কাকদ্বীপ, 12 জুন: কথায় আছে মাছ-ভাতে বাঙালি ৷ আর এই ভোজন রসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে ইলিশের জুড়ি মেলা ভার । বর্ষা এলেই তাই ইলিশের বিভিন্ন পদের দেখা মেলে বাঙালির পাতে ৷ সেই কারণে মৎস্যজীবীরাও বর্ষায় ইলিশ ধরার দিকে বেশি নজর দেন ৷ যাতে লাভ একটু বেশি হয় ৷
বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় মৎস্যজীবীরা (ইটিভি ভারত) এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না ৷ মৎস্যজীবীরা এখন থেকে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন ৷ দক্ষিণ 24 পরগনার উপকূল তীরবর্তী ডায়মন্ড হারবার, কুলপি, ফলতা, কাকদ্বীপ, নামখানা, বকখালি, পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘির বিভিন্ন এলাকায় এখন এই নিয়ে ব্যস্ততা চরমে । নাওয়া-খাওয়া ভুলে মৎস্যজীবীরা ব্যস্ত নিজেদের মাছ ধরার সরঞ্জাম গোছাতে । চলছে জাল তৈরি থেকে ট্রলার সংস্কারের কাজ ৷
মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, 15 এপ্রিল থেকে 14 জুন, এই দু'মাস সময় পর্যন্ত মাছের প্রজননের জন্য গভীর সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে ৷ সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর 14 জুন থেকে আবার মাঝ সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবেন মৎস্যজীবীরা । তাই এখন চলছে শেষ বেলার প্রস্তুতি ৷
গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার আগে প্রস্তুতিতে মৎস্যজীবীরা (নিজস্ব চিত্র) ট্রলার মালিক মধুসূদন মিস্ত্রি তিনি বলেন, ‘‘প্রস্তুতির কাজ শেষ ৷ এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ৷’’ তার পরেই রুপোলি শস্যের খোঁজে মৎস্যজীবীরা পাড়ি দেবেন গভীর সমুদ্রে । এবছর আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভালো পরিমাণে ইলিশ উঠতে পারবে বলে আশা মৎস্যজীবীদের ৷ এতে যেমন বাঙালির পাতে ইলিশের যোগান মিটবে, তেমনই লাভের মুখ দেখবেন মৎস্যজীবীরাও ।
কিন্তু লাভের মাছ ধরতে গিয়ে অনেক সময় হয়রানির শিকার হতে হয় বলেও মৎস্যজীবীদের অভিযোগ ৷ এক মৎস্যজীবী প্রফুল্ল বর বলেন, ‘‘আমাদের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও প্রায়শই প্রশাসনের আধিকারিকদের হাতে নিগ্রহের শিকার হতে হয় । প্রশাসনের তরফ থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া শিথিল করলে খুবই উপকার হবে মৎস্যজীবীদের ।’’
অন্যদিকে গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের রক্ষা করতে সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন । প্রশাসনের তরফ থেকে বিপদ সংকেত যন্ত্র ও প্রতিটি ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । গভীর সমুদ্রে যদি মৎস্যজীবীরা কোনও বিপদে পড়ে তাহলে বিপদ সংকেত যন্ত্রের মাধ্যমে, তা উপকূলরক্ষীদের নজরে আনতে পারবেন ৷ ফলে দ্রুত সাহায্য করা যাবে ৷
গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার আগে প্রস্তুতিতে মৎস্যজীবীরা (নিজস্ব চিত্র) দক্ষিণ 24 পরগনার সহ-মৎস্য আধিকারিক (সামুদ্রিক) সুরজিৎ কুমার বাগ বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে । সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনেই মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাবেন । তবে ইলিশ ধরার জালের ফাঁস 90 মিলিমিটার হতে হবে । 23 সেন্টিমিটারের ছোট মাছ ধরা যাবে না । গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, লগ বুক, জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘14 তারিখের আগে কোনও মৎস্যজীবী গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরোচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে । দক্ষিণ 24 পরগনা প্রায় তিন হাজার ট্রলার হয়েছে । সঠিক সময় যদি রাজ্যে বর্ষা প্রবেশ করে তাহলে ইলিশের সম্ভাবনা প্রবল । আমরা আশা করি এই বছর ভালো ইলিশ ধরতে পারবেন মৎস্যজীবীরা । মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে দক্ষিণ 24 পরগনার সকল মৎস্যজীবীদের শুভেচ্ছা রইল ।’’