বারাসত, 31 জানুয়ারি: সরকারি পরিচালনায় 'যাত্রা উৎসব'-এর অনুষ্ঠান ! অথচ, সেই অনুষ্ঠানে ডাকই পেলেন না উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও বিধায়ক ‘বিতর্কিত’ নারায়ণ গোস্বামী । সম্প্রতি মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি যে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন, সেটাই তাঁকে বাত্য রাখার নেপথ্যে রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন ৷ কারণ, এতে আসলে তৃণমূলের ভাবমূর্তিই ক্ষুন্ন হয়েছে । যদিও ডাক না পেলেও শুক্রবার বারাসতে যাত্রা উৎসবের অনুষ্ঠান মঞ্চ আলোকিত করে ছিলেন অশোকনগরের বিধায়ক তৃণমূলের নারায়ণ গোস্বামী । যা নিয়ে তৃণমূলের দিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির ।
সম্প্রতি নিজের বিধানসভা এলাকা অশোকনগরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহিলাদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে নারায়ণ গোস্বামীর বিরুদ্ধে । তিনি যখন গান গাইতে গাইতে মহিলাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছিলেন, তখন তাঁকে দেখে শ্রোতাদের অনেকেরই অপ্রকৃতিস্থ বলে মনে হয়েছিল ৷ সেই বক্তব্যের ভিডিয়ো সামনে আসতেই পদক্ষেপ করে তৃণমূল ৷
শাসক দলের তরফে শোকজের চিঠি যায় অশোকনগরের বিধায়কের কাছে । প্রথমে তিনি মৌখিক ক্ষমা চেয়ে নিলেও তাতে অবশ্য চিঁড়ে ভিজেনি । পরে, বিধানসভায় তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে লিখিতভাবে নারায়ণ ক্ষমা চান তাঁর করা মন্তব্যের জন্য । তারপরও দলীয় এই বিধায়কের ভাগ্য ঝুলে রয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের পরবর্তী নির্দেশের উপর ।
এসবের মধ্যেই শুক্রবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে হওয়া যাত্রা উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানে ব্রাত্য করা হয় তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে । তাঁকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের তরফে ৷ পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা অ্যাকাডেমি ও তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালনায় যাত্রা উৎসবের যে আমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়েছে, সেখানেও নাম ছিল না ৷
অথচ, সেই আমন্ত্রণপত্রে জ্বলজ্বল করছে রাজ্য সরকারের চার মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের নাম । যা ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয় তৃণমূলের অন্দরেই । কিন্তু আমন্ত্রণপত্রে নাম নেই তো কী হয়েছে ? নারায়ণ গোস্বামী যাত্রা উৎসবের উদ্বোধনে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ৷ উদ্বোধনী মঞ্চে একেবারে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের পাশেই তাঁকে দেখা গিয়েছে ৷
যা নিয়েও রীতিমতো গুঞ্জন শুরু হয় বিভিন্ন মহলে । প্রশ্ন ওঠে, তাঁকে যখন ডাকাই হয়নি, তখন তিনি আগ বাড়িয়ে কেন সেই অনুষ্ঠানে যেতে গেলেন ? তাহলে কী কোথাও ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা ? যদিও এনিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী কিংবা শাসক দলের কোনও সাংসদ অথবা মন্ত্রী কেউই !
এদিকে, তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে কোনও টুঁ শব্দ না করলেও এই নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ভোলেনি গেরুয়া শিবির । বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, "ওঁকে যাত্রা উৎসবে ডাকল কী ডাকল না, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই । বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী যে অন্যায় করেছে, তাতে এক্ষুনি ওঁর পদত্যাগ করা উচিত । মুখ্যমন্ত্রীর যদি সৎ সাহস থাকে, তাহলে দলীয় বিধায়ককে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেখাক । তাহলেই বুঝব, তৃণমূল দলের নীতি, নৈতিকতা আছে । নইলে সবটাই লোক দেখানো ।"