দার্জিলিং, 17 ফেব্রুয়ারি: সবুজ পাহাড়ের আঁকেবাঁকে কু ঝিকঝিক টয়ট্রেন, কাঞ্চনজঙ্ঘার লুকোচুরি আর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা চা বাগানের সারি ৷ আমাদের খুব কাছের, খুব চেনা শৈলরানি দার্জিলিং ৷ যার চায়ের সুখ্যাতি জগৎজোড়া ৷ যা বর্ণে গন্ধে...হৃদয়ে দেয় দোলা ৷ ব্রিটেনের রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেকেও বিশেষ উপহারের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল শৈলরানির চা । দেশ তো বটেই, বিশ্বের কোনায় কোনায় পৌঁছে গিয়েছে দার্জিলিং চায়ের নামডাক । যাকে ব্রিটিশরা বলত, 'শ্যাম্পেন অফ টি' ৷
কিন্তু কেন ? কী বিশেষত্ব এই দার্জিলিংয়ের চায়ের ? কোথায় আলাদা ? গ্যাঁটের কড়ি অনেকটা খরচ করতে হলেও চায়ের পেয়ালায় তুফান তুলতে কেন দেশে-বিদেশে একমাত্র আস্থার জায়গা এই দার্জিলিং চা ? আসলে এই চা বাকি সব চা-কে টেক্কা দিয়েছে রঙ, স্বাদ ও গন্ধে ৷ তবে দার্জিলিং চায়ের মধ্যেও আবার রকমভেদ আছে ৷ জানলে অবাক হবেন, এক এক সময়ের দার্জিলিং চায়ের রঙ, স্বাদ আর গন্ধ ভিন্নরকমের হয় । আর এসবের কারণেই দার্জিলিং চায়ের এত নামডাক । বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে পাতা তোলার নিরিখে দার্জিলিং চায়ের প্রকারভেদ রয়েছে ।
দার্জিলিংয়ের মাত্র 87টি চা বাগানের 20 হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয় এই শ্যাম্পেন অফ টি, যা বিশ্বের আর কোনও চা বাগানে হয় না । বছরে গড়ে 13 মিলিয়ন কেজি দার্জিলিংয়ের চা উৎপাদন হয় পাহাড়ে । যা গোটা দেশের মোট উৎপাদনের 15 শতাংশ । আর শৈলরানির আবহাওয়া, উচ্চতা এবং মরশুম আর পাঁচটা চায়ের থেকে একেবারে আলাদা করে তুলেছে দার্জিলিংয়ের চা-কে ।
পাহাড়ের রানি দার্জিলিংয়ের কথা মাথায় এলেই সবার প্রথমে মাথায় আসে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে চাষ করা সবুজে ঘেরা চায়ের বাগান । বর্তমানে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল থেকে প্রচুর চা দার্জিলিংয়ে ঢুকছে, যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই মান হারাচ্ছে দার্জিলিংয়ের চা । তাই দার্জিলিংয়ের চা-প্রেমীদের একটু সতর্ক হতে হবে ।
কীভাবে চিনবেন দার্জিলিং চা ? তার জন্য আপনাকে জানতে হবে দার্জিলিং চায়ের ইতিবৃত্ত । পাহাড়ের 600 ফুট উচ্চতা থেকে 2000 ফুট উচ্চতা পর্যন্ত জন্মায় এই উন্নতমানের দার্জিলিং চায়ের গাছ । উনিশের দশকে ব্রিটিশদের হাত ধরে দার্জিলিং চায়ের পথ চলা শুরু । ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এর খ্যাতি । এই চা ব্রিটিশদের এতটাই পছন্দ হয় যে, তাঁরা পরবর্তীতে নিজেদের দেশে এখানকার মতো চা পাতা উৎপাদন করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন, তবে পারেননি ৷ সেই কারণেই এখনও দার্জিলিংয়ের চা পাড়ি দেয় বিদেশে ।
চা ব্যবসায়ী বাপ্পা ঘোষের কথায়, "দার্জিলিংয়ের চায়ের বাজারে দারুণ কদর । ব্রিটিশরাই এই চায়ের প্রথম স্বাদ বুঝতে পারেন । আর তারপরেই এই চায়ের পথ চলা শুরু হয় ।"
এবার আসা যাক দার্জিলিং চায়ের প্রকারভেদে । মূলত বছরে চারবার দার্জিলিং চা পাতা তোলা হয় । যা ফার্স্ট ফ্লাশ, সেকেন্ড ফ্লাশ, থার্ড ফ্লাশ এবং ফোর্থ ফ্লাশ নামে পরিচিত । প্রত্যেকটি ফ্লাশের স্বাদ, রঙ এবং গন্ধ ভিন্ন হয় ।