ইটিভি ভারতকে জানালেন দেবাংশু কলকাতা, 11 মার্চ: যুব নেতা থেকে সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ৷ দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের তরুণ মুখ হিসাবে উজ্জ্বল থাকলেও এবার তাঁকে গুরুদায়িত্ব দিলেন নেত্রী মমতা ৷ জনগর্জনসভা থেকে চমক দিয়ে প্রার্থীতালিকায় 26 নতুন মুখের ঘোষণা করেছে তৃণমূল। সেই তালিকায় শীর্ষেই থাকবে দেবাংশু ভট্টাচার্যের নাম। নির্বাচনী ময়দানে যাঁর আত্মপ্রকাশ হতে চলেছে। আর আত্মপ্রকাশে সাংসদ হিসেবে দেবাংশু প্রার্থী হয়েছেন হাইভোল্টেজ তমলুক কেন্দ্রে ৷ হাইভোল্টেজ কারণ, এই কেন্দ্র থেকেই বিজেপির হয়ে প্রার্থী হতে পারেন বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এনিয়ে কী চলছে দেবাংশুর মনে? কী পরিকল্পনা নিচ্ছেন তিনি? যদি অভিজিৎবাবু তাঁর বিপক্ষে দাঁড়ান তাহলে লড়াইটা কেমন হতে চলেছে? একান্ত সাক্ষাৎকারে সব উত্তর তিনি জানালেন ইটিভি ভারতকে ৷
তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে প্রথমবার প্রার্থী হয়ে কেমন লাগছে ? অনুভূতি জানতে ইটিভি ভারত যোগাযোগ করে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা দেবাংশু ভটাচার্যের সঙ্গে ৷ উত্তরে তিনি জানান, ভীষণই ভালোলাগছে ৷ সবথেকে বড় নির্বাচনে এই দায়িত্ব পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞ ৷ এরপরই ইটিভি ভারতের তরফে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়-
- ইটিভি ভারত-তৃণমূলের সোশাল মিডিয়ার দায়িত্বে রয়েছেন আপনি ৷ স্লোগান, বক্তব্যেই মূলত আপনার নাম প্রথম খবরের শিরোনামে আসে সেখান থেকে আজ 2024 লোকসভা ভোটে প্রার্থী কেমন লাগছে... অনেকটা কি দেরি হয়ে গেল?
দেবাংশু-দল এত বড় পরীক্ষায় আমাকে নামিয়েছে এবং এরকম একটা জায়গা থেকে বিশ্বাস করেছে আমি জিতে আসতে পারব ৷ তাই দলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ৷ অবশ্যই ভালো লাগছে ৷ নতুন লড়াই, নতুন জায়গা অবশ্যই ভালো লাগছে ৷ সবথেকে বড় কথা জীবনে কোনও ভোটে এখনও পর্যন্ত প্রতিনিধিত্ব করিনি ৷ প্রথমেই প্রতিনিধিত্ব করছি লোকসভা নির্বাচনে, দল এই জায়গা দেওয়ায় সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ ৷ তমলুকে মানুষদের থেকে ভালোবাসা পাব বলেই বিশ্বাস করি ৷
- ইটিভি ভারত-হাইভোল্টেজ কেন্দ্র তমলুক, রাজনীতির অন্দরে শোনা যাচ্ছে বিজেপি থেকে দাঁড়াতে চলেছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ যদি তাই হয় তাহলে আলাদা কোনও স্ট্র্যাটেজি? কী ভাবছেন ?
দেবাংশু- বিচারপতি দাঁড়াক, ডাক্তার দাঁড়াক, কি ইঞ্জিনিয়ার দাঁড়াক আমার কাছে সবাই সমান ৷ আমি একটা কথা জানি, জোড়াফুলের সিম্বল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করব ৷ আমার কাছে উলটোদিকে যিনি থাকবেন তাঁর প্রতীক কিন্তু পদ্মফুল নয়, প্রতীক হচ্ছে বারোশো টাকার গ্যাস সিলিন্ডার, তাঁর প্রতীক হচ্ছে 120 টাকার কেরোসিন তেল, ফলে তাঁকে সেই দায়ভার নিয়ে লড়তে হবে ৷ আর আমি লড়ব লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সঙ্গে নিয়ে, লড়ব কন্যাশ্রী সঙ্গে নিয়ে ৷ তাই আমার লড়াইটা সেই জায়গা থেকে অনায়াস হয়ে যাচ্ছে অনেক ৷
- ইটিভি ভারত- এতবড় কেন্দ্র বলা ভালো চর্চিত কেন্দ্রে আপনাকেই বাছল দল? কী মনে করে আপনাকে 'গুরুদায়িত্ব' দেওয়া হল?
দেবাংশু- কারও আসন কোনও পরিবারের হতে পারে না ৷ আমরা রাজতন্ত্রে নয়, গণতন্ত্রে বাস করি ৷ ফলে কোনও পরিবারের জায়গা, অধিকারী ফ্যামিলি এসব কিছু নয় ৷ জায়গা মানুষের ৷ মানুষ নিজের জায়গায় নিজেই নিজের ভাগ্য নির্ধারণ করেন ৷ ফলে আমার ধারণা তমলুকের মানুষ এখন টেস্ট পরিবর্তন করতে চাইবেন ৷
- ইটিভি ভারত- 2019-এ তমলুক আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন দিব্যেন্দু অধিকারী, জিতেওছিলেন। কিন্তু, তাঁর দাদা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পরই ঘাসফুল শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে অধিকারী পরিবারের। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ অধিকারী গড়ে আপনি নিজেকে কীভাবে তাঁদের থেকে আলাদা করে তুলবেন ?
দেবাংশু- আমি কারও গড় বলে মনে করি না ৷ গোটা বাংলাটাই সাধারণ মানুষের নিজের গড় ৷ প্রত্যেক বাড়িই হচ্ছে গৃহকর্তা ও কর্ত্রীদের গড় ৷ তাই সাধারণভাবেই মানুষ ভালোর কথা ভেবে তাঁর নিজের বুথে পছন্দের প্রার্থীদের জেতাবে ৷ ফলে আমি কারও গড় বলে মনে করি না ৷ আমার বিশ্বাস মানুষ আমাদের দলেরই পাশে আছে ৷ দল নিশ্চয় বিশ্বাস করেছে এই কেন্দ্র থেকে যদি কেউ জিততে পারে তাহলে আমিই পারব ৷ নেত্রী আশীর্বাদ করেছেন ৷ বলেছেন জিততেই হবে ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আশীর্বাদ করেছেন ৷ সবার আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়ে আমি জিততে পারব ৷
- ইটিভি ভারত- 2021 বিধানসভা ভোটে আপনি যখন টিকিট পাননি তখন নানা কথা শোনা গিয়েছিল যে, আপনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না ৷ আপনার 'দায়িত্ব' শুধু মুখপাত্রই থেকে যাবে তখন ভেবেছিলেন কিছু? সেইসময় দলবদলের কথা?
দেবাংশু- দলবদলের কথা ভাবিনি কোনওদিন ৷ যারা দলবদল করে তারা ধান্দা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন ৷ আমি ধান্দাবাজি করতে আসিনি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালোবেসে রাজনীতিতে আসা ৷ দল কী দিল না-দিল সেই নিয়ে দলবদলের কথা মাথায় আসেনি ৷ দল আমায় সুযোগ দিয়েছে ৷ সেখানে যদি আমাকে দল মনে করে আমি পার্টি অফিস ঝাঁট দেওয়ার যোগ্য তাহলে তাই করব ৷ তবে দলে কারও সঙ্গে রাগ-অভিমান হতেই পারে সেজন্য দল ছেড়ে দিতে পারি না ৷ আমার মায়ের সঙ্গে রাগ হলে আমি তো আর প্রতিবেশীকে মা বলে ডাকতে পারব না ৷ যারা দল পরিবর্তনের করে তারা প্রতিবেশীকে মা বলে ডাকে ৷
- ইটিভি ভারত-আপনি যদি জেতেন তাহলে রাজ্যের কনিষ্ঠ সাংসদ হবেন আপনিই ৷ কতটা উৎসাহিত?
দেবাংশু- জেতা-হারার প্রশ্ন পরে ৷ তার আগে এখনও পর্যন্ত যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন অর্থাৎ, বিজেপি'র 20 বা তৃণমূলের 42, তাঁদের মধ্যে আমিই সবথেকে ছোট, আর জিতলে তো হবই ৷ সেই জায়গা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় আঠাশ বছর বয়সে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন ৷ সেকথা দিদি আগের দিন আমায় মনেও করিয়ে দিয়েছেন ৷ আমিও আঠাশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ৷ একই রাজনৈতিক দলে, একই নেত্রী; খুব ভালো লাগছে ৷
আরও পড়ুন:
- 'তৃণমূলে আসা কিছুটা ভুল হয়েছিল', জল্পনা জিইয়ে রেখে মন্তব্য অর্জুনের
- তৃণমূলের নায়িকা সংবাদ! প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ মিমি-নুসরত, জুড়ল রচনা-সায়নী-জুনের নাম
- সুন্দর মুখ দেখে ভোট দেবে না মানুষ, জুন মালিয়াকে কটাক্ষ দিলীপের