PM IST

Erosion of Fulhar River
ফুলহরের ভাঙনে নদীগর্ভে কয়েকশো বাড়ি (ইটিভি ভারত)

মালদা, 6 জুলাই: জুলাই পড়তে না পড়তেই মালদা জেলায় শোনা যাচ্ছে দুর্গত মানুষের কান্না ৷ রতুয়ার মাটিতে বিষ ঢালতে শুরু করে দিয়েছে ফুলহর ৷ মানুষের দাবি, ইতিমধ্যে নদী গিলে ফেলেছে শ’চারেক বাড়ি ৷ শুধুমাত্র একটি গ্রামেই ৷ যদিও প্রশাসনের বক্তব্য, অত নয়, তলিয়েছে 40-45টি বাড়ি ৷ সময় থাকতে ধনেপ্রাণে বাঁচতে নিজেদের তৈরি মাথার ছাদ নিজেরাই ভেঙে ফেলছেন মানুষজন ৷ অন্তত দু’শো পরিবার গ্রাম ছেড়েছেন ৷ অভিযোগ উঠেছে, প্রতিশ্রুতি দিয়েও ত্রাণ দেয়নি প্রশাসন ৷ যদিও দুর্গতদের জন্য সবরকম ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও ৷

ফুলহরের ভাঙনে নদীগর্ভে কয়েকশো বাড়ি (ইটিভি ভারত)

মালদার রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বিলাইমারি ও মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের নদীঘেরা গ্রাম খাসমহল ৷ গ্রামটিতে চারটি বুথ ৷ দুটি বিলাইমারি, বাকি দুটি মহানন্দটোলা অঞ্চলের মধ্যে ৷ গ্রামে অন্তত সাতশো পরিবারের বাস ৷ হাজার পাঁচেক গ্রামবাসীর বেশিরভাগ ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে এখন পরিযায়ী শ্রমিক ৷ হাতেগোনা কয়েকজন এখনও নিজের জমি চাষ করতে পারেন ৷ গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ৷ রতুয়া থেকে নৌকায় প্রথমে ফুলহর, তারপর কোশি পার করে গ্রামে পৌঁছাতে হবে ৷ ভূতনি চর দিয়ে গ্রামে যেতে হলে উজিয়ে যেতে হবে প্রায় 50 কিলোমিটার পথ ৷ এই গ্রামেই এক সপ্তাহ ধরে ‘ছোবল’ মারছে ফুলহর ৷ মূলত কোশির জল ফুলহরে মেশার জন্যই এই ভাঙন ৷

পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দা আনিসুর রহমান ৷ তিনি বলেন, “ভাঙন চলছে বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকা ভাসারামটোলায় ৷ এখানেই ফুলহরের সঙ্গে কোশি নদীর মিলন হয়েছে ৷ দুই নদীর জল প্রবল বেগে ধাক্কা মারছে ভাসারামটোলায় ৷ তারপর ফুলহর নদীর জল পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়ে ফরাক্কার কাছে গঙ্গায় মিশছে ৷ এতেই এখানে ব্যাপক ভাঙন হচ্ছে ৷ সাতদিনে প্রায় চারশো ঘর নদীতে চলে গিয়েছে ৷’’

নদী ভাঙনের জেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাসিন্দারা৷ (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও বলেন, ‘‘এত দ্রুত সব হয়েছে যে কেউ বাড়িঘর থেকে কিছু বের করতে পারেনি ৷ খালি হাতে কাঁদতে কাঁদতে গ্রাম ছেড়ে দিয়েছে ৷ পাশের মহানন্দটোলা পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকা গ্রামের একাংশেও ভাঙন চলছে ৷ সেখানেও প্রায় একশো বাড়ি এখন নদীতে ৷ অনেকে ভয়ে নিজেদের বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন ৷ আমরা প্রশাসনকে সবকিছু জানিয়েছি ৷ আজ বিডিও এসে সব দেখে গেলেন ৷ তিনি কী করবেন জানি না ৷ এখনও ত্রাণ আসেনি ৷ খুব কষ্টে আছি ৷ এক সপ্তাহ ধরে শুকনো খাবার ছাড়া কিছু জোটেনি ৷ সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন ৷”

নদী ভাঙনের জেরে অন্যত্র যাওয়ার আগে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা৷ (নিজস্ব চিত্র)

এই গ্রামেই জন্ম হয়েছে মমতা মণ্ডলের ৷ এবার ফুলহরের ভাঙন তাঁর ঠিকানাও মিটিয়ে দিয়েছে ৷ তিনি বললেন, “দুনিয়ায় আমার কেউ নেই ৷ শেষ সম্বল ছিল বাড়িটা ৷ সেটাও নদীতে চলে গেল ৷ জায়গা-জমি কিছুই নেই ৷ ঘর থেকে কিছু বের করতে পারিনি ৷ সুদে ঋণ নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম ৷ এখন ঋণ মেটাব কীভাবে ? যাবই বা কোথায় ? তাই নদীর ধারেই পড়ে রয়েছি ৷ এখন সরকার শেষ ভরসা৷ প্রশাসন পাশে না দাঁড়ালে এই নদীতেই ডুবে মরতে হবে ৷”

মালদার রতুয়ায় ফুলহর নদীর ভাঙন৷ (নিজস্ব চিত্র)

তৃণমূল পরিচালিত বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রামলাল চৌধুরী বলেন, “50-60 বছর ধরে দেখছি, ফুলহরের জল কোশি দিয়ে বয়ে গিয়ে ফরাক্কার কাছে গঙ্গায় মেশে ৷ এমন ভাঙন কখনও হয়নি ৷ 10 দিন ধরে দেখছি, এবার ফুলহরের জল কোশিতে ঢুকলেই খাসমহল ভাসারামটোলায় ধাক্কা মারছে ৷ এক সপ্তাহের মধ্যে এই গ্রামেই 300টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে ৷ মহানন্দটোলার দিকে থাকা অংশেও অন্তত 100টি বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে ৷’’

মালদার রতুয়ায় ফুলহর নদীর ভাঙনে ভেঙেছে বাড়ি৷ (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা বিডিওকে একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েছি ৷ আজ জয়েন্ট বিডিও এলাকায় এসেছিলেন ৷ তিনি সব দেখে গিয়েছেন ৷ এখান থেকে চারশো আর মোহনটোলা থেকে একশো পরিবার অন্যত্র চলে গিয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও সাহায্য এসে পৌঁছায়নি ৷ আগামীতে কী হবে, বলা মুশকিল ৷”

রতুয়া-1 ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো বলেন, “ফুলহরের ভাঙনে খাসমহল ভাসারামটোলায় 40-45টি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে ৷ দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার-সহ ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷ মানুষের সুবিধের জন্য সেখানে একটি স্পিডবোট দেওয়া হচ্ছে ৷ ইলেকট্রিকের পোল নদীতে চলে যাওয়ায় এখন গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৷ সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করা হবে ৷ আপাতত তিনটি ফ্লাড সেন্টার খোলা হচ্ছে ৷ দুর্গতদের সেখানে যেতে বলা হয়েছে ৷”

অন্যদিকে জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “এই মুহূর্তে সেখানে ভাঙন রোধের কাজ করা সম্ভব হবে না ৷ ভাঙনের প্রকোপ একটু কমলেই সেই কাজ শুরু করা হবে ৷ পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে ৷ দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহ সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷”

Last Updated : Jul 6, 2024, 3:18 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details