মালদা, 12 জুন: পাঁচ বছরের মাথায় ফের বার্ড ফ্লু আতঙ্ক ৷ 2019 সালে শেষবার বার্ড ফ্লুয়ে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল বাংলাদেশ ও পুণেতে ৷ তারপর দেশে এই রোগের কথা আর তেমন শোনা যায়নি ৷ কিন্তু এবার মালদার কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকে চার বছরের এক শিশুর রক্তে ব্লাড ফ্লু’র জীবাণু ধরা পড়েছে ৷ শুধু রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সেই বার্তা দিয়েছে ৷ এই কথা চাউর হতেই রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়েছে ৷ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি জানিয়েছেন শীঘ্রই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জেলায় আসবেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা ৷
চার বছরের আক্রান্ত শিশুটির বাড়ি কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকে ৷ বাবা পেশায় মাছ বিক্রেতা, মা গৃহবধূ ৷ তাঁদের একমাত্র ছেলে গত জানুয়ারিতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে তাকে নিয়ে গিয়েও ফল না-মেলায় ভর্তি করা হয় মালদা মেডিক্যালে ৷ একমাস সেখানে চিকিৎসা চলার পর মার্চে তাকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করা হয় ৷
সেখানেও তার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে তমন কিছু পাওয়া যায়নি ৷ তাই রক্তের নমুনা পাঠানো হয় পুণের নাইসেডে ৷ সেখানে রক্ত পরীক্ষার পর বুধবার তার রিপোর্ট পায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ৷ জানা যায়, শিশুটি H9N2 ভাইরাসে আক্রান্ত ৷ সাধারণত এই ভাইরাসের প্রকোপ খুব একটা দেখা যায় না ৷ পাখি থেকেই এই ভাইরাস ছড়ায় ৷ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না ৷ দীর্ঘ চিকিৎসার পর শিশুটি এখন খানিকটা সুস্থ ৷
তবে তার ফুসফুস অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা ৷ শিশুর ফুসফুস প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিশুটির মা ৷ তিনি বলেন, "প্রথমে পেটে ব্যথা শুরু হয় ৷ তারপর জ্বর আর কাশি ৷ কিছুতেই সারছিল না ৷ বাচ্চাকে মালদা মেডিক্যালে ভর্তি করি ৷ সেখানে জানানো হয়, ছেলে ভাইরাসে আক্রান্ত ৷ মালদা থেকে কলকাতা রেফার করে দেওয়া হয় ৷ সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, ছেলের ফুসফুস নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ ওখানে দু'মাস চিকিৎসার পর ছেলে ভালো হয়ে যায় ৷ শুধু শ্বাসকষ্ট ছিল ৷ চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন, শ্বাসকষ্ট থাকবে ৷ ফুসফুস বদলাতে হবে ৷ তবে বড় হওয়ার পর অপারেশন করাতে হবে ৷ ছোটতে অপারেশন করালে ছোট আকারের প্লাস্টিকের ফুসফুস ওর শরীরে বসবে ৷ বড় হলে শরীর বাড়লেও ফুসফুস ছোট থেকে যাবে ৷ তাই ছেলে বড় হলে অপারেশন করাতে বলেছিলেন ডাক্তাররা ৷ প্রথমদিকে অক্সিজেন ছাড়া ও থাকতে পারত না ৷ এখন দিনে দু'ঘণ্টা ওকে অক্সিজেন দিতে হয় ৷ ওর পায়ে একটা পোকা কেটেছিল ৷ আমার মনে হয়, সেখান থেকেই ভাইরাস ছড়িয়েছে ৷ তবে এখন আমার ছেলে ভালো আছে ৷"
বঙ্গে বার্ড ফ্লু-এ আক্রান্ত চার বছরের শিশু, মানব শরীরে সংক্রমণে বাড়ছে আতঙ্ক !