বসিরহাট, 24 ফেব্রুয়ারি: জীবনতলা অস্ত্র-কার্তুজ কাণ্ডে আরও জোরালো হল তৃণমূল যোগ ৷ এবার ধৃত তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল সেলিম গাজি ওরফে বাবলুকে জেরা করে মিলল একটি ডাবল ব্যারেল বন্দুক । পুলিশের দাবি, আগ্নেয়াস্ত্রটি উত্তর 24 পরগনার হাসনাবাদের একটি মাছের ভেড়ির আলাঘরে লুকিয়ে রেখেছিলেন বাবলু । সেখান থেকেই সোমবার আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ।
এসটিএফ সূত্রে খবর, বিবাদী বাগের অস্ত্রের দোকানের কর্মী ধৃত শান্তনু সরকার বেআইনিভাবে এই ডাবল ব্যারেল বন্দুকটি বিক্রি করেছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন ওই পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে । সেটিরই অবশেষে হদিস পাওয়া গেল প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যকে জেরা করে । এই নিয়ে কার্তুজ-কাণ্ডে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করল রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । এই বিষয়ে বসিরহাট জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, "আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে বসিরহাট জুড়ে তল্লাশি অভিযান জারি আছে ।"
ডবল ব্যারেল বন্দুক (নিজস্ব ছবি) প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে জীবনতলার ঈশ্বরীপুর এলাকা থেকে 190 রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । কার্তুজের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয় সেখান থেকে । এই ঘটনায় মোট ছ'জনকে গ্রেফতার করেছিল স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । যার মধ্যে উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট মহকুমার আব্দুল সেলিম গাজি ওরফে বাবলু আশিক ইকবাল ওরফে বাপ্পা এবং ফারুক মল্লিকও রয়েছেন । ধৃত এই তিনজনের মধ্যে বাবলু এবং বাপ্পার বাড়ি হাসনাবাদের মুরারীশাহ পঞ্চায়েত এলাকায় । অন্যদিকে, ফারুকের বাড়ি হাড়োয়ার বাগানাটি গ্রামে । তিনজনই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত এলাকায় ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত আবদুল সেলিম গাজি একসময় মুরারীশাহ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য ছিলেন । সেই প্রভাব কাজে লাগিয়েই দীর্ঘদিন ধরে তিনি সীমান্ত এলাকায় বেআইনি কারবার চালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ । বাবলু'র দাপট এতটাই ছিল এলাকায় যে তাঁর ভয়ে কেউই মুখ খোলার সাহস পেতেন না । তা যে কতটা সত্য, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাঁর গ্রেফতারের পরেও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিশ্চুপ থাকা ! মুরারীশাহ এলাকাতেই পেল্লাই দোতলা বাড়ি রয়েছে আবদুল সেলিম গাজির । যদিও, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতেই আবদুলের সেই বাড়িতে তালা ঝুলছে । উধাও হয়ে গিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা ।
পুলিশ মাছের ভেড়ি থেকে উদ্ধার করল আগ্নেয়াস্ত্রটি (নিজস্ব ছবি) ওই একই এলাকাতে বাড়ি অস্ত্র-কার্তুজ কাণ্ডে আরও এক ধৃত আশিক ইকবালের । তাঁর স্ত্রীও মুরারীশাহ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল সদস্য । বকলমে তিনিই সেই সময় স্ত্রীর যাবতীয় কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন । সেই সুবাদে আশিকও দাপুটে নেতা পরিচিত ছিলেন এলাকায় । এতটাই দাপট ছিল যে সাধারণ মানুষ তাঁর অন্যায়ের প্রতিবাদ টুকুও পর্যন্ত করতে পারতেন না । ঘটনার পর থেকে আশিকের পরিবারের সদস্যরাও পলাতক । বাড়ির গেটে ঝুলছে বড় তালা ।
মাছের ভেড়িতে লুকনো ছিল ডবল ব্যারেল বন্দুক (নিজস্ব ছবি) তবে, ফারুকের হাড়োয়ার বাগানাটি গ্রামের বাড়িতে দেখা মিলেছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের । যদিও এনিয়ে তাঁরা মুখ খুলতে চাননি । গোটা ঘটনায় শাসকদলকে নিশানা করে সুর চড়িয়েছে বিরোধী শিবির । পালটা এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে শাসক শিবির । আর এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই এবার জীবনতলা অস্ত্র-কার্তুজ কাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের কাছ থেকে মিলল ডাবল ব্যারেল বন্দুক ।