মালদা, 1 নভেম্বর: কালীপুজো শেষ হতেই শুক্রবার বিধ্বংসী আগুন লাগল মালদার কালিয়াচকে ৷ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় দমকল ৷ একটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন দমকলকর্মীরা ৷ স্থানীয়দের অনুমান, কালীপুজোর পটকা থেকে ওই বহুতলে আগুন লাগে ৷ পটকা থেকে নাকি শর্ট সার্কিট থেকে আগুন, তা তদন্ত করে দেখছেন দমকলকর্মীরা ৷
ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচকের চৌরঙ্গি মোড় সংলগ্ন নিউ মার্কেটে ৷ সেখানে চারতলা এক ভবনের দোতলায় রয়েছে ক্রীড়া সামগ্রীর দোকানের গুদাম ৷ রয়েছে একটি কাপড়ের ব্যাগ তৈরির কারখানাও ৷
কালীপুজো মিটতেই বিধ্বংসী আগুন কালিয়াচকের বহুতলে, ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক দোকান (ইটিভি ভারত) স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এদিন বেলা 12টা নাগাদ ওই দোকান থেকে প্রথমে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় ৷ কিছুক্ষণ পরেই আগুন ওই ভবনের দোতলা ও তিনতলায় ছড়িয়ে পড়ে ৷ দু’টি তলায় অন্তত 15টি দোকান ছিল ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রতিটি দোকানই ৷ তবে সৌভাগ্যের বিষয়, অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা হলেও আগুন ছড়িয়ে যেতে পারেনি ৷ তাতে বেঁচে গিয়েছে মার্কেট-সহ আশেপাশের বসত বাড়িগুলি ৷
স্থানীয় বাসিন্দা সায়েম আলি বলেন, “কালীপুজো উপলক্ষে গতকাল থেকেই এখানে প্রচুর পটকা ফেটেছে ৷ ছোট ছেলেরা ঠিকমতো বাজি পোড়াতে পারছে না ৷ জ্বলন্ত পটকা দোকান-সহ বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে যাচ্ছে ৷ আমার ধারণা, পটকার আগুনেই এই ঘটনা ঘটেছে ৷ দমকল আসার আগেই স্থানীয়রা জল ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন ৷ এখন পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে ৷”
এলাকার আরেক বাসিন্দা শেখ তৌফিক বলেন, “গতকাল রাত থেকে যেভাবে বাজি পুড়েছে, তাতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে রয়েছি ৷ আজও ছেলেরা পটকা ফাটাচ্ছে ৷ আমরা বারণ করলেও বাচ্চারা শুনছে না ৷ এটা খুব ঘিঞ্জি এলাকা ৷ কোনোভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়লে, তা নিয়ন্ত্রণে আনা মুশকিল হয়ে যাবে ৷’’
বিধ্বংসী আগুন কালিয়াচকের বহুতলে (নিজস্ব ছবি) তিনি আরও বলেন, ‘‘যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে কাপড়ের ব্যাগ তৈরি হয় ৷ নীচে খেলনার দোকান ৷ রয়েছে বইয়ের দোকানও ৷ এই ঘটনার পর আমরা আবার কালিয়াচকে দমকল কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি ৷ তা না-হলে বড়সড় আগুন লাগলে মালদা থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসার আগেই সব ছারখার হয়ে যাবে ৷”
অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসেন এসডিপিও (কালিয়াচক) ফায়সাল রাজাও ৷ তিনি বলেন, “দমকলকর্মীরা আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন ৷ কী কারণে এই আগুন, তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি ৷ আগুন নেভার পর এনিয়ে তদন্ত শুরু হবে ৷ তখনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে ৷”
বিধ্বংসী আগুন কালিয়াচকের বহুতলে (নিজস্ব ছবি) তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কালিয়াচকের চৌরঙ্গি এলাকায় নিয়মবহির্ভূতভাবে একের পর এক বাণিজ্যিক বহুতল তৈরি হয়েছে ৷ কোনও নিয়ম না-মেনেই ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ সেখানকার অধিকাংশ দোকানে অগ্নি নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসনও এই নিয়ে নির্বিকার ৷
বিধ্বংসী আগুন কালিয়াচকের বহুতলে (নিজস্ব ছবি) স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় একটি অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র স্থাপনের দাবি থাকলেও রাজ্য সরকার কোনও গুরুত্ব দেয়নি ৷ অথচ অনেক কম জনবসতি থাকা সত্ত্বেও গাজোলে নতুন অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে ৷ এলাকার বিধায়কও কোনও উদ্যোগ নেন না ৷ এভাবেই চলতে থাকলে কালিয়াচকবাসীর সামনে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে ৷