পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, পথের কাঁটা ভাইকে কুপিয়ে খুন দিদি-জামাইবাবুর - Dakshineswar Murder Case - DAKSHINESWAR MURDER CASE

Dakshineswar Murder Case: পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জের, পথের কাঁটা ভাইকে খুন করল নিজেরই দিদি, জামাইবাবু ৷ যদিও শেষ রক্ষা হল না ৷ পুলিশের জালে খুনিরা ৷

Dakshineswar Murder Case
ভাইকে কুপিয়ে খুন দিদি-জামাইবাবুর (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 15, 2024, 9:19 PM IST

দক্ষিণেশ্বর, 15 জুন: পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ! আর তার জেরে পথের কাঁটা ভাইকে সরাতে খুনের নিখুঁত পরিকল্পনা করেছিল নিজের দিদিই। তাতে সঙ্গ দিয়েছিল জামাইবাবু এবং তাঁর সম্পর্কের এক মামাও। দক্ষিণেশ্বরে ইঞ্জিনিয়ার অপূর্ব ঘোষের খুনের তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল পুলিশের হাতে। খুনের ঘটনায় শুক্রবারই খুনের 'মাস্টারমাইন্ড' অপূর্ব'র দিদি অলক্তিকা দাস, জামাইবাবু সুদীপ দাস ও সুদীপের মামা সঞ্জীব পাত্রকে গ্রেফতারও করেছে দক্ষিণেশ্বর থানার পুলিশ।

দক্ষিণেশ্বরে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ভাইকে কুপিয়ে খুন দিদি-জামাইবাবুর (ইটিভি ভারত)

শনিবার খুনের 'মোটিভ' এবং ধৃতদের ভূমিকা নিয়ে পুলিশ সুপার (বেলঘরিয়া) শ্রীমন্ত বন্দোপাধ্যায় বলেন, "ধৃতরা খুনের কথা স্বীকার করেছেন ৷ মূলত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ ও আক্রোশ থেকেই এই খুন।" বুধবার রাতে দক্ষিণেশ্বরে নিজের বাড়িতেই মদের আসরে খুন হন ইঞ্জিনিয়ার অপূর্ব ঘোষ। তাঁকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।

খুনের পর সেই ঘটনা অন‍্য দিকে ঘোরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন খুনিরা। কিন্তু মামলার এক সাক্ষীর বয়ানই ঘুরিয়ে দেয় খুনের মোড়। পুলিশ সূত্রে খবর, ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনার দিন রাতেই স্বামী সুদীপকে নিয়ে দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে যায় অলক্তিকা। তারপর থেকেই বাপের বাড়িতে ছিলেন অলক্তিকারা। বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে দিনের পর দিন সেখানে সময় কাটালেও, শেষরক্ষা কিন্তু হল না। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলেন খুন হওয়া যুবকের নিজের দিদি, জামাইবাবু এবং জামাইবাবুর মামা ৷

প্রথমে নিহতের দিদি অলক্তিকা এবং তাঁর স্বামী সুদীপকে আটক করে জেরা করা শুরু করে তদন্তকারীরা। তাতেই ভেঙে পড়ে দু'জনে। খুনের কথা কবুল করে নেন অপূর্ব'র দিদি ও জামাইবাবু। এরপরই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃত ওই দু'জনকে জেরা করেই হদিস মেলে অপর অভিযুক্ত সঞ্জীব পাত্রের। তাঁকে কলকাতার বড়বাজার এলাকা থেকে পাকড়াও করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, একসময়ে নেশামুক্তি কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন অপূর্ব। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে পারিবারিক ব্যবসায় মন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পারিবারিক ফলের দোকান-সহ একাধিক সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে অপূর্বর সঙ্গে ঝামেলা লেগেই ছিল দিদি অলক্তিকার। জানা যাচ্ছে, পুলিশি জেরায় অলক্তিকা সেই ঝামেলার কথা স্বীকার করেছে। পাশাপাশি সে দাবি করেছে, অপূর্ব সবসময় দাবি করতেন, তিনিই একা গোটা সম্পত্তির মালিক। তাই, সেই সম্পত্তিতে যেন ভাগ বসাতে না আসে অলক্তিকা। দিদিকে দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতেও আসতে নিষেধ করেছিলেন বলে পুলিশি জেরায় দাবি করেছেন অলক্তিকা। এনিয়ে অপূর্ব দিদিকে হুমকিও দিতেন বলে অভিযোগ ৷ যদিও দিদি-ভাইয়ের সেই ঝামেলায় আমল দিতেন না তাঁদের বাবা-মা।

তদন্তে পুলিশ এও জানতে পেরেছে, গত 1 জুন অলক্তিকা ও সুদীপ দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে ছিলেন। পরে, সেখানে পরিবার নিয়ে আসে সঞ্জীবও। রাতে বসা মদের আসরে সঞ্জীবকে গালিগালাজ করেন অপূর্ব। এর প্রতিবাদ করে সে। ঝামেলা বাড়তে থাকায় রাতেই অলক্তিকারা অ্যাপ-ক্যাব বুক করে হুগলির বাড়িতে ফিরে যায়। এরপর, 12 জুন গভীর রাতে শেওড়াফুলিতে সঞ্জীবের বাড়িতে নেশার আসরে যোগ দেয় অলক্তিকা ও পেশায় বাউন্সার সুদীপ। সেখানে ফের আলোচনা করে বাইকে দক্ষিণেশ্বরে চলে আসে সুদীপ ও সঞ্জীব। বাড়িতে ঢুকে অপূর্বকে দু’জনে কুপিয়ে খুন করে পৌনে বারোটা নাগাদ বেরিয়ে অলক্তিকাকে ফোনে সে কথা জানিয়েও দেয় তাঁরা। নিখুঁত পরিকল্পনা এবং ঠান্ডা মাথায় খুন করেও শেষরক্ষা অবশ্য হল না। পুলিশ একে একে খুনিদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে জাল গোটাল গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার।

ABOUT THE AUTHOR

...view details