দুর্গাপুর, 25 ফেব্রুয়ারি: পানাগড়ে সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়েরের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার কি যাচ্ছে সিআইডির হাতে ? এই প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে ঘোরাফেরা করার কারণ হল, মঙ্গলবার সকালে কাঁকসা থানায় দেখা যায় সিআইডির তিন কর্তাকে । দুর্ঘটনাগ্রস্ত দুটি গাড়িকে দীর্ঘক্ষণ নিরীক্ষণ করেন সিআইডির আধিকারিকরা ৷ গাড়িগুলোর বিভিন্ন দিক থেকে ছবি তোলেন তাঁরা ৷
ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কাঁকসা থানার পুলিশের সঙ্গেও দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা গেল সিআইডি'র আধিকারিকদের । পাশাপাশি তদন্তকারীরা দুর্ঘটনাস্থলেও যাবেন বলে পুলিশ জানা গিয়েছে । যদিও পানাগড়-কাণ্ডের তদন্তভার সিআইডির হাতে দেওয়ার কথা আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে এখনও কিছু বলা হয়নি ।
পানাগড়ের ঘটনার তদন্তভার কি সিআইডির হাতে ? (ইটিভি ভারত) এদিকে পানাগড়ের দুর্ঘটনায় সাদা রংয়ের ক্রেটা গাড়ির মালিকের হদিস পেল কাঁকসা থানার পুলিশ । পানাগড়ের ব্যবসায়ী বাবলু যাদব ওই গাড়ির মালিক বলে জানিয়েছেন কাঁকসার এসিপি সুমন জয়সওয়াল । বাবলু যাদবের বাড়িতে সদলবলে অভিযান চালান তদন্তকারী অফিসাররা । যদিও এখনও পর্যন্ত অধরা বাবলু যাদব ।
কাঁকসার এসিপি সুমন জয়সওয়াল বলেন, "সেই রাতে বাবলু জয়সওয়াল গাড়ি চালাচ্ছিল । তার সঙ্গে আরও কারা কারা ছিল এই খোঁজও আমরা ইতিমধ্যে পেয়েছি । বাবলুর খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে ৷ খুব তাড়াতাড়ি তাকে ধরে ফেলব আমরা ।"
খতিয়ে দেখলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত দুটি গাড়ি (নিজস্ব ছবি) কাঁকসার এসিপি জানান, তিনি দীর্ঘক্ষণ বাবলুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন । এটাও নিশ্চিত করেন তিনি, সেই রাতে বাবলুই গাড়ি চালাচ্ছিল । তাঁর সঙ্গে আরও চারজন ছিলেন ওই গাড়িতে ৷ তাঁরা কারা তা জানতে কাঁকসার এসিপি সুমন জয়সওয়াল মঙ্গলবার বাবলু যাদবের বাড়িতে এবং তাঁর গুদামে অভিযান চালান । জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাবলু যাদবের স্ত্রী-সহ তাঁর পরিবারের লোকেদের ।
গাড়িগুলোর বিভিন্ন দিক থেকে ছবি তোলেন আধিকারিকরা (নিজস্ব ছবি) বাবলু যাদবের কাবাড়িপট্টির কর্মী জিয়া লাল বলেন, "যেদিন এই ঘটনাটি ঘটে সেদিন সন্ধে সাতটার সময় বাবলু যাদব গাড়ি নিয়ে বের হয় । তার সঙ্গে এই কাবাড়িপট্টির 4-5 জন কর্মী গিয়েছিল । তাদের নাম ছোটু, চন্দন, রাজকুমার, গোপী । আমাকে পুলিশ গতকাল রাতে ডেকেছিল । আমি সব কথা পুলিশকে জানিয়েছি । ওই ঘটনার পর থেকে মালিক আর গুদামে আসেনি । আজকেও পুলিশ এসেছিল বাড়িতে এবং গুদামে ।"
পানাগড়ের ব্যবসায়ী বাবলু যাদব (নিজস্ব ছবি) তাহলে কি বাবলু যাদবের সঙ্গে থাকা তাঁর এই কর্মীরাই সেদিন ওই সাদা গাড়িতে ছিল ? যদিও এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি ৷ তবে পুলিশ যাই বলুক না কেন বাবলু যাদবদের শুধুমাত্র গাড়ি নিয়ে রেষারেষির জেরে সুতন্দ্রার গাড়ি উলটে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকলে, তাঁরা গাড়ি ফেলে কেন পালিয়ে গেলেন ? ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাবলু যাদবের বাড়ি । তাঁরা যদি কোনও অপরাধ না করে থাকতেন তাহলে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ কেন করলেন না ? রাতের অন্ধকারে ওই যুবতীকে দেখে কাবাড়িপট্টির কর্মীরা যদি কিছুই না বলে থাকেন তাহলে কেন সংবাদমাধ্যমের সামনে সুতন্দ্রাদের গাড়ির চালক রাজদূত শর্মা 'অশ্লীল ইঙ্গিত' করার মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন ?
ব্যবসায়ী বাবলু যাদবের বাড়িতে পুলিশ (নিজস্ব ছবি) যদিও এই বিষয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলন করে সোমবারই জানান, টিজ করার কোনও কথা লিখিত অভিযোগ আকারে পুলিশকে দেওয়া হয়নি । তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী অরুণ সিং এবং আরও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বাবলু যাদবের পক্ষ নিয়ে বলেন, "পুলিশের কাছে যা দেখলাম এবং আমরাও বাজারে যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি তাতে দেখা যাচ্ছে, বাবলু যাদবের গাড়ির পিছনে ধাওয়া করছিল ওই গাড়িটি । এরপরেই বাবলু যাদব গাড়িটি দাঁড় করিয়ে দেয় । তারপরেই দুর্ঘটনাটি ঘটে । ভয়ে বাবলু যাদব পালিয়ে যায় । বাবলু যাদবের কোনও দোষ আমরা এই ঘটনায় দেখতে পাইনি । বাবলু যাদব এই এলাকার এক নম্বর ব্যবসায়ী । তাঁর সঙ্গে গাড়িতে কারা ছিল আমরা জানি না । আমাদের অনুরোধ যেটা সত্য সেটাই দেখান ।"
প্রসঙ্গত, রবিবার গভীর রাতে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার পানাগড়ের রাইস মিল মোড়ে গাড়ি উলটে মৃত্যু হয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার ম্যানেজার হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের (26) । কিন্তু কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল ৷
সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "নিহত যুবতী যে গাড়িটিতে ছিলেন সেই গাড়িটি এবং সাদা রংয়ের ক্রেটা গাড়িটির মধ্যে রেষারেষি চলছিল । কোনও ইভটিজিংয়ের ঘটনার কথা অভিযোগে উল্লেখ নেই । পুলিশ সমস্ত জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে ৷ তাতে একটি জায়গায় দেখা গিয়েছে, যুবতী যে গাড়িটিতে ছিলেন সেই গাড়িটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে । তারপরেও সাদা রংয়ের ক্রেটা গাড়িটির পিছনে ধাওয়া করে মৃতার গাড়ি ।"
যুবকদের বিরুদ্ধে সুতন্দ্রাকে কটূক্তির অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার । তিনি জানান, এরকম কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে অন্তত জমা পড়েনি । পালটা পুলিশ কমিশনার প্রশ্ন তুলেছেন, সুতন্দ্রা এবং তাঁর সঙ্গীদের গন্তব্য যখন ছিল গয়া, তখন কেন ওই রাস্তায় গলির মধ্যে গাড়ি নিয়ে গেলেন তাঁরা ? কারণ গয়া যেতে হলে তাঁরা দু'নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারতেন ।
সমস্ত বিষয়ে ফরেনসিক তদন্ত হবে বলেও জানিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার । এদিকে মৃতার মা দাবি জানিয়েছেন, পানাগড়ে মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত সত্য উদঘাটিত হোক । দোষীদের কঠোরতম শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন তিনি ।