মালদা, 4 ডিসেম্বর: আগে দেশ, দেশের সম্মান, পরে ব্যবসা ৷ তাতে যত ক্ষতি হয় হোক ৷ বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে এককাট্টা মালদার হোটেল ব্যবসায়ীরা ৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, যতদিন না বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে যে, ততদিন ওপারের নাগরিকদের জন্য মালদার হোটেল ও রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ থাকবে ৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই একই পথে হেঁটে বাংলাদেশিদের একপ্রকার বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরার হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা ৷
সম্প্রতি কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ৷ এর পিছনে সেদেশে ধর্মের জিগির তোলা কিছু লোকজনই দায়ী বলে মনে করছেন ভারতীয়রা ৷ কারণ, হাসিনা সরকারের পতনের পরই সেদেশের কিছু নাগরিক নানা অছিলায় ভারতের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ৷ এনিয়ে সোশাল মিডিয়ায় দু’দেশের মানুষের মধ্যে কার্যত বাকযুদ্ধ চলছিল ৷ ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণদাসকে গ্রেফতারি আগুনে ঘি ঢালে ৷ ঢাকার রাস্তায় হাজারো মানুষের প্রতিবাদ মিছিলকে সমর্থন করেন ভারতীয়রা ৷
ক’দিন আগে সোশাল মিডিয়ায় দেখা যায়, ওই দেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথের সামনে ভারতের জাতীয় পতাকা আঁকা ৷ তেরঙাকে মাড়িয়ে তার অবমাননা করছেন সেদেশের নাগরিকদের একাংশ ৷ ওই ছবি দেখার পরেই ভারতীয়দের হৃদয়ে আগুন জ্বলে ওঠে ৷ বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ৷ একাধিক চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তাঁরা আর কোনও বাংলাদেশির চিকিৎসা করবেন না ৷ কেউ আবার বলেন, তেরঙাকে প্রণাম করে ঘরে ঢুকলে তবেই তিনি কোনও বাংলাদেশির চিকিৎসা করবেন ৷ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালও বাংলাদেশের নাগরিকদের চিকিৎসা পরিষেবা দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ৷ ত্রিপুরার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও জানিয়ে দিয়েছে যে, সেখানকার হোটেল ও রেস্তোরাঁর দরজা বাংলাদেশিদের জন্য আপাতত বন্ধ ৷
এবার সেই পথই অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ৷ যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, ততদিন মালদার কোনও হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের কোনও নাগরিককে ঢুকতে দেওয়া হবে না ৷ নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা মঙ্গলবারই পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা ৷ বুধবার এনিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় বসেছেন ৷ তাঁদের সাফ কথা, আগে দেশ, পরে ব্যবসা ৷
মালদা জেলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী জানিয়েছেন, "বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জেরেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি ৷ কারণ, এই সুযোগে সীমান্ত দিয়ে প্রচুর অনুপ্রবেশ ঘটছে ৷ তার মধ্যে কোনও জঙ্গি থাকছে কি না আমরা বুঝতে পারছি না ৷ এখন জাল পাসপোর্ট, ভিসা কিংবা পরিচয়পত্র তৈরি হয়ে যাচ্ছে ৷ তাই আমরা ঠিক করেছি, বাংলাদেশের কোনও নাগরিককে আমরা থাকার ঘর দেব না ৷ খাবারও দেওয়া হবে না ৷"
দেশের সম্মানের কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি ৷ তাঁর কথায়, "এই সিদ্ধান্তের পিছনে দেশের স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে ৷ কারণ, আমাদের কাছে দেশের সম্মান সবচেয়ে আগে ৷ এই সিদ্ধান্তে আমাদের প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টাকা ক্ষতি হবে ৷ আজ থেকেই সেই ক্ষতি আমাদের গুনতে হচ্ছে ৷ সাধারণত প্রতিদিন গড়ে দেড়শো বাংলাদেশি মালদায় আসেন ৷ যতদিন না এই অস্থিরতা কাটছে, ততদিন এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে ৷ এর জন্য আমরা প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ৷"