কলকাতা, 15 অক্টোবর: উলু ধ্বনি, শঙ্খনাদ, ঢাকের তাল, প্রতিবাদী গান, কালো বেলুন ওড়ানো ৷ মঙ্গলবার বিকেলে ধর্মতলা সংলগ্ন রানি রাসমণি রোডে জুনিয়র ডাক্তারদের 'দ্রোহের কার্নিভালে' দেখা গেল, এমনই নানা মুহূর্ত ৷ সঙ্গে উঠল সুবিচার ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি ৷ সব মিলিয়ে রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালের সঙ্গে, এক অন্য কার্নিভাল দেখল শহর কলকাতা ৷
তবে, সবকিছুর শেষে কোথাও যেন এক বালতি দুধে, এক ফোঁটা চনা পড়ে গেল ৷ 'দ্রোহের কার্নিভালে' মানব বন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল ধর্মতলা চত্বরে ৷ প্রথমে পুজো কার্নিভাল ফেরত শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের ট্যাবলোকে বাধা দেওয়া ও সুজিত বসুর গাড়িতে চড়-থাপ্পর মারা ৷ পরে ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে ধরে গো-ব্যাক স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ৷
ঢিল ছোড়া দূরত্বে দুই কার্নিভাল (নিজস্ব ভিডিয়ো) অভিযোগ উঠেছে, কার্নিভাল শেষে যখন শ্রীভূমির ট্যাবলো ফিরছিল, সেটিকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয় ৷ এমনকি দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা ৷ তবে, সুজিত বসুর গাড়ি সেখানে থামেনি ৷ তাঁর গাড়ি সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দিকে এগিয়ে যায় ৷ অভিযোগ উঠেছে, সেই সময় কয়েকজন মন্ত্রীর গাড়িতে চড়-থাপ্পর মারা হয় ৷
জুনিয়র ডাক্তারদের 'দ্রোহের কার্নিভালে' সামিল নাগরিক সমাজ ৷ (নিজস্ব চিত্র) এর জেরে কেসি দাস মোড়ে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায় ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় ৷ আন্দোলনকারীরা এবার তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ৷ ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে গো-ব্যাক স্লোগানও ওঠে ৷ তবে, স্তব্ধ রাস্তা ঘুরে দেখেন তিনি ৷ সেই সময় উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় ৷ তখনই জুনিয়র ডাক্তার এবং সাধারণ মানুষ মানব বন্ধন তৈরি করে পরিস্থিতি সামাল দেন ৷ এই বিষয় জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, "এই প্ররোচনায় পা দেবেন না ৷ তাঁরা (পুলিশ) যেদিকে যেতে চায়, যেতে দিন ৷ কোনও উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন না ৷"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভগৎ সিংয়ের পোস্টার হাতে 'দ্রোহের কার্নিভাল' ৷ (নিজস্ব চিত্র) উল্লেখ্য, আজকের দ্রোহের কার্নিভালে অংশ নেওয়া নাগরিক সমাজের লোকজনদের নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় ৷ দুর্গাপুজোর কার্নিভালেই যে কেবল উৎসব পালিত হল, তা ভুল ৷ দ্রোহের কার্নিভালে ছিল প্রতিবাদের উৎসব ৷ ঢাকের তালে প্রতিবাদীদের নাচতে দেখা গেল ৷ শোনা গেল সুবিচারের দাবিতে ধ্বনি ৷ প্রতিবাদী গানে মুখরিত হল ধর্মতলা চত্বর ৷ আয়োজিত হল পথনাটিকাও ৷ সব মিলিয়ে দ্রোহের মধ্যেও ছিল উৎসব ৷
অপর্ণা সেন-সহ বিদ্বজনদের একাংশ উপস্থিত রানি রাসমণিতে 'দ্রোহের কার্নিভালে' ৷ (নিজস্ব চিত্র) বহু মানুষকে দেখা গেল নিজেদের অক্ষমতা ও দুর্বলতাকে সরিয়ে রেখে জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকে 'দ্রোহের কার্নিভালে' সামিল হতে ৷ বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে দেখা গেল হুইল চেয়ারে মানব বন্ধনে অংশ নিতে ৷ কারও হাতে প্রতিবাদী পোস্টার ৷ তো কারও হাতে, জাতীয় পতাকা ৷ সব মিলিয়ে দ্রোহের উৎসবে গর্জে উঠল মধ্য কলকাতা ৷
বর্ধমান শহরেও 'দ্রোহের কার্নিভাল' পালন নাগরিক সমাজের ৷ (নিজস্ব চিত্র) এ দিন সমাজের বিদ্বজনদের একাংশ এই 'দ্রোহের কার্নিভালে' উপস্থিত ছিলেন ৷ পরিচালক অপর্ণা সেন, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র, দেবলীনা দত্ত-সহ টালিগঞ্জের একাংশকে দেখা গেল আজকের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ৷
ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে গোব্যাক স্লোগান আন্দোলনকারীদের ৷ (নিজস্ব চিত্র) কলকাতার পাশাপাশি বর্ধমান শহরেও আয়োজিত হল 'দ্রোহের কার্নিভাল'। এ দিন বিকেলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে শুরু করে উত্তর ফটক হয়ে কার্জনগেট চত্বরে শেষ হয় এই 'দ্রোহের কার্নিভাল' ৷ মূল আয়োজক সংগঠন 'জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস'-এর পক্ষ থেকে ডাকা এই 'দ্রোহ কার্নিভালে' পূর্ব বর্ধমান জেলার বহু সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন ৷ এর পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গেও আজ 'দ্রোহের কার্নিভাল' পালন করা হয় ৷