কলকাতা, 15 জুলাই: 'রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম ।' রথ হোক বা উলটো রথ, এই দুই দিন এটাই পরিচিত ছবি ৷ কবির কথায়, 'পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি'৷ তবে কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর বাপন দাসের বিশ্বাস, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজমান ৷ আর তাই চালককে আসনে বসিয়ে তিনি নিজে হাতে টানলেন রিকশা ৷ উলটো রথে আক্ষরিক অর্থেই সাক্ষী থাকলেন উলট-পুরাণের ৷
চালকদের আসনে বসিয়ে নিজে রিকশা টানলেন পুলিশকর্মী (নিজস্ব ভিডিয়ো) উলটো রথে সমাজটাকে একটু উলটে পালটে দেখতে চাইলেন কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর বাপন দাস । মহানগরীর বৃষ্টিভেজা রাস্তায় তাঁর হাতে টানা রিকশা ৷ আর রিকশাচালককে বসিয়ে দিলেন তাঁরই রিকশার আসনে ৷ উলটে গেল চিত্রনাট্যের চরিত্রগুলো ৷ সাতসকালে মধ্য কলকাতায় এভাবেই উলটো রথ পালন করলেন কলকাতা পুলিশের এই কর্মী ৷
বাপন দাস স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাব-ইনস্পেক্টর হওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে সাংসদ সৌগত রায়ের পিএসও (ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী)৷ আজ ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "আমি ছোট থেকেই শিলিগুড়িতে বড় হয়েছি । কিন্তু আমার কর্মজীবন কলকাতা শহর । এখানেই জীবনের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে । আমি প্রত্যেকবারই উলটো রথের দিন সমাজটাকে খানিকটা উলটো ভাবে দেখার চেষ্টা করি । প্রতিবারই বিভিন্ন রকমের সামাজিক অনুষ্ঠান করি, তবে এবারের অনুষ্ঠানটা একেবারে আলাদা ।"
রিকশাচালকদের মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন পুলিশকর্মী (নিজস্ব চিত্র) তিনি আরও জানান, "আমি আজ সকালে শহরের বেশ কয়েকজন টানা রিকশাচালককে তাঁদেরই রিকশায় বসিয়ে, কলকাতার একাধিক উল্লেখযোগ্য স্থান ঘুরিয়ে দেখাই । পরে তাঁদের হাতে তুলে দিই সামান্য কিছু উপহার । আর এতে বেজায় খুশি রিকশাচালকরা ৷ যাঁরা পেটের তাগিদে নিত্যদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সওয়ারিদের টেনে নিয়ে যেতে অভ্যস্ত, তাঁদের আজ সকালে রিকশায় বসিয়ে কলকাতার পোদ্দার কোর্ট, লালবাজার স্ট্রিট, বৌ বাজার ও বড়বাজার এলাকার একাধিক ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখাই । এই রিকশাচালকরা সংখ্যায় ছিলেন প্রায় 10 জন । প্রত্যেকেই টানা রিকশাচালক ।"
এই সেবা পেয়ে দারুণ খুশি রিকশাচালকরা (নিজস্ব চিত্র) উলটো রথে উলটো পথে রথে চড়ে মাসির বাড়ি থেকে বাড়িতে ফেরেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ৷ আর এই দিনেই সমাজের চেনা চরিত্রগুলোকে উলটে নিয়ে নিজে রিকশা টানলেন পুলিশকর্মী বাপন দাস ৷ আর রিকশার যাত্রী হলেন রামেশ্বর যাদব, বাবুলাল রায়, জুবের আলির মতো রিকশাচালকরা ৷ এঁরা 20-25 বছর ধরে কলকাতার রাস্তায় টানা রিকশা চালান । তবে কোনওদিন এই সেবা বা ভালোবাসা পাননি কারও কাছে ৷ তাই উলটো রথের দিনে তাঁরা দারুণ খুশি ৷ সবার হাতে মিষ্টির প্যাকেট দিলেন সাব-ইনস্পেক্টপ বাপন দাস ৷ বললেন, কর্মই ধর্ম ।