কলকাতা, 20 জানুয়ারি: জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার গবেষণায় নতুন আবিষ্কার ৷ 13টি প্রজাতির নতুন মাছি পাওয়া গিয়েছে ভারতে ৷ সে, যে-সে মাছি নয় ৷ কিউলিকয়ডিস গোত্রের 'উনকি' মাছি ৷ যারা মানুষ এবং জীবজন্তুর শরীর থেকে রক্ত শুষে নেয় ৷ ঠিক যেমনটা করে মশা বা বিষাক্ত পোকামাকড় ৷ কিউলিকয়ডিস গোত্রের এই মাছি 'ভুসি মাছি' নামেও পরিচিত ৷
সম্প্রতি জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তরফে করা গবেষণায় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে কিউলিকয়ডিস গোত্রের মোট 23টি প্রজাতির মাছির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে ৷ এর মধ্যে 17টি প্রজাতির মাছি আবার মানুষের শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে ৷ ঠিক মশার মতো ৷ কিন্তু, এখনও পর্যন্ত এই মাছি মানুষের মধ্যে কোনও রোগ ছড়ায় না-বলেই আশ্বস্ত করেছেন গবেষকরা ৷
ভারতে পাওয়া কিউলিকয়ডিস গোত্রের রক্তশোষক মাছি ৷ (ছবি সূত্র- ZSI) উল্লেখ্য, 23টি প্রজাতির মধ্যে 10টি আগেও ভারতে পাওয়া যেত ৷ কিন্তু, নতুন 13টি প্রজাতি বিপদ বাড়িয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ৷ গবেষকদের দাবি, "ভেড়া, ছাগল, গরুর মতো গবাদি পশু তো বটেই, এমনকি হরিণের মতো বন্যপ্রাণীকেও কামড়ায় ৷ আর তাদের শরীর থেকে রক্ত শোষণ করার সময়, এই মাছিগুলি তাদের শরীরে ব্লু টাং-সহ আরও নানা ধরনের রোগের ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয় ৷ এর ফলে, জিভ হঠাৎ নীল হতে শুরু করে ৷ সঙ্গে পশুপ্রাণীদের জ্বর, মুখ-চোখ ফুলে যাওয়া, অত্যধিক লালা ক্ষরণ এবং শেষে মৃত্যু পর্যন্ত হয় ৷"
গবেষকদের দাবি অনুযায়ী, ভেড়া, ছাগল, গরু এমনকি সমস্ত গবাদি পশুর ক্ষেত্রে ব্লু টাং রোগটি একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম ৷ আর সেই রোগ ছড়ায় যে পতঙ্গ, সেই রক্ত শোষক উনকি মাছিদের নিয়েই আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে গবেষণা করল জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ৷ তা-ও প্রথমবার ৷
কিউলিকয়ডিস গোত্রের তেইশ প্রকার রক্তশোষক মাছির একটি ৷ (ছবি সূত্র- ZSI) এ বিষয়ে জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ড. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে কিউলিকয়ডিস গোত্রের একাধিক প্রজাতির মাছির সন্ধান আমরা পেয়েছি ৷ এর মধ্যে কিছু প্রজাতি ব্লু টাং ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য দায়ী ৷ সেই কারণে, গবাদি পশুর সুরক্ষার্থে আন্দামান ও নিকোবরেও এবার এই ভেক্টরের (পতঙ্গ) উপর নিয়মিত নজরদারি চালানো উচিত বলে আমার মনে হয় ৷ পাশাপাশি, ব্লু টাং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ৷ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতের অন্যতম পর্যটনস্থল ৷ তাই সেখানে এই ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত প্রয়োজন ৷"
সূত্রের দাবি, 2022-23 সালে আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এই উনকি মাছি নিয়ে গবেষণা চালান জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিপ্টেরা বিভাগের গবেষকরা ৷ সেই গবেষণায় তাঁরা উনকি মাছির মোট 23টি প্রজাতির সন্ধান পান ৷ যার মধ্যে নতুন তেরোটি প্রজাতি ভারতে প্রথমবার পাওয়া গিয়েছে ৷ সম্প্রতি এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-সহ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক জার্নাল 'প্যারাসাইটস অ্যান্ড ভেক্টরস' ৷
এই গবেষণার ফলাফল, গবাদি পশুর মধ্যে সংক্রমণ রুখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিপ্টেরা বিভাগের অফিসার ইন চার্জ তথা বিজ্ঞানী ডক্টর অতনু নস্কর ৷ তাঁর মতে, "আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে কিউলিকয়ডিস গোত্রের এত ধরনের প্রজাতির সন্ধান আমরা পেয়েছি যে, আমার মনে হয় বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণে উনকি মাছিদের ভূমিকা কী, বা আদৌ কোনও ভূমিকা আছে কি না, তা বুঝতে গোটা দ্বীপপুঞ্জের একটা সিস্টেম্যাটিক সমীক্ষা প্রয়োজন ৷"
কিউলিকয়ডিস গোত্রের চোদ্দ প্রজাতির মাছির ডানা ৷ (ছবি সূত্র- ZSI) উনকি মাছি নিয়ে গবেষণার কাজে যুক্ত গবেষকদের অন্যতম, জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কৌস্তভ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, "আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বহু জায়গায় এখনও আমাদের সমীক্ষা চালানো বাকি ৷ আশা করছি, সেখানেও আমরা কিউলিকয়ডিস গোত্রের একাধিক প্রজাতির সন্ধান পাব ৷ পাশাপাশি, আমরা উনকি মাছির পপুলেশন এবং জেনেটিক স্টাডিও করছি ৷"
উল্লেখ্য, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া উনকি মাছির মধ্যে, পাঁচটি এমন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে যেগুলি ভারত তো বটেই, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গবাদি পশুর মধ্যে ব্লু টাং ডিজিস ছড়ায় এবং পশুপালন ব্যবসায় বিরাট আর্থিক ক্ষতি করে থাকে ৷