পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কালীপুজো পেরোলেও দেখা নেই শ্যামাপোকার, কেন ? বিপর্যয়ের ইঙ্গিত !

কালীপুজো পেরোলেও দেখা নেই শ্যামাপোকার ৷ বাড়ি হোক বা রাস্তাঘাট, কোথাওই আলোর দখল নেয়নি শ্যামাপোকার দল ৷ কারণটা কী? এটা কি কোনও বিপর্যয়ের ইঙ্গিত ?

ETV BHARAT
কালীপুজো পেরোলেও দেখা নেই শ্যামাপোকার (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 4 hours ago

কলকাতা, 1 নভেম্বর:শ্যামাপুজোয় শ্যামাসঙ্গীতের মতোই মিছিল করে আলোর উৎসবে সামিল হয় শ্যামাপোকারা ৷ শ্যামাসঙ্গীতে মনের আরাম হলেও শ্যামাপোকায় হয় বিরক্তির উদ্রেক ৷ তা সত্ত্বেও বিশেষত এই সময়টার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে এই ক্ষুদ্র কীট ৷ তবে এবছর কালীপুজো পেরিয়ে গেলেও শ্যামাপোকা যেন এক্কেবারে ভ্যানিশ ৷ বাড়িতে, রাস্তায় আলোর মালায় গিজগিজে পোকারা সব উধাও ৷ কী এমন ঘটল ? এর একাধিক কারণ ইটিভি ভারতকে জানালেন বিশিষ্ট পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ড. দেবাশিস বিশ্বাস ।

দুর্গাপুজোর পর থেকেই টুকটাক দেখা মিলত শ্যামাপোকার । কালীপুজোর সময় বাড়ি থেকে রাস্তাঘাট - এমন কোনও আলো থাকত না, যার দখল নিত না শ্যামাপোকার ঝাঁক । ঘরের টিউব লাইট এমনকি নাইট ল্যাম্প ঘিরেও উড়ে বেড়াত এই পোকার দল । ঘরে ঘরে ও দোকান-বাজারে এই পোকার হাত থেকে রেহাই পেতে গাছের ডাল লাগিয়ে রাখতে হত । রাস্তার আলোগুলোও প্রায় মুখ ঢাকত শ্যামাপোকার দৌরাত্ম্যে ৷ তবে এবছর কোথায় সেই পোকা ? কালীপুজো কেটে যাওয়ার পর তাদের দেখা নেই । এটা কি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আঁচ !

দেখা নেই শ্যামাপোকার (নিজস্ব চিত্র)

এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে ইটিভি ভারত কথা বলেছে পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ড. দেবাশিস বিশ্বাসের সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, "শ্যামাপোকা বা কালীপোকা রাজ্যে সব থেকে বেশি । কারণ এখানে কালীপুজো হয় । এই পোকা তিন থেকে পাঁচ মিলিমিটার লম্বা । সবুজ রঙের ডানা আছে ।" তিনি জানান, এই পোকার প্রজনন হয় অগস্ট মাসে । বৃদ্ধি চূড়ান্ত হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে । নভেম্বর মাসে এর আয়ু শেষ হয়ে যায় ।

ড. দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, "আমরা ছোটবেলায় দেখেছি খাস কলকাতায় আলো জ্বালালে শ্যামাপোকা ঘিরে থাকত । এবার সেটা দেখা যাচ্ছে না কলকাতায় । এর পিছনে তিনটি কারণ আছে।"

আলোর দখল নেয়নি শ্যামাপোকার দল (নিজস্ব চিত্র)

এই কারণগুলি ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, "একটি কারণ হল যেখানে সবুজায়ন বেশি, সবজি গাছ বা ধান চাষ হয় সেই চত্বরে এই পোকার বাড়-বাড়ন্ত হয় । তবে কলকাতা লাগোয়া এলাকাগুলিতে যেসব জায়গায় ধান চাষ হত সেটা আর হচ্ছে না । শহর বাড়ছে, সবুজ কমছে । দ্বিতীয় কারণ হল, যথেচ্ছ বাজি ফাটানো । বাজি থেকে নির্গত সালফার গ্যাসের ধোঁয়া এই পোকার প্রজননে বাধা দেয় । মৃত্যু হয় শ্যামাপোকার । আর তৃতীয় কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন । বাতাসে যখন বেশি জলীয় বাষ্প থাকে, অর্থাৎ বর্ষায় এরা জন্মায় । তবে এখন অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে ৷ গ্রীষ্মের মাসে দেখা যাচ্ছে কলকাতায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত । ফলে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনে ও পতঙ্গ কূলেও ।"

শ্যামাপোকা উধাও হয়ে যাওয়ার আরেকটি অতিরিক্ত কারণ হিসেবে ড. বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ধানক্ষেতে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহারের জেরে এই পোকার প্রজনন আর হয় না । সবমিলিয়ে তাঁর মত, শ্যামাপোকা দেখা না যাওয়ার মতো ঘটনা শহরের পরিবেশে বিপর্যয় ঘটারই ইঙ্গিত দিচ্ছে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details