মালদা, 10 ফেব্রুয়ারি: বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে আরও একবার অমানবিকতার অভিযোগ ৷ যদিও বাংলা নয়, এক্ষেত্রে অভিযুক্ত পঞ্জাবের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ৷ বিল না-মেটানোয় মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে দেয়নি ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷ শেষ পর্যন্ত নিজেদের শেষ সম্বল, সাড়ে 17 কাঠা জমি বন্ধক রেখে মৃতদেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনলেন পরিবারের লোকজন ৷ মৃত শ্রমিকের পাশে থাকার বার্তা দিলেও এখনও তাঁর বাড়িতে যাননি স্থানীয় বিধায়ক কিংবা প্রশাসনের কেউ ৷ সবমিলিয়ে ভেঙে পড়েছেন মৃত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা ৷
বছর আটচল্লিশের মৃত শ্রমিকের নাম ইলিয়াস আলি ৷ চাঁচল এক নম্বর ব্লকের মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধঞ্জনা গ্রামে তাঁর বাড়ি ৷ পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে দুই ছেলে, দুই মেয়ে ৷ দুই ছেলেও পরিযায়ী শ্রমিক ৷ বর্তমানে ভিনরাজ্যে কর্মরত ৷ সম্প্রতি বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ইলিয়াস ৷ সেই বিয়ে দিতে প্রচুর ঋণ হয়ে যায় তাঁর ৷ তাই দিন সাতেক আগে পঞ্জাবের একটি রাইস মিলে কাজ করতে যান তিনি ৷ সেখানে গিয়েই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ পেটের অসহ্য যন্ত্রণায় কাহিল হয়ে পড়েছিলেন তিনি ৷ সহকর্মীরা তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন ৷ সেখানে তাঁর পেটে অস্ত্রোপচারও হয় ৷ কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধেয় মারা যান ইলিয়াস ৷
মৃত্যুর পর ইলিয়াসের দেহ গ্রামে ফেরানোর চেষ্টা করতেই সমস্যার মুখে পড়েন তাঁর সহকর্মীরা ৷ পঞ্জাবের ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, বকেয়া বিল পরিশোধ না-করলে তারা দেহ ছাড়বে না ৷ বিষয়টি জানতে পেরে ফাঁপড়ে পড়ে যান পরিবারের সদস্যরাও ৷ শেষ পর্যন্ত পরিবারের শেষ সম্বল, সাড়ে 17 কাঠা জমি এক ব্যক্তির কাছে বন্ধক রেখে 70 হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয় ৷ সেই টাকা দিয়ে বিল পরিশোধের পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহ ছাড়ে ৷ শনিবার বেলা 12টা নাগাদ গ্রামে ফিরে আসে ইলিয়াসের মৃতদেহ ৷ ইলিয়াসের স্ত্রী হাসিনা বিবি আজ বলেন, “সংসারে টাকা-পয়সার প্রয়োজন ছিল ৷ এক মেয়ের বিয়ে দিতে অনেক ঋণ হয়ে গিয়েছিল ৷ আরও একটি মেয়ের বিয়ে দেওয়া বাকি ৷ তাই ও বাইরে কাজ করতে গিয়েছিল ৷ দু’দিন কাজ করার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ অসহ্য পেট ব্যথার সঙ্গে বমি হচ্ছিল ৷ ওখানে একটা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও ওকে বাঁচানো যায়নি ৷ হাসপাতাল থেকে বলেছিল, বিল না মেটালে দেহ ছাড়বে না ৷ আমাদের হাতে টাকাপয়সা নেই ৷ তাই জমি বন্ধক রেখে 70 হাজার টাকা পাঠাতে বাধ্য হই ৷ বিল মেটানোর পর ওরা দেহ ছেড়েছে ৷ ওই জমিই ছিল আমাদের শেষ সম্বল ৷ এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি সাহায্য আমাদের কাছে আসেনি ৷”