মেদিনীপুর, 21 অক্টোবর: প্রতি বছর কালীপুজোর সময় দেখা যায় রংবেরঙের দিওয়ালি পুতুলের ভিড় । সেই পুতুলের হাতে বা মাথায় থাকে প্রদীপ ও বাতি দেওয়ার জায়গা ৷ এরকম প্রায় 25টি প্রদীপ জ্বালানো যাবে এমন পুতুলও রয়েছে ৷ চিনা লাইটের রমরমায় দিওয়ালি পুতুলের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ৷ বর্তমান প্রজন্মও মুখ ফিরিয়েছে এই পুতুল তৈরি থেকে ৷ তাতেই শঙ্কায় মেদিনীপুরের কুমোরপাড়া ।
জঙ্গলমহল অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরের নস্টালজিয়া ছিল এই দিওয়ালি পুতুল । ঐতিহ্য বজায় রেখে এখনও এই পুতুল তৈরি করছেন স্থানীয় কুমোররা ৷ একসময় মাটির তৈরি এই পুতুল দিওয়ালির সময় জঙ্গলমহলের ঘরে ঘরে করে নজর কাড়ত । কালীপুজো উপলক্ষে এই পুতুলের প্রচলন ছিল ৷
মেদিনীপুরের কুমোরপাড়ায় দিওয়ালি পুতুল তৈরির ব্যস্ততা (ইটিভি ভারত)
একটি-দু'টি নয়, 25 থেকে 30টি পর্যন্ত প্রদীপ তৈরি করা হত ৷ পুতুলের হাতও সেইভাবে তৈরি ৷ দুই থেকে 10 ও 25 হাতের পুতুল ৷ এক প্রদীপের পুতুলের দাম শুরু 25 টাকা থেকে ৷ প্রদীপ অনুযায়ী দামের হেরফের হয় ৷ দুই থেকে 30টি প্রদীপ জ্বালানো যাবে এমন পুতুলও রয়েছে ৷ একসঙ্গে 10টি প্রদীপ জ্বালানো যাবে এমন পুতুলের দাম 180 টাকা থেকে শুরু ৷
বাড়ির খুদে সদস্যরা ব্যস্ত পুতুল রং করতে (ইটিভি ভারত)
মাটি দিয়ে তৈরির পর এই পুতুল পুড়িয়ে রোদে শুকনো করে রং করা হয় ৷ এরপর তা শুকিয়ে পুতুলের হাতে প্রদীপ রাখার জায়গায় সলতে বসিয়ে তেল দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেই আলোয় ভরে উঠত ৷ সেই সময় এই পুতুলগুলির মাধ্যমে কালীপুজোয় বাড়িতে বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো হত ৷
দশ হাতের দিওয়ালি পুতুল (ইটিভি ভারত)
এখনও সেই রীতি বজায় থাকলেও চাহিদা কমেছে বৈকি ৷ তাতেও কালীপুজো আসতেই ব্যস্ততা দেখা গিয়েছে মেদিনীপুরের কুমোরপাড়ায় ৷ ছোট থেকে বড়, সবাই মিলে দিওয়ালি পুতুল তৈরি এবং তা রং করতে হাত লাগিয়েছে । তবে এই শিল্পীদের আক্ষেপ, বর্তমান প্রজন্ম আর এত খাটতে চায় না । পুতুল তৈরিতে তাদের অনীহা ঐতিহ্যে ভাটা ধরিয়েছে ৷
রকমারি দিওয়ালি পুতুল (ইটিভি ভারত)
এই বিষয়ে শিল্পী গৌতম দাস বলেন, "আমরা বাপ ঠাকুরদার আমল থেকে এই কাজ করে আসছি । দিওয়ালির সময় আমাদের বাজার খোলে । তবে এখন আগের মতো চাহিদা থাকলেও পুতুল তৈরি করার শিল্পী নেই । বর্তমান প্রজন্ম এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে চাইছে । তাই আমরা দিওয়ালি পুতুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ৷ কারণ পশ্চিম মেদিনীপুরের এই নস্টালজিয়া দিওয়ালি পুতুল একমাত্র এখানেই হয় । যদিও এখন মানুষ আর একটা-দুটো নয় বরং পাইকারি করে কিনতে বেশি পছন্দ করে । তবে বাজারে কেরোসিন তেমন না থাকায় এখন হাতা পুতুলের সংখ্যা কমেছে ৷