সিঙ্গুর, 9 অগস্ট:: রাজ্যে শিল্প আনার স্বপ্ন সত্যি হয়নি! সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর কারখানা এবং নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব নিয়ে জমি আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ নিয়েছিল ৷ সিঙ্গুরে উর্বর জমিতে জবরদস্তি কারখানা গড়ার চেষ্টা করছে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ৷ অভিযোগ উঠেছিল সদ্যপ্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ৷ খেসারত দিয়ে 2011 সালে বিদায় নেন শেষ বাম মুখ্যমন্ত্রী ৷
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে সিঙ্গুরের কৃষকরা কী বলছেন ? (ইটিভি ভারত) সেই উর্বর জমিকে ফের চাষযোগ্য করে তোলার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত ৷ এরইমধ্যে বাংলার পালা বদল ঘটেছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ যাঁর নেপথ্যে রয়েছে জমি আন্দোলন ৷ সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর গাড়ি শিল্প এখন অতীত ৷ বৃহস্পতিবার সকাল 8.20 মিনিটে নিজের বাড়িতে প্রয়াত হন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণের পর সিঙ্গুরের কোন ছবি ধরা পড়ল ? কী বলছেন সিঙ্গুরের মানুষ ?
হুগলির সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর জমি অধিগ্রহণ কি সঠিক ছিল ? পরবর্তী কালে আদালতের নির্দেশে সিঙ্গুরের চাষ যোগ্য জমি ফেরত দেওয়াও কি সঠিক পদ্ধতিতে হয়েছে ? নানা অভাব-অভিযোগ ইটিভি ভারতকে জানিয়েছে সিঙ্গুরের মানুষ ৷ 2006 সালে সিঙ্গুরের ন্যাশনাল হাইওয়ের পাশের জমিতে শিল্পের পরিকল্পনা নেয় সেই সময়ের বাম সরকার ৷ সিঙ্গুরে টাটা কারখানার জন্য প্রায় 997 একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নেয় রাজ্য সরকার ৷ অভিযোগ ওঠে জোর করে কৃষকের জমি দখল করে নিচ্ছে সরকার ৷ এরপরই শুরু হয় আন্দোলন ৷
গোপালনগর মৌজার এক পরিবারের 12 বিঘা জমি ছিল ৷ শিল্পের জন্য সেই জমি অধিগ্রহণ করা হয় ৷ সেই কৃষক পরিবারের সদস্য তথা সেদিন জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষক ধরণী ঘোষ বলেন, "আমরা জমি ছাড়িনি ৷ আন্দোলন করেছি ৷ মমতাদি আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছেন ৷ আমরা সকলেই চেয়েছিলাম শিল্প হোক ৷ এখনও চাই শিল্প হোক ৷ কিন্তু তখন যদি 400 একর ছেড়ে দিত, তাহলে আর কোনও সমস্যা থাকত না ৷ তখন মমতাদির কথা কেউ শোনেনি ৷ সেই সময় শিল্প হলেও সব কৃষককে কাজ দিতে পারত না সরকার ৷ তাই চাষের জমি ছাড়লে, শিল্প হত কৃষিও হত ৷"
টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো কারখানার জন্য জমি দিতে রাজি ছিলেন কৃষক শক্তিপদ মুখোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "সিঙ্গুর তথা পশ্চিমবঙ্গরে যুবক-যুবতীরা হতাশায় ভুগছেন ৷ সিঙ্গুরের শিল্প হলে হাজার হাজার যুবক-যুবতী চাকরি পেতেন ৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখেছিল ৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বপ্নের প্রতিফলন হল না ৷ সিঙ্গুর তথা পশ্চিমবঙ্গ হতাশায় ডুবে গেল ৷ অন্য কোনও সরকার এসে কারখানা করলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব ৷"
সিঙ্গুরের বহু চাষি সেই সময় জমি দিতে চাননি ৷ তেমনই একজন অনিচ্ছুক কৃষক অমিয় ধারা ৷ তিনি জমি আন্দোলনে অংশ নিয়ে জেল খেটেছিলেন ৷ তিনি বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিঙ্গুরে শিল্প করার স্বপ্ন দেখেছিলেন ৷ সত্যিই ভালো স্বপ্ন ৷ কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না ৷ তখন অবশ্যই সিঙ্গুরের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল ৷ আমরা চেয়েছিলাম শিল্প হোক ৷ কিন্তু দেখলাম, জমি হারাচ্ছি ৷ বাড়িও চলে যাচ্ছে ৷ শুধু তাই নয়, তার জন্য আমাদের কোনও উপায় বা কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি ৷ জমি হারানোর টাকায় আমি ক'দিন খাব ৷ শিল্পের বিরোধিতা আমরা কোনওদিনই করিনি ৷ জবরদখল, লাঠি দিয়ে মারধর ও অধিগ্রহণের জন্য এই আন্দোলন হয়েছিল ৷"
কৃষক আন্দোলনের নেতা ছিলেন মহাদেব দাস ৷ তিনি শিল্পের জন্য জমি দিতে চাননি ৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে কৃষক নেতা বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একজন সৎ ও বিরল ব্যক্তিত্ব ৷ তিনি সততার সঙ্গে কাজ করে গিয়েছেন ৷ কিছুদিন রাজনীতি করে সেটা অনুভব করতে পেরেছি ৷ আমরা শিল্পের বিরুদ্ধে কোনও দিনই ছিলাম না ৷"
সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন প্রসঙ্গে মহাদেব বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম, আলোচনার মাধ্যমে শিল্প হোক ৷ সেই সময় সিপিএম ক্ষমতায় থাকার ফলে, দাদাগিরির জন্য এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল ৷ তবে বর্তমান সরকারও অদ্ভুত জটিলতার মধ্যে আমাদের ফেলে রেখেছে ৷ যে জমি নিয়ে আন্দোলন করে ক্ষমতায় এলেন, সেই জমি বেনাবন করে রেখে দিলেন ৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক ৷ নির্বাচনী ইস্তেহারে বলা হয়েছিল চোদ্দোশো কোটি টাকা খরচ হয়েছে ৷ তাহলে জমিটা চাষযোগ্য হল না কেন ? আমরা এখনও চাই জমি চাষযোগ্য হোক ৷ সেই সঙ্গে শিল্প