কলকাতা, 26 নভেম্বর:কলকাতায় অনেক নাগরিকই আচমকা জানতে পারেন যে, তাঁর বাড়ি হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । কীসের ভিত্তিতে সেই বাড়িকে হেরিটেজ হিসেবে চিহ্নিত করা হল, সেই উত্তর থাকে না কলকাতা পুরনিগমের কাছে ৷ আদালতেও সেই প্রশ্নের মুখে পড়লে তাদের নিরুত্তর থাকতে হয় ৷ ফলে অনেক ক্ষেত্রে চাইলেও ঐতিহ্য রক্ষায় পিছিয়ে আসতে হয় কলকাতার পুর প্রশাসনকে । এবার সেই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে । ইতালি, বেলজিয়াম ও চিনের অনুকরণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এবার শহরের ঐতিহ্যকে রক্ষা করবে পুরনিগম ৷
কলকাতা হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি এই নয়া পদ্ধতি তৈরি করেছে । রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সাহায্য চাওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য । এই পদ্ধতির নাম হল 'মাল্টি ক্রাইটেরিয়া ডিসিশন মেকিং'৷ প্রতি বছর ইউনেস্কোর নির্দেশে 19-25 নভেম্বর পালন করা হয় হেরিটেজ সপ্তাহ । সেই মতো এবারও পালিত হয়েছে হেরিটেজ সপ্তাহ ৷ সোমবার ছিল তার সমাপ্তি অনুষ্ঠান ।
নন্দনের অনুষ্ঠানে মেয়র (নিজস্ব চিত্র) নন্দনে সেই অনুষ্ঠানে নতুন পদ্ধতির কথা বলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম । ছিলেন পুর কমিশনার ও কলকাতা হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটির চেয়ারম্যান ধবল জৈন । সোমবার গোটা পদ্ধতি নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেখানো হয় রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কর্তাদের সামনে ।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, শহরে মোট হেরিটেজ 1,392টি । গ্রেড 1 তালিকাভুক্ত 717টি, গ্রেড 2এ তালিকাভুক্ত 216টি, গ্রেড 2বি 119 টি । এর মধ্যে গ্রেড ওয়ান তালিকাভুক্ত 170টি ভবনে 'ব্লু প্ল্যাক' লাগানো হয়েছে । বাকিগুলোতেও তা লাগানো হবে । কী এই ব্লু প্ল্যাক ? এটি একটি স্থায়ী চিহ্ন যা কোনও অবস্থানের সঙ্গে বিখ্যাত ব্যক্তি, ঘটনা, বা প্রাক্তন ভবনের মধ্যে সংযোগকে স্মরণ করে । ব্রিটেন ও অন্যান্য দেশে এরকম ব্লু প্ল্যাক বসানো হয় ৷
লাগানো হবে 'ব্লু প্ল্যাক' (নিজস্ব চিত্র) হেরিটেজ তালিকা তৈরির নতুন পদ্ধতি মাল্টি ক্রাইটেরিয়া ডিসিশন মেকিংয়ে মূলত চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, 1)আর্কিওলজিক্যাল, 2)এনভায়রনমেন্ট, 3)হিস্টোরিক্যাল, 4)ইকোলজিক্যাল । এই বিষয়গুলিতে নির্দিষ্ট করে নম্বর দেওয়া হবে । নম্বরের ভিত্তিতে তাদের গ্রেড দেওয়া হবে ।
এই প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "ঐতিহ্য রক্ষা না-করলে আমাদের পরিচয় মুছে যাবে । আগে গ্রেড দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি ছিল না । ফলে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হলে আমাদের কাছে উত্তর থাকত না ৷ করের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ভবনকে গ্রেড দেওয়া হত । এখন থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তা হবে । কোনও মনগড়া বিষয় নয় ।"
এই নয়া পদ্ধতি অনুসারে শহরের ঐতিহ্যশালী ভবনগুলির উপর সমীক্ষা চালাচ্ছেন বিই কলেজের 60-80 জন । এই পদ্ধতিতেই বাকি থাকা ভবনগুলোকে গ্রেড দেওয়া হবে । এই গোটা বিষয়টি করার পর পাঠানো হবে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে । সেখান থেকে তালিকা তৈরি হয়ে এলে চূড়ান্ত অনুমোদন হবে কলকাতা পুরনিগমের মেয়র পারিষদ বৈঠকে ও মাসিক অধিবেশনে ।